খরা কি-খরার প্রকারভেদ

প্রিয় পাঠক আপনারা কি জানেন খরা কি-খরার প্রকারভেদ সম্পর্কে। আর যদি না জেনে থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কারণ আজকের আর্টিকেলে খরা কি-খরার প্রকারভেদ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইল।

খরা কি-খরার প্রকারভেদ
খরা মানুষের জীবনে চরম বিপর্যয় বয়ে আনে। বৃষ্টি হীনতাকে খরার মূল কারণ হিসেবে সাধারণভাবে বিবেচনা করা হয়।এছাড়াও দেখা যায় যে,বৃষ্টিহীনতা ছাড়াও অতিরিক্ত তাপমাত্রা, অতিমাত্রায় বায়ুপ্রবাহ, বাতাসের স্বল্প আর্দ্রতা প্রভৃতি খরার জন্য দায়ী।

ভূমিকা

প্রাকৃতিক দুর্যোগ সমূহের মধ্যে খরা অন্যতম। কৃষি ভূমিতে পানি সরবরাহের অপ্রতুলতা থেকে খরার সৃষ্টি হয়।প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে খরা বিশ্বের সর্বত্র আঘাত হানে। খরার ফলশ্রুতিতে ফসল উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি খরা সমগ্র সমাজব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করে তোলে। এছাড়া আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে খরার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। আফ্রিকার অপুষ্টি, দারিদ্র্য, রোগ ব্যাধি, দ্বন্দ্ব সংঘাত প্রভৃতি সৃষ্টিতে রয়েছে এর বিশেষ ভূমিকা। সমগ্র বিশ্বের অনেকটা নীরবে খরা নামক প্রাকৃতিক দুর্যোগটি আঘাত হেনে চলেছে।

খরা কি?

খরা বলতে সাধারণভাবে বুঝায় দীর্ঘ সময় ধরে (যা কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত হতে পারে) ভূমিতে পর্যাপ্ত পানির অনুপস্থিতি।খরা নামক প্রাকৃতিক দুর্যোগটি কৃষি উৎপাদনের সাথে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। কৃষি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হয়। কৃষি ভূমিতে দীর্ঘ সময় ধরে পানি সরবরাহের অপ্রতুলতা সৃষ্টি হলে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং নতুন ফসল উৎপাদনও বাধাগ্রস্ত হয়। এরূপ পরিস্থিতিকে বলা হয় খরা।


সাধারণভাবে বৃষ্টিপাতের অপ্রতুলতা থেকে খরার সৃষ্টি হয়। বিশ্বে স্বল্প বৃষ্টিপাত সংঘটিত এলাকায় খরার প্রবণতা সব সময় বেশি থাকে।বৃষ্টিপাতের স্বল্পতা ছাড়াও নানাবিধ কারণে খরা সংঘটিত হয় এবং আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ে।

খরা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে Changron বলেন,'(1987) Drought is a complex and social phenomenon of widespread significance and despite all the problems droughts have caused,drought has been difficult to define.There is no universally accepted difinition because:

drought,unlike flood,is not a distinct event and drought is often the result of many complex factors acting on and interacting within the environment.Complicating the problem of drought is the fact that drought often has neither a distinct start rorend.It is usually recognizable only after a period of time and because a drought may be interrupted by short spells of one or more wet months,its termination is difficult to recognize.(ww.sws.wuc.edu)

খরার সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা প্রদান না করা গেলেও এটি যে মানুষের জীবনে চরম বিপর্যয় বয়ে আনে এ বিষয়ে কারো দ্বিমত নেই।বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে খরাকে বিভিন্নভাবে চিহ্নিত করা হয়। লিবিয়ায় বার্ষিক ১৮০ মিলিমিটারের কম বৃষ্টিপাত সংঘটিত হলে তাকে খরা বলা হয়। আবার ইন্দোনেশিয়ার একটানা ৬ দিনের বেশি সময় ধরে বৃষ্টিপাত সংঘটিত না হলে তাকে খরা বলা হয়। মূলত বিশ্বের সর্বোচ্চ জলবায়ু এক রকম নয়। তাই একেক দেশে খরাকে একেক ভাবে চিহ্নিত করা হয়। বৃষ্টি হীনতাকে খরার মূল কারণ হিসেবে সাধারন ভাবে বিবেচনা করা হয়। বৃষ্টিহীনতা ছাড়াও অতিরিক্ত তাপমাত্রা,অতিমাত্রায় বায়ুপ্রবাহ,বাতাসের স্বল্প আর্দ্রতা প্রভৃতি খরার জন্য দায়ী।

খরার প্রকারভেদ

খরাকে বিভিন্ন মানদণ্ডের ভিত্তিতে আলোচনা করা যায়। পানির প্রাপ্যতা ও জলবায়ুগত বিবেচনায় খরাকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

১) জলবায়ুগত খরা

২) জলমণ্ডলীয় খরা

৩) কৃষিজ খরা

১) জলবায়ুগত খরা

জলবায়ুগত খরা বৃষ্টিপাতের সাথে সম্পর্কিত। কোন নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট সময়ে স্বল্প বৃষ্টিপাতের ফলে যে খরার সৃষ্টি হয় তাকে জলবায়ুগত খরা বলে। সাধারণভাবে খরা বলতে জলবায়ুগত খরাকে বোঝায়। বিগত তিন দশক ধরে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে স্বল্প বৃষ্টিপাত সংঘটনের ফলে খরা দেখা দিয়েছে। ১৯৯৫ সালে সমগ্র বিশ্বে স্বল্প বৃষ্টিপাতের ফলে ৬০ লক্ষ মানুষ খরার মুখোমুখি হয়েছে, যারা কখনো খরার সাথে পরিচিত নয়। সমগ্র বিশ্বে জলবায়ু গত কারণে সবচেয়ে বেশি খরা সংঘটিত হয়। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা সমূহে সৃষ্ট খরার জন্য জলবায়ু প্রধানত দায়ী।

২) জলমণ্ডলীয় খরা

নদী, খাল, হ্রদ জলধারা প্রভৃতির পানির লেভেল হ্রাস পেয়ে সৃষ্ট খরাকে বলা হয় জলমণ্ডলীয় খরা। নদী,খাল, হ্রদসহ সকল ধরনের জলাধারের পানি শুকিয়ে গেলে খরার সৃষ্টি হয় এবং খরার প্রকোপ বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

৩) কৃষিজ খরা

ঋতুভেদে শস্য জন্মানোর জন্য মাটিতে প্রয়োজনীয় আর্দ্রতার অভাব, অপর্যাপ্ত বৃষ্টির জন্য ঘটে থাকে। এ সময়ে একদিকে মাটির আদ্রতা কমে, অন্যদিকে গাছের মূলে সহজে পানি ঢুকতে পারেনা এবং প্রস্বেদনের মাধ্যমে পানি ত্যাগের পরিমাণ গ্রহণ অপেক্ষা বেশি হয়। ফলে উদ্ভিদ ধীরে ধীরে নির্জীব হয়ে পড়ে। ভূগর্ভস্থ পানি নেমে যাওয়ার ফলে অগভীর নলকূপে পানি উঠেনা। প্রচন্ড খরায় জমি শক্ত হয়ে যায়।


চারা গাছ লাল রং ধারণ করে। কোথাও হলুদ বর্ণ ধারণ করে মরে যায়, কোথাও শুকিয়ে বিবর্ণ হয়ে যায়। কখনো কখনো ধানের ছড়া সম্পূর্ণ বের হয় না।ধানের দানা পুষ্ট না হয়ে চিটা হয়ে যায়। আবার কখনো ক্ষেতের ধান বৃত্তাকারে পুড়ে যায়, দেখে মনে হয় বজ্রপাতে পুড়ে গেছে। জমিতে পোকার উপদ্রব বেশি হয়ে থাকে।পুকুর শুকিয়ে মাছের চাষ ব্যাহত হয়। ঝরে যায় গ্রীষ্মের রসালো ফল, ব্যাহত হয় উৎপাদন।

ফসলের ক্ষতির মাত্রার ভিত্তিতে খরাকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

১) তীব্র খরা: কোন অঞ্চলে সৃষ্ট খরায় ফসলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ হলে তাকে তীব্র খরা বলে। তীব্র খরায় কখনো কখনো ফসল পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়।

২) মাঝারি খরা: খরায় সৃষ্ট ফসলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৪০ থেকে ৭০ শতাংশ হলে তাকে মাঝারি খরা বলা হয়।

৩) সাধারণ খরা:খরার সৃষ্ট ফসলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১৫ থেকে ৪০ শতাংশ হলে তাকে সাধারণ খরা বলা হয়।

মৌসুম ভেদে খরাকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

১) রবি খরা

২) খরিপ খরা

৩)প্রাক-খরিপ খরা

শেষ কথা

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে,খরা বলতে সাধারণ ভাবে বোঝায় দীর্ঘ সময় ধরে ভূমিতে পর্যাপ্ত পানির অনুপস্থিতি।খরা নীরবে আঘাত হানে।প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে খরার প্রভাব সুদূরপ্রসারী।আজকের আর্টিকেলে খরা কি-খরার প্রকারভেদ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url