আর্সেনিক কি-আর্সেনিক দূষণ কি

প্রিয় পাঠক আপনারা কি জানেন আর্সেনিক কি। আর যদি না জেনে থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কারণ আজকের আর্টিকেলে আর্সেনিক কি-আর্সেনিক দূষণ কি এবং আর্সেনিকের উৎস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন।

আর্সেনিক কি-আর্সেনিক দূষণ কি
আর্সেনিক প্রকৃতিতে পাওয়া যায়। মূলত এটি অত্যন্ত বিষাক্ত পদার্থ। এটি কঠিন, তরল ও বায়বীয় সকল মাধ্যমে যৌগ হিসেবে অবস্থান করে।

ভূমিকা

বর্তমান বিশ্বে আর্সেনিক একটি দুর্যোগ হিসেবে দেখা দিয়েছে। অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে এর মূল পার্থক্য হল এটি মানুষের শরীরে প্রবেশের মধ্যে দিয়ে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি সৃষ্টিসহ মানুষের মৃত্যু ঘটায়। অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রকৃতিতে ধ্বংসলীলা চালায়। মানুষ প্রকৃতিতে ধ্বংসলীলার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর্সেনিক বিশেষ হিসেবে মানুষের জীবনকে সরাসরি বিপর্যস্ত করে ফেলে। তাই অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের তুলনায় এর ভয়াবহতা অত্যন্ত বেশি সুদূরপ্রসারী হয়ে থাকে। এছাড়াও বাংলাদেশ, ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক দেশে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় আর্সেনিকের উপস্থিতি ধরা পড়েছে। মানুষের স্বাভাবিক ও সুন্দর জীবন প্রবাহ এর ফলে বাধাগ্রস্থ হয়ে উঠেছে।

আর্সেনিক কি

বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে আর্সেনিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টি করেছে। এ দুর্যোগের ফলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত সংঘটিত হচ্ছে। সাধারণ মানুষ আর্সেনিককে বিষ হিসেবে জানে। মানুষের শরীরে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি আর্সেনিক থাকলে মানুষের নানা ধরনের রোগ ব্যাধির সৃষ্টি হয়।এর ফলে মানুষ মৃত্যু পর্যন্ত বরণ করে।


তাই আর্সেনিক বলতে সাধারণভাবে বোঝায় এটি একটি বিষ।আর্সেনিক প্রকৃতিতে পাওয়া যায়।মূলত এটি অত্যন্ত বিষাক্ত পদার্থ। এটি কঠিন, তরল ও বায়বীয় সকল মাধ্যমে যৌগ হিসেবে অবস্থান করে।এর কোন স্বাদ নেই। এটি কখনো কখনো লালচে হলুদ ও ধূসর বর্ণের হয়ে থাকে। এটি পানিতে সহজে দ্রবণীয়। আর্সেনিকের তিনটি রূপ রয়েছে। যথা-

১) গামা (Gamma)

২) বিটা (Beta)

৩) আলফা (Alpha)

আর্সেনিক বিভিন্ন ধরনের অক্সাইড সালফাইড এবং আর্সেনাইড হিসেবে অবস্থান করে। যেমন:

1)Orpiment,As 2S2

2)A Tin White Cobalt,COAs2

3)Arsenolite,As 406

4)Nickel Glance,N1 AsS

5)Realgar,As4s2

6)Colaltite or Cobalt Galance,CoAsS

7)Mispickel or Arsenical Pyrite,FcAsS

8)Arsenical Iron,As Fe and As4Fe3

9)Kupfernickel,NiAs

আর্সেনিক দূষণ কি

সাম্প্রতিক কালে আর্সেনিক দূষণ বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশের পরিবেশ বিজ্ঞানী, সমাজ বিজ্ঞানী, চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের ৬৪ টি জেলার মধ্যে ৬১টিতে আর্সেনিক দূষণের সৃষ্টি হয়েছে।আর্সেনিকের উপস্থিতিতে জীবদেহে বিশেষত মানুষের দেহে ক্ষতিকর প্রভাব পরিলক্ষিত হলে তাকে আর্সেনিক দূষণ বলে।


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর মতে,"পানিতে নির্ধারিত মান অনুযায়ী ০.০১ পিপিএম আর্সেনিকের উপস্থিতি গ্রহণযোগ্য। তবে যখন কোন এলাকার পানিতে ০.০১ পিপিএম এর চেয়ে বেশি পরিমাণে আর্সেনিক থাকে তখন সেই এলাকার পানিকে আর্সেনিক দূষণযুক্ত বলে।

ড. গৌতম পাল (২০০৫) বলেন, "আর্সেনিক আক্রান্ত মানুষ তথা জীব পরিবেশের অনভিপ্রেত পরিবর্তনকে আর্সেনিক দূষণ বলা হয়।

আর্সেনিকের উৎস

বিশ্বের অনেক দেশে আর্সেনিক দূষণ ভয়াবহভাবে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, কানাডা, তাইওয়ান, সুইডেন, ভিয়েতনামসহ বিশ্বের বহু দেশ বর্তমানে আর্সেনিকে আক্রান্ত। এছাড়াও আর্সেনিক সংক্রমণের ফলে বিশ্ববাসী বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। আর্সেনিক প্রধানত দুইটি উৎস থেকে সংক্রমিত হয়। যথা-(১) প্রাকৃতিক উৎস ও (২) কৃত্রিম উৎস বা মনুষ্য সৃষ্ট উৎস।

(১) প্রাকৃতিক উৎস

আর্সেনিক মূলত প্রকৃতিতে বিভিন্ন পদার্থের সাথে যৌগ রূপে অবস্থান করে। এর প্রধানতম উৎস হলো মৃত্তিকা উৎপাদনকারী শিলা। ৯৯ শতাংশেরও অধিক আর্সেনিক মৃত্তিকা উৎপাদনকারী শিলায় অবস্থান করে। শিলার প্রকৃতির উপর আর্সেনিকের উপস্থিতি নির্ভর করে। আর্সেনিক আগ্নেয়, রূপান্তরিত ও পাললিক শিলায় অবস্থান করে।আগ্নেয় এবং রূপান্তরিত শিলার তুলনায় পাললিক শিলায় আর্সেনিক বেশি মাত্রায় থাকে।


শিলা ছাড়াও এটি বায়ু, পানি ও মাটিতে অবস্থান নেয়। সমগ্র বিশ্বের মাটিতে আর্সেনিকের গড় ঘনত্ব ৭.২ পিপিএম। বেলে পাথর ও কার্বনেটে আর্সেনিকের পরিমাণ কম, গড়ে কিলোগ্রাম প্রতি ১ মিলিগ্রাম।এছাড়াও অধিকাংশ জল ব্যবস্থায় প্রলম্বিত ও নিম্নস্থ অবক্ষেপসমূহ বেশ উচ্চমাত্রায় আর্সেনিক ধারণ করে। কয়লা ২০ মিলিগ্রাম/কিলোগ্রাম পর্যন্ত আর্সেনিক ধারণ করতে সক্ষম।

(২) কৃত্রিম উৎস বা মনুষ্য সৃষ্ট উৎস

মানুষ তার প্রয়োজনে প্রাচীন কাল থেকে প্রকৃতিকে ব্যবহার করে আসছে। মানুষ তার বিভিন্ন কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে প্রকৃতিকে বিপর্যস্ত করে তোলে। মানুষের কতগুলো কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে আর্সেনিকের সংক্রমণ ঘটে। যেমন-
  • ভূ-অভ্যন্তর থেকে অধিক পানি উত্তোলন।
  • জমিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহার।
  • ময়লা আবর্জনার অনিয়মিত নিষ্কাশন ও অব্যবস্থাপনা।
  • আর্সেনিকের প্রলেপযুক্ত বৈদ্যুতিক খুঁটির ব্যবহার প্রভৃতি।
  • পেস্টিসাইড, হার্বিসাইড ও ফাংগিসাইড হিসেবে আর্সেনিক যৌগের অধিক ব্যবহার।

শেষ কথা

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ আর্সেনিক সম্পর্কে জানতো। এটি সেই সময় থেকেই বিষ হিসেবে পরিচিত লাভ করে। তবে মানুষ আর্সেনিককে নিজের কাজেও ব্যবহার করতে শিখেছিল। বর্তমান সময়েও আর্সেনিক নিয়ে মানুষের আগ্রহের সৃষ্টি হচ্ছে। এটিকে কিভাবে মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করা যায় সে প্রচেষ্টা সকলের।সুতরাং আজকের আর্টিকেলে আর্সেনিক কি-আর্সেনিক দূষণ কি এবং আর্সেনিকের উৎস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url