বন্যার কারণ-বন্যার ক্ষতিকর প্রভাব

প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেলে বন্যার কারণ-বন্যার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব। কারণ বন্যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে এ যাবৎকালে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে।কারণ এর ক্ষয়ক্ষতি ও জনদুর্ভোগ অনেক বেশি হয়ে থাকে।সমগ্র বিশ্বে এটি মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। তাই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার অনুরোধ রইল।

বন্যার কারণ-বন্যার ক্ষতিকর প্রভাব
বন্যার পানি লোকালয়, মাঠ-ঘাট,হাট-বাজার,শহর-গঞ্জ প্রভৃতি স্থানে প্রবেশ করে। সম্পদ হানি, পরিবেশ দূষণ, রোগ-ব্যাধির বিস্তারসহ বন্যা নানাবিধ ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

বন্যার কারণ

বন্যা সমগ্র বিশ্বে প্রতি বছর আঘাত হানে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে বন্যা বিভিন্ন মহলের আলোচনা ও গবেষণার বিষয় বস্তুতে পরিণত হয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কে বর্তমানে বন্যার প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়। মূলত বিভিন্ন বিষয় বন্যার জন্য দায়ী। প্রাকৃতিক কারণ ছাড়াও মানুষের সৃষ্ট বিভিন্ন কারণে বন্যা সংঘটিত হয়। বন্যার কারণ সমূহকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়।

১) প্রাকৃতিক কারণ

২) মনুষ্য সৃষ্ট কারণ

১) প্রাকৃতিক কারণ

বন্যা মূলত প্রাকৃতিক কারণে সংঘটিত হয়। যেসব প্রাকৃতিক কারণে বন্যা সংঘটিত হয় সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো।

ক) বৈশ্বিক উষ্ণায়ন

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি বিশ্বব্যাপী বন্যার অন্যতম প্রধান কারণ। বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ অত্যান্ত দ্রুত গতিতে গলতে শুরু করেছে। মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়ায় সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ ড. মার্ক সেরেজ বলেছেন, উত্তর মেরুর সাগরে এবছর (২০০৬) সেপ্টেম্বর মাসে বরফের পরিমাণ ছিল ৫.৯ মিলিয়ন বর্গ কি.মি।


সেখানে প্রতি ১০ বছর ৮.৫৯ শতাংশ বরফ গলে যাচ্ছে। প্রতিবছর কমছে প্রায় ৬০ হাজার ৪২১ বর্গ কিলোমিটার বরফ। এ হারে চলতে থাকলে উত্তর মেরুতে ২০৬০ সালের পর কোন বরফই অবশিষ্ট থাকবে না। বিশ্বে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ বরফ গলনের ফলে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে প্রতিবছর বন্যা অবশ্যম্ভাবীভাবে দেখা দিচ্ছে।

খ) ভৌগলিক অবস্থান

পৃথিবীর সর্বত্র বন্যা সংঘটনের ঘটনা সমান নয়। ভৌগোলিক অবস্থান ভেদে পৃথিবীতে বন্যার মাত্রায় তারতম্য পরিলক্ষিত হয়।সাধারণত উচ্চ ভূমির তুলনায় নিম্নভূমি এলাকায় বন্যা সংঘটনের ঘটনা বেশি হয়ে থাকে। আবার নদীমাতৃক এবং সমুদ্র তীরবর্তী দেশে বন্যা সংঘটনের ঘটনা বেশি। এছাড়াও দেখা যায় যে পাহাড় পর্বতময় এলাকার তুলনায় সমুদ্র সমতলের কাছাকাছি অবস্থিত এলাকা সহজেই বন্যায় প্লাবিত হয়।

গ) ভূমিকম্প

বন্যার একটি অন্যতম প্রধান কারণ হলো ভূমিকম্প। ভূমিকম্পের ফলে মৃত্তিকার অভ্যন্তরে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এ আলোড়নের ফলে নদী বা সমুদ্রের উপরিভাগে বড় বড় ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। এ ঢেউ নদী বা সমুদ্রের তীরবর্তী এলাকায় আঘাত হানার মধ্য দিয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়। ২০০৪ সালে ইন্দোনেশিয়ায় সাগরের অভ্যন্তরে সৃষ্ট ভূমিকম্পের ফলে যে সুনামি সৃষ্টি হয় তার ফলে ভারত মহাসাগরের তীরবর্তী বহুদেশে বন্যার সৃষ্টি হয়।

ঘ) নিম্নচাপ

সমুদ্রে নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ার ফলে কয়েকদিন ধরে একটানা বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয়। এ ধরনের বৃষ্টিপাতের ফলে বন্যার সৃষ্টি হয়। সাধারণত বর্ষা মৌসুমে নিম্ন চাপের ঘটনা ঘটে।সাধারণত সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় এ ধরনের বন্যা সংঘটিত হয়।

ঙ) নদীর পলি

বছরের পর বছর নদীতে পানি প্রবাহের মধ্য দিয়ে পলি জমা হয়।ধীরে ধীরে পলি জমা হয়ে নদীর তল দেশ ভরাট করে তোলে। নদীতে পলি জমার কারণে নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পায়।নদী স্বাভাবিক মাত্রার পানি ধারণ ক্ষমতাও একসময় হারিয়ে ফেলে। নদীতে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে সামান্য বেশি পানি প্রবাহিত হলেই বন্যার সৃষ্টি হয়।

চ) নদী প্রবাহের প্রকৃতি

নদীর গতি সরল রেখায় প্রবাহিত হলে পানি কোথাও বাধা পায় না। ফলে নদীতে পানি প্রবাহ সহজ হয়। অন্যদিকে নদীর গতিপথ আঁকাবাঁকা হলে নদীতে পানি প্রবাহ বাধার সম্মুখীন হয়। নদীর পানি প্রবাহে বাধার সৃষ্টি হলে বন্যার সৃষ্টি হয়।

ছ) অতিবৃষ্টি

অতিবৃষ্টি বন্যার অন্যতম কারণ।বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে নদী-নালা, খাল-বিল সর্বত্র পানিতে ভরে যায়। অতিবৃষ্টির ফলে নদীতে অধিক মাত্রায় পানি প্রবাহের সৃষ্টি হয়। ফলে এক এলাকার বন্যার পানি নদীর মাধ্যমে অন্য এলাকায় প্রবাহিত হয় এবং বন্যার সৃষ্টি করে।

জ) নিম্নভূমি

নিম্নভূমিতে সহজেই বন্যার সৃষ্টি হয়। বৃষ্টি বা নদীর পানি প্রথমে নিম্নভূমিতে প্রবেশ করে। বিশ্বে নিম্নভূমি এলাকায় বন্যা সংঘটনের হার বেশি। নিম্নভূমি এলাকায় বন্যার পানি দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করতে পারে।

ঝ) জলবায়ু পরিবর্তন

বিশ্বব্যাপী জলবায়ুতে পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।এর ফলে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি পেয়ে চলছে।এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বন্যা সংঘটিত হয়।

২) মনুষ্য সৃষ্ট কারণ

দীর্ঘদিন ধরে মানুষ তার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে প্রকৃতির উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে চলেছে।এর ফলে প্রকৃতি কখন যে প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে উঠেছে।যার ফলশ্রুতিতে সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বন্যা এমন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যার জন্য মানুষের বিভিন্ন কর্মকান্ড দায়ী থাকে। বন্যার মনুষ্য সৃষ্ট কারণসমূহ নিম্ন আলোচনা করা হলো:

ক) বন ধ্বংসকরণ

বন্যার মনুষ্য সৃষ্ট কারণ সমূহের অন্যতম হলো বন ধ্বংস করণ। বিশ্বের ক্রান্তীয় অঞ্চলের বনভূমিকে নির্বিচারে ধ্বংস করা হচ্ছে। বেশিরভাগ উন্নয়নশীল দেশ ক্রান্তীয় অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় বন ধ্বংসের হারও অনেক বেশি। বনভূমি ধ্বংসের ফলে সহজেই বন্যার সৃষ্টি হয়। কারণ বনভূমির উপস্থিতি মাটির পানি শোষণ ক্ষমতা বেশি থাকে। বনভূমি ধ্বংস করা হলে মাটির পানি শোষণ ক্ষমতা কমে যায়।

খ) নদী খননের অপ্রতুলতা

বন্যার কারণ হিসেবে বিবেচিত করা হয় নদী খননের অপ্রতুলতা। নদীতে পানি প্রবাহের ফলে যে পলি জমা হয় তার ফলে নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যায়।নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা স্বাভাবিক রাখার জন্য নদী খননের প্রয়োজন হয়। নদী খনন নিয়মিত না করা হলে পানি প্রবাহের বাধার সৃষ্টি হয় এবং বন্যা সংঘটিত হয়।

গ) খাল খননের অপ্রতুলতা

নদীর অতিরিক্ত পানি সংরক্ষণের জন্য খাল খনন করা হয়। বর্ষা মৌসুমে যে বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয় তার ফলে নদী পানিতে ভরে যায়। নদীর অতিরিক্ত পানি ধারণ ক্ষেত্রে খাল কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। পর্যাপ্ত খাল খনন করা না হলে নদীর অতিরিক্ত পানি থেকে বন্যার সৃষ্টি হতে পারে।

ঘ) অপরিকল্পিত রাস্তা-ঘাট

বন্যার কারণ হিসেবে ধরা যায় অপরিকল্পিত রাস্তা-ঘাট নির্মাণ করা।সঠিক পরিকল্পনা ছাড়াই রাস্তাঘাট নির্মাণের ফলে পানি নিষ্কাশন সমস্যার সৃষ্টি হয়। সাধারণত মাঠ-ঘাট, বসত-বাড়ি এলাকার বৃষ্টির পানি নদীতে পতিত হয়। পানি প্রবাহের পথে অপরিকল্পিত রাস্তা-ঘাট বাধার সৃষ্টি করে। ফলশ্রুতিতে বন্যা সংঘটিত হয়।

ঙ) নদী ভরাট

মানুষ বসবাস, কৃষি, ব্যবসা,বাণিজ্যসহ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে নদী ভরাট করে ফেলে।এক সময়ে প্রবাহমান নদী ভরাট করে ঘর-বাড়ি, কৃষি জমি, বাজার-ঘাট প্রভৃতি গড়ে তোলা হয়। আর মানুষের এ ধরণের কর্মকাণ্ডের ফলে বন্যার সৃষ্টি হয়।নদী ভরাট মানুষের চরম আগ্রাসী মনোভাবের পরিচয়।সাধারণত অবৈধভাবে নদী ভরাট করা হয়।

চ) চাষের জমি হ্রাস

বিশ্বব্যাপী অতি দ্রুত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে কৃষি জমির উপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। বর্ধিত জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে কৃষি জমির উপর ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার প্রভৃতি গড়ে তোলা হচ্ছে। কৃষি জমিতে বৃষ্টির পানি পতিত হলে সহজেই ভূ-গর্ভে নিষ্কাশিত হতে পারে।
আরো পড়ুন:বাংলাদেশে বন্যার ইতিহাস বিস্তারিতভাবে বর্ণনা কর

কিন্তু দেখা যায় কৃষি জমিতে ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট প্রভৃতি নির্মাণের ফলে পানির প্রাকৃতিক নিষ্কাশন ক্ষমতা বাধাগ্রস্ত হয়।যার ফলশ্রুতিতে বন্যার সৃষ্টি হয়।বিশ্বের বিভিন্ন শহরাঞ্চলে সামান্য বৃষ্টিতেই বন্যার সৃষ্টি হয়। পানির প্রাকৃতিক নিষ্কাশন ক্ষমতা শহরে নেই বললেই চলে।

ছ) নদী শাসন

নদী শাসন বন্যার কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। কারণ মানুষ বাঁধ নির্মাণ,গতিপথের পরিবর্তন,জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন প্রভৃতি কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে নদী শাসন করে চলেছে।যার ফলে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধার সম্মুখীন হয়। যার ফলশ্রুতিতে বন্যার সৃষ্টি হয়।

বন্যার ক্ষতিকর প্রভাব

বন্যার পানি লোকালয়, মাঠ-ঘাট, হাট-বাজার, শহর-গঞ্জ প্রভৃতি স্থানে প্রবেশ করে ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে। সম্পদ হানি, পরিবেশ দূষণ, রোগ-ব্যাধির বিস্তারসহ বন্যা নানাবিধ প্রভাব ফেলে।বন্যার ক্ষতিকর প্রভাবসমূহ নিম্ন রূপ:

১) সম্পদ হানি

বন্যার পানি লোকালয়, মাঠ-ঘাট, শহর-গঞ্জ প্রভৃতি স্থানে প্রবেশ করে সম্পদ হানি ঘটায়। বন্যার তান্ডব লীলায় ভেসে যায় মাঠ-ঘাট, ঘড়-বাড়ি, গবাদি পশু, কোটি কোটি টাকার সম্পদ এতে বিনষ্ট হয়ে যায়।এছাড়া১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সংঘটিত বন্যায় ১ কোটি ৭০ লক্ষ মার্কিন ডলারের সম্পদ হানি ঘটে।

২) উৎপাদন হ্রাস

বন্যা সামগ্রিক উৎপাদন ব্যবস্থায় ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে। বন্যার পানি হাজার হাজার হেক্টর ভূমির ফসল বিনষ্ট করে দেয়।এছাড়াও এ বন্যার পানি কলকারখানা, হাট-বাজার প্রভৃতি স্থানে প্রবেশের ফলে শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হয়। মানুষ ক্ষুদ্র পরিসরে যেসব উৎপাদন কর্মকান্ড পরিচালনা করে সেগুলোও এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

৩) দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি

বন্যার ক্ষতিকর প্রভাব দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির উপর ব্যাপক প্রভাব পড়ে। বন্যা ও বন্যা পরবর্তী সময়ে দ্রব্য মূল্যের ব্যাপক উর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা যায়।বন্যার পানিতে শাক-সবজি,চাল, ডাল প্রভৃতির ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির উৎপাদন কমে যাওয়ায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়।

৪) উদ্বাস্তু সৃষ্টি

বন্যার পানিতে হাজার হাজার ঘরবাড়ি ভেসে যায়। এছাড়াও বন্যার সময় মারাত্মকভাবে নদী ভাঙনের সৃষ্টি হয়। নদীর গর্ভে হাজার হাজার হেক্টর কৃষি জমি বিলীন হয়ে যায়। মানুষ ঘর-বাড়ি,জমি-জমা হারিয়ে উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়।বিশ্বে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মানুষ বন্যার কারণে উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছে।

৫) দরিদ্রতা বৃদ্ধি

বন্যার প্রভাব দরিদ্রতা বৃদ্ধির জন্য অনেকাংশে দায়ী। বন্যা ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতিসাধন করে। এছাড়াও বন্যার কারণে ফসল,ঘর-বাড়ি,গবাদিপশু প্রভৃতি হারিয়ে মানুষ দরিদ্র জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়। দরিদ্র জনগোষ্ঠী বন্যা পরবর্তী সময়ে নিজেদের পেশা ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারে না।

৬)অপরাধ বৃদ্ধি

বন্যার ফলে সম্পদের ক্ষতি,দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি,অভাব অনটন প্রভৃতির সৃষ্টি হয়। সাধারণ মানুষ নিজেদের পেশায় অনেক সময় ফিরে যেতে পারে না, যার ফলে নানাবিধ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে দেখা যায় যে, পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে গিয়ে তারা বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত হয়ে পড়ে। সমাজে মাদক, চোরাচালান, ছিনতাই, সন্ত্রাসসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ বৃদ্ধি পায়।

৭) শহরে জনচাপ বৃদ্ধি

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জনগণ জীবন ও জীবিকার সন্ধানে শহরমুখী হয়ে পড়ে। বেঁচে থাকার তাগিদে মানুষ শহরে এসে ভিড় জমায়। ফলে শহরে জনচাপ বৃদ্ধি পায়।এর ফলে দেখা যায় শহরে বিভিন্ন অসামাজিক ও অপরাধমূলক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পায়।

৮) রোগ-ব্যাধির বিস্তার

বন্যার ক্ষতিকর প্রভাব দ্রুত রোগ-ব্যাধির বিস্তার ঘটায়।বন্যার পানিতে বিভিন্ন দ্রব্য সামগ্রী যেমন-গাছের ডাল, পাতা, লতা, খাদ্যদ্রব্য, মৃতদেহ, আবর্জনা প্রভৃতি পচে চারপাশের পরিবেশ দূষণ ঘটায়।এছাড়াও বন্যার সময় মানুষের ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। মানুষ যত্রতত্র বসবাসের ফলে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। বন্যার সময় চোখ উঠা, ডায়রিয়া, কলেরা, নিউমোনিয়া প্রভৃতি রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে।

৯) আমদানি রপ্তানি ভারসাম্যহীনতা

বন্যার ফলে একটি দেশে কৃষি ও শিল্পসহ প্রায় সব ধরনের উৎপাদন ব্যাহত হয়।হাজার হাজার একর ফসল বিনষ্টের ফলে তীব্র খাদ্য সংকট সৃষ্টি হয়।খাদ্য চাহিদাসহ অন্যান্য চাহিদা মিটাতে একটি দেশকে অধিক খাদ্যদ্রব্য আমদানি করতে হয়। অপরদিকে, দেশীয় উৎপাদন হ্রাস পাওয়ায় রপ্তানি কমে যায়।ফলে আমদানি রপ্তানি ক্ষেত্রে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হয়।

১০) পারিবারিক ভাঙ্গন

বন্যার প্রভাব পারিবারিক ভাঙ্গন সৃষ্টি করে।বন্যার ফলে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।এছাড়াও মানুষের চরম আর্থিক ক্ষতিসাধিত হয়। পরিবারের আপনজন রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়। অনেক মহিলা তাদের স্বামীকে হারিয়ে বিধবা হয়ে পড়ে।আবার পিতা-মাতাকে হারিয়ে অনেকে অসহায় হয়ে পড়ে।

১১) যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন

বন্যার ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বন্যার পানিতে রাস্তা-ঘাট প্লাবিত হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ফলে মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগের সম্মুখীন হয়।

শেষ কথা

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের আলোচনায় সর্বপ্রথম বন্যার কথা চলে আসছে। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বছরের বিভিন্ন সময়ে বন্যার সৃষ্টি হয়। সাধারণত অধিকাংশ দেশগুলোতে দেখা যায় বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে নদীসমূহ ফুলের ফেপেঁ উঠে এবং বন্যার সৃষ্টি হয়।আজকের আর্টিকেলে বন্যার কারণ-বন্যার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।আশা করি আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url