খরার কারণ কি-খরা হয় কেন
প্রিয় পাঠক আজকে আর্টিকেলে খরার কারণ কি-খরা হয় কেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করব। কারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ সমূহের মধ্যে খরা অন্যতম।কৃষি ভূমিতে পানি সরবরাহের অপ্রতুলতা থেকে খরার সৃষ্টি হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে খরা বিশ্বের সর্বত্র আঘাত হানে।
সাধনভাবে বৃষ্টিপাতের অপ্রতুলতা থেকে খরার সৃষ্টি হয়। বিশ্বের স্বল্প বৃষ্টিপাত সংঘটিত এলাকায় খরার প্রবণতা সবসময় বেশি থাকে।বৃষ্টিপাতের স্বল্পতা ছাড়াও নানাবিধ কারণে খরা সংঘটিত হয় এবং আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ে।
খরার কারণ/খরা হয় কেন
বিশ্বে প্রতিবছর খরা সৃষ্টির ফলে লক্ষ লক্ষ হেক্টর ভূমির ফসল বিনিষ্ট হয়ে যাচ্ছে।দীর্ঘস্থায়ী খরা জলবায়ুতে আনয়ন করেছে পরিবর্তন।যার প্রভাব মানুষের জীবনে স্পষ্টভাবে দেখা দিচ্ছে।সমাজবিজ্ঞানী,পরিবেশ বিজ্ঞানী ও অর্থনীতিবিদদের নিকট খরা গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে।খরার জন্য সাধারণত স্বল্প বৃষ্টিপাত বা বৃষ্টিহীনতাকে দায়ী করা হয়। মূলত বিভিন্ন কারণে খরা সংঘটিত হয়।এগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো:
আরো পড়ুন:খরার প্রভাব-খরার ক্ষতিকর প্রভাব
১) পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাব
খরার মূল কারণ হিসেবে সর্বদা পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাবকে দায়ী করা হয়। কোন স্থানে দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টিপাত সংঘটিত না হলে ভূমিতে পানি স্বল্পতার সৃষ্টি হয়। এভাবে চলতে থাকলে এক পর্যায়ে ভূমিতে পানির পরিমাণ একেবারে কমে যায়। ভূগর্ভের পানিও এক পর্যায়ে শুকিয়ে যাওয়া শুরু করে। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাব থেকে এভাবে খরা সৃষ্টি হয়।
২) জলবায়ু পরিবর্তন
জলবায়ু পরিবর্তন খরার কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। বিশ্বের জলবায়ুতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশ্বের জলবায়ুগত পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি, এসিড বৃষ্টি, অনাবৃষ্টিসহ বিভিন্ন বিষয় সংঘটিত হচ্ছে। এসব খরা সংঘটনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে।
৩) প্রযুক্তির স্বল্পতা
প্রযুক্তির বদৌলতে মানুষ অনেক কিছু জয় করতে সক্ষম হয়েছে। উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে পানি ধারণ ও সেচের ব্যবস্থা থেকে ফসল উৎপাদন সম্ভব।কিন্তু উন্নত প্রযুক্তির স্বল্পতা থেকে এগুলো সম্পন্ন করা সম্ভব হয় না। যার ফলে খরা দেখা যায়।
৪) অতিরিক্ত পশুচারণ
অতিরিক্ত পশুচারণের ফলে ভূমিতে লতা, গুল্ম ও ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ জন্মাতে পারে না। এসব উদ্ভিদ মাটির পানি ধরে রাখে। অতিরিক্ত পশুচরণের ফলে ছোট ছোট উদ্ভিদের বংশ বৃদ্ধি কমে যায় এবং একই সাথে মাটির পানি ধারণ ক্ষমতাও কমে যায়। ফলশ্রুতিতে খরার সৃষ্টি হয়।
৫) বাঁধ নির্মাণ
বর্তমানে বাঁধ নির্মাণ উল্লেখযোগ্যভাবে খরার কারণ হিসেবে পরিগণিত হয়।নদীতে বাঁধ নির্মাণের ফলে নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহের বিঘ্ন ঘটে।বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে নদীর পানি আটকে রাখার ফলে স্বাভাবিকভাবেই খরার সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের অদূরে ভারত কর্তৃক গঙ্গা নদীতে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের ফলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাসমূহে খরার সৃষ্টি হয়।
৬) জমিতে জৈব সার ব্যবহারের অভাব
খরা হয় কেন এর অন্যতম প্রধান কারণ জমিতে জৈব সার ব্যবহারের অভাব। জমিতে জৈব সার ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। উর্বর মাটিতে ফসল উৎপাদন বেশি হয়। কিন্তু জমিতে জৈব সার ব্যবহারের অভাব সৃষ্টি হলে মাটির উর্বরতা ও ফসল উৎপাদন উভয়ই কমে যায়, যা থেকে খরার সৃষ্টি হয়।
৭) অতিরিক্ত পানি উত্তোলন
ভূগর্ভ থেকে অতিরিক্ত পানি উত্তোলনের ফলে পানির স্তর নিচে নেমে যায়, যা খরার কারণ হিসেবে বিবেচিত। পানির স্তর নিচে নেমে গেলে উদ্ভিদের ভূগর্ভস্থ পানি গ্রহণের হার হ্রাস পায়, ফলে প্রস্বেদনের হার ও হ্রাস পায়, যা স্বল্প বৃষ্টিপাতের জন্য দায়ী।এভাবে ভূগর্ভের অতিরিক্ত পানি উত্তোলনের ফলে প্রস্বেদন কম হয়, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যায় এবং ফলশ্রুতিতে খরার সৃষ্টি হয়।
৮) বন ধ্বংসকরণ
খরা হয় কেন,যার অন্যতম প্রধান কারণ বন ধ্বংসকরণ। বন ধ্বংসকরনণের ফলে গাছপালার পরিমাণ কমে যায়। গাছপালা কমে যাওয়ার কারণে প্রস্বেদনের হার কমে যায় এবং স্বল্প বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয়। স্বল্প বৃষ্টিপাত থেকে খরার সৃষ্টি হয়।
৯) ভূমিক্ষয়
ভূমিক্ষয়ের ফলে বনভূমি ধ্বংস হয়ে যায় এবং মাটির উর্বরা শক্তি কমে যায়। মাটির উর্বরতা কমে গেলে ফসল উৎপাদন কমে যায় এবং বনভূমি ধ্বংসের ফলে উদ্ভিদের প্রস্বেদনের হার কমে যায়। যার ফলশ্রুতিতে খরার সৃষ্টি হয়।
১০) বায়ু ও পানি দূষণ
বায়ু ও পানি দূষণের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হয়ে যায়। পরিবেশের ভারসাম্যের অভাব থেকে খরার সৃষ্টি হয়।
১১) ওজোন স্তর ক্ষয়
বায়ুমন্ডলে ওজোন গ্যাস দ্বারা সৃষ্ট পুরু আবরণকে ওজোন স্তর বলা হয়।ওজোন স্তর সূর্যের অতি বেগুনি রশ্নির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পৃথিবীর জীব প্রজাতির অস্তিত্ব রক্ষাসহ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন কারণে জীব প্রজাতির জন্য আবশ্যকীয় এ প্রাকৃতিক উপাদান ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
ওজোন স্তরের ক্ষয়ের কারণে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি পৃথিবী পৃষ্ঠে চলে আসে এবং মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী এবং উদ্ভিদের ক্ষতি সাধন করে। এই ওজন স্তরের ক্ষয়ের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। যার ফলে খরার সৃষ্টি হচ্ছে।
শেষ কথা
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে,খরার জন্য সাধারণত স্বল্প বৃষ্টিপাত বা বৃষ্টিহীনতাকে দায়ী করা হয়। মূলত বিভিন্ন কারণে খরা সংঘটিত হয়।খরা মানুষের জীবনে চরম বিপর্যয় সৃষ্টি করে।খরার প্রতিক্রিয়া বহুমুখী।খাদ্য সংকট থেকে শুরু করে সামাজিক পরিবেশকে করে তোলে বিপর্যস্ত।আজকের আর্টিকেলে খরার কারণ কি-খরা হয় কেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন।