আর্সেনিক রোগের লক্ষণ-মানুষের স্বাস্থ্যের উপর আর্সেনিকের ক্ষতিকর প্রভাব
প্রিয় পাঠক আপনারা কি জানেন আর্সেনিক কি এবং আর্সেনিক রোগের লক্ষণ-মানুষের স্বাস্থ্যের উপর আর্সেনিকের ক্ষতিকর প্রভাব কতটা ভয়াবহ। আর যদি না জেনে থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কারণ আজকের আর্টিকেলে আর্সেনিক রোগের লক্ষণ-মানুষের স্বাস্থ্যের উপর আর্সেনিকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব। তাই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার অনুরোধ রইলো।
মানবদেহে নির্দিষ্ট মাত্রার অধিক আর্সেনিকের উপস্থিতি থাকলেই এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। ২০০ থেকে ৩০০ মিলিগ্রাম আর্সেনিক তাৎক্ষণিকভাবে মানুষের মৃত্যু ঘটাতে পারে। ১০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত আর্সেনিক সহজে নিরাময়যোগ্য। মানবদেহে ১০ মিলিগ্রামের অধিক আর্সেনিকের উপস্থিতি মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে, যা মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি পর্যন্ত বয়ে আনতে পারে।
ভূমিকা
সাধারণভাবে মানবদেহে আর্সেনিকের বিষক্রিয়া ঘটার জন্য দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয়। আর্সেনিকযুক্ত পানি কোন ব্যক্তি একটানা ১০ থেকে ১৫ বছর পান করলে তার মধ্যে বিষক্রিয়াজনিত প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।একে Incubation Period বলে। আর্সেনিকের দীর্ঘস্থায়ী বিষক্রিয়া প্রধানত শরীরের বাহ্যিক অংশে ত্বকে ঘটে। শরীরের সর্বত্র,হাত ও পায়ের তালুতে এর প্রভাব পড়ে।
আরো পড়ুন:আর্সেনিক কি-আর্সেনিক দূষণ কি
আর্সেনিকের বিষক্রিয়ার মুখে দাগ পড়ে, মাথার চুল পড়ে যায়, নখ ও মাড়ি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এছাড়াও দেখা যায় যে, রোগী মেলানোসিস, রক্তশূন্যতা, ডেশকোয়াম্যাশন, লিকোপেনিসা, থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া প্রভৃতিতে আক্রান্ত হয়। দীর্ঘমেয়াদে রোগী সর্দিজ্বর, মানসিক দুর্বলতা থেকে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় এবং মৃত্যুবরণ করে।
আর্সেনিক রোগের লক্ষণ
আর্সেনিকের দ্বারা দূষিত পানির কারণে আর্সেনিকোসিস নামক রোগের সৃষ্টি হয়। আর্সেনিকে আক্রান্ত হওয়ার প্রথম লক্ষণ হলো চামড়ায় কালো দাগ দেখা দেওয়া বা চামড়া শক্ত হয়ে ফুলে যাওয়া।সাধারণত প্রথম আক্রান্ত হওয়ার স্থান হলো হাত-পায়ের তালু।এ রোগের লক্ষণ অনেক। তবে স্থুল চক্ষু দিয়ে যে উপসর্গগুলো সহজে দেখা বা বুঝা যায় তা হলো নিম্নরূপ:
১) চামড়ার রঙের পরিবর্তন দেখা দেয়া;
২) হাত-পায়ের তালু খসখসে হয়ে যাওয়া;
৩) শরীরে কালো ছোপ দেখা দেয়া ও গুটি উঠা;
৪) দীর্ঘদিন যাবৎ ঠান্ডা ও কাশি লেগে থাকা;
৫) শরীরে জ্বালা-পোড়া বেড়ে যাওয়া;
৬) হাত-পায়ের চামড়া শক্ত হয়ে ফেটে যাওয়া;
৭) হাত-পা ক্রমশ মুটি করতে না পারা;
৮) কর্মশক্তি হ্রাস পাওয়া;
৯) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া
১০) অসুস্থতা লেগে থাকা ইত্যাদি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরে এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে ৫-১০ বছর সময় লাগে।আর্সেনিক রোগের চূড়ান্ত লক্ষণগুলো হলো: গ্যাংগ্রিন-ত্বক, মূত্রথলি-শ্বাসনালী ও অন্যান্য অঙ্গে ক্যান্সার হওয়া ইত্যাদি।রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে আর্সেনিকমুক্ত পানি খেলেই এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কিন্তু রোগের অবস্থা যখন ভয়াবহ হয়ে পড়ে তখন চিকিৎসা ও নিরাময় দুটোই অসম্ভব হয়ে পড়ে।
মানুষের স্বাস্থ্যের উপর আর্সেনিকের ক্ষতিকর প্রভাব
একবিংশ শতাব্দীতে এসে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি চরম উন্নতির ধারায় চিকিৎসা বিজ্ঞান বহুদূর এগিয়ে গেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞান বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করলেও প্রকৃতি থেকে কতকগুলো ক্ষতিকর উপাদান নির্মূলে সক্ষম হয়ে উঠেনি। আর্সেনিক নামক প্রাকৃতিক বিষ বিজ্ঞানের এ শূন্যতাকে কাজে লাগিয়ে মানুষের ক্ষতি সাধন করে।এক সময় আর্সেনিককে বিষ হিসেবে ব্যবহার করা হতো।
আবার দেখা যায় যে,এর মাধ্যমে মানুষকে হত্যা করা হতো। বর্তমানে আর্সেনিক মানুষের দেহে প্রবেশ করে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। আর্সেনিকের মাত্রা মানুষের দেহে বেশি প্রবেশ করলে এর প্রভাব তাৎক্ষণিকভাবে দৃশ্যমান হয়। আবার মানুষের দেহে আর্সেনিকের মাত্রা কম থাকলে দীর্ঘ সময় ব্যবধানে এর প্রভাব পরিদৃষ্ট হয়। নিম্নে মানুষের স্বাস্থ্যের উপর আর্সেনিকের ক্ষতিকর প্রভাব বর্ণিত হলো:
১)পরিপাকনালীর প্রভাব
আর্সেনিকের পরিপাকনালীয় প্রভাবকে তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘস্থায়ী এ দু ভাগে আলোচনা করা হলো:
তাৎক্ষণিক প্রভাব: মানবদেহে অতিমাত্রায় আর্সেনিক প্রবেশ করলে তাৎক্ষণিকভাবে মৃত্যু ঘটে এবং পরিপাক নালীতে অতিমাত্রায় আর্সেনিকের উপস্থিতির কারণে তাৎক্ষণিক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
- পরিপাকনালীর টিস্যুকে মারাত্মকভাবে ক্ষতি করে।
- পাকস্থলিতে প্রদাহ সৃষ্টি করে।
- ডায়রিয়া ও পাতলা পায়খানা হয়।
- বমি বমি ভাব হয় আবার কখনো কখনো বমি হয়।
- ঢোক গিলতে কষ্ট হয়।
- মুখ শুকিয়ে যায়।
- শরীরে ধাতব পদার্থ বা রসুনের ন্যায় গন্ধের সৃষ্টি হয়।
- সাবমিউকোস্যাল ক্যাপিলারি ধ্বংস হয়ে যায়।
- সাবমিউকোস্যাল ভ্যসিক্যাল ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
- শরীরের তরল পদার্থ ও প্রোটিন ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
- রক্ত সংবহনে বাধার সৃষ্টি হয়।
- শরীর নিস্তেজ হয়ে যায়।
দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব:আর্সেনিকের পরিপাকনালীয় দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবসমূহ নিম্নরূপ বর্ণিত হল:
- তলপেটে ব্যথার সৃষ্টি হয়।
- বেশি বেশি বমি হয়।
- ডায়রিয়া ও পাতলা পায়খানা হয়।
- ক্ষুধা কমে যায়।
- হৃদযন্ত্রণা ঘটে।
- জন্ডিস দেখা দেয়।
- ইসোফেগাইটিস, গ্যাসট্রিটিস বা কোলিটিস দেখা দেয়।
২)শ্বসনতন্ত্রীয় প্রভাব
আর্সেনিক মানুষের শ্বাসতন্ত্রে তীব্র প্রভাব বিস্তার করে। পেষাইকল, ধূলিকণা, গ্যাস, বাষ্প প্রভৃতি থেকে আর্সেনিক মানবদেহে প্রবেশ করে যা শ্বসনতন্ত্রের কার্যক্রম ব্যাহত করে। আর্সেনিকর শ্বসনতন্ত্রীয় প্রভাব আলোচনা করা হলো।
তাৎক্ষণিক প্রভাব: আর্সেনিকের শ্বসনতন্ত্রীয় প্রভাবসমূহ নিম্নরূপ বর্ণিত হলো:
- ফুসফুসের রক্তজালিকা প্রাচীর ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
- ফুসফুসে পালামোনারি ইডিমা সৃষ্টি হয়।
- ট্রাকব্রোকাইটিস রোগ দেখা দেয়।
- ব্রডিঙ্কাল নিউমোনিয়া সৃষ্টি হয়।
- রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে লোহিত কণিকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব: আর্সেনিকের শ্বসনতন্ত্রীয় দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবসমূহ নিম্নরূপ বর্ণিত হলো:
- আর্সেনিক আক্রান্ত ব্যক্তির রাইনিটিস,ফেরিনজিটিস, ট্রাকব্রংকাইটিস রোগের সৃষ্টি হয়। ফলে গলায় ঘা, দীর্ঘস্থায়ী কফ ও শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা সৃষ্টি হয়।
- ফুসফুসে প্রদাহ সৃষ্টি হয়।
- অ্যাজমা বা হাঁপানি হয়।
- ন্যাসাল সেপটাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- ট্রাকিয়া, মিউকোসা, সাব মিউকোসা ও অ্যালভিওলাসে রক্তক্ষরণ দেখা দেয়।
৩)ত্বক সংক্রান্ত প্রভাব
আর্সেনিক মানুষের ত্বকে জমা হয় এবং ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে। নিম্নে আর্সেনিকের ত্বক সংক্রান্ত প্রভাব আলোচনা করা হলো:
তাৎক্ষণিক প্রভাব: আর্সেনিকের ত্বক সংক্রান্ত তাৎক্ষণিক প্রভাবসমূহ নিম্নরূপ বর্ণিত হলো:
- আর্সেনিক সরাসরি মানুষের ত্বকে জমা হয়।
- ত্বকে আর্সেনিকের উপস্থিতিতে ফুসকুড়ির সৃষ্টি হয়।
- এ ফুসকুড়ি থেকে ইনফেকশনের সৃষ্টি হয়।
- এনজাইম ধ্বংস করে দেয়।
- পাতলা ত্বকে যন্ত্রণাদায়ক ইরিথেমা সৃষ্টি করে।
দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব: আর্সেনিকের ত্বক সংক্রান্ত দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব সমূহ নিম্নরূপ:
- ত্বকে বিভিন্ন চিহ্নের সৃষ্টি হয়।
- ত্বকে ফেরাটোসিস হয়।
- হাত ও পায়ের তলায় হাইপার কেরাটোোসিস ও প্রোরিটিক উরটিককারিয়ায় পরিণত হয়।
- কাঁধ ও মুখমণ্ডলে সায়ানোসিস দেখা যায়।
- ত্বকে কালো দাগের সৃষ্টি হয়, যা ত্বকের স্বাভাবিক বর্ণ বিলুপ্ত করে দেয়।
- মাথা, বুক, হাতের চুল বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে যায়।
- হাত ও পায়ের নখ বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয়।
- হাত ও পায়ের নখে সাদা দাগ পড়ে যাকে মেসলাইন বলে।
- কম বয়সে ত্বকে ক্যান্সার সৃষ্টি হয়।
- ক্যাপিলারি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
৪) রক্ত সংক্রান্ত প্রভাব
আর্সেনিকের রক্ত সংক্রান্ত প্রভাব সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো:
তাৎক্ষণিক প্রভাব: আর্সেনিকের রক্ত সংক্রান্ত তাৎক্ষণিক প্রভাবসমূহ নিম্নরূপ:
- এমোক্রমিক,নর্মোসাইটিস প্রভৃতি থেকে রক্তশূন্যতার সৃষ্টি পর্যন্ত হয়।
- অ্যানিমিয়া ও থ্রম্বোসাইটোপিনিয়া হয়।
- রক্তের লোহিত কণিকায় অক্সিজেন সরবরাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়।
- রক্তশূন্যতা থেকে মারাত্মক মাইলয়েড লিউকেমিয়া সৃষ্টি হয়।
দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব: আর্সেনিকের রক্ত সংক্রান্ত দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো:
- অস্থিমজা থেকে রক্তকোষ উৎপাদন বাধাপ্রাপ্ত হয়।
- নর্মোসাইটিক অ্যানিমিয়া,অ্যাপ্লাসটিক অ্যানিমিয়াসহ বিভিন্ন লক্ষণ প্রকাশিত হয়।
- লোহিত কণিকার হিমোগ্লোবিন সংশ্লেষণে বাধার সৃষ্টি করে।
- লোহিত কণিকার এনজাইম ও প্রোটিনের সালফড্রিল বন্ধনী তৈরি করে শরীরের বিভিন্ন কোষ, কলার উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
- রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।
- বৃক্ষের কার্যকারিতা হ্রাস পায়।
- হেমাটরিয়ার সৃষ্টি করে।
৫) যকৃত সংক্রান্ত প্রভাব
আর্সেনিক মানুষের যকৃতে জমা হয় এবং ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে। আর্সেনিকের যকৃত সংক্রান্ত প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
তাৎক্ষণিক প্রভাব: আর্সেনিকের যকৃত সংক্রান্ত তাৎক্ষণিক প্রভাবসমূহ নিম্নরূপ:
- আর্সেনিকের উপস্থিতিতে যকৃতে অ্যাট্রফি সংঘটিত হয়।
- কোলেসিসটাইসিস,কোলানজাইটিস এবং কনজেসশান উপসর্গ দেখা দেয়।
- দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব: আর্সেনিকের সংক্রান্ত দীর্ঘস্থায় প্রভাব সমূহ নিম্নরূপ:
- আর্সেনিক বছরের পর বছর ধরে জমা হয়ে যকৃতে অনিরাময়যোগ্য অবস্থার সৃষ্টি করে। এছাড়াও দেখা যায় যে, যকৃতে যে অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটে তার ফলে সিরোসিস,পোটালি হাইপারটেনশন,ফ্যাটিডিজেনারেশন, হেপাটিকনি ও প্লামিয়ার সৃষ্টি হয়।
- কোষের শক্তিঘর হিসেবে পরিচিত মাইটোকন্ড্রিয়ার কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়।
- বিপাকক্রিয়া বাধার সম্মুখীন হয়।
- যকৃতের আকার বৃদ্ধি পায় বা জন্ডিস হয়।
- গলা দিয়ে রক্ত ঝরে।
৬)বৃক্কীয় প্রভাব
যকৃতের ন্যায় বৃক্কে আর্সেনিক জমা হয় এবং ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে। আর্সেনিকের বৃক্কীয় প্রভাব সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো।
তাৎক্ষণিক প্রভাব: আর্সেনিকের বৃক্কীয় তাৎক্ষণিক প্রভাবসমূহ নিম্নরূপ:
- আর্সেনিক বৃক্কে অভিঘাত সৃষ্টি করে।
- বৃক্কের আয়তন ছোট হয়ে যায়।
- বৃক্কে রক্ত চলাচল ও রক্তচাপ কমে যায়।
- বৃক্কের সূত্র উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পায়।
- বৃক্কের কর্টেক্স অঞ্চল নষ্ট হয়ে যায়।
দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব: আর্সেনিকের বৃক্কীয় দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব সমূহ নিম্নরূপ:
- আর্সেনিকের বিষক্রিয়ার ফলে রেনাল ক্যাপিলারি,রেনালটিবিউল ও গ্লমেরুলাস ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
- ক্যাপিলারিসের ফলে কৌশিক অঙ্গসমূহ ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
- মাইটোকন্ড্রিয়া ধ্বংস করে ফেলে।
- বৃক্কের কার্যকারিতা নষ্ট করার মধ্য দিয়ে মূত্রের মাধ্যমে রক্তক্ষরণ ঘটে।
- প্রক্সিমাল কনভোলিউটেড টিবিউল ধ্বংস করার মধ্য দিয়ে মূত্রের মাধ্যমে প্রোটিন নিঃসরণ ঘটে।
- অলিগোইউরিয়ার সৃষ্টি হয়। এর ফলে মূত্রের মাধ্যমে অলিগোস্যাকারাইড নিঃসরণ হয়।
৭)হৃদ-সংবহনতন্ত্র সংক্রান্ত প্রভাব
আর্সেনিক হৃদপিণ্ড ও পেরিফেরাল আর্টাবিয়েলের অংশসমূহে ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে।
তাৎক্ষণিক প্রভাব: আর্সেনিকের হৃদ-সংবহনতন্ত্র সংক্রান্ত তাৎক্ষণিক প্রভাবসমূহ নিম্নরূপ:
- আর্সেনিক রক্তসংবাহী ক্যাপিলারির প্রসার ঘটায়। যার ফলে রক্তের আয়তন হ্রাস পায় এবং প্রোটিনের পরিমাণ কমে যায়।
- আর্সেনিক শরীরে প্রবেশের এক থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে আর্সেনিক্যাল মায়োকার্ডিসিস হতে পারে।
- ভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া ও ফিব্রিলেশন উপসর্গ দেখা দেয়।
- করোনারি ও লুমেন লিপিড সংকীর্ণ হয়ে যায়।
- হৃদপিণ্ডে অক্সিজেন সরবরাহ বাধার সম্মুখীন হয়।
দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব: দীর্ঘ সময় ধরে আর্সেনিকের উপস্থিতিতে হৃদ-সংবহন সংক্রান্ত প্রভাব দেখা যায়। আর্সেনিকের হৃদ-সংবহনতন্ত্র সংক্রান্ত দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব সমূহ নিম্নরূপ:
- আর্সেনিকের বিষক্রিয়ার ফলে ব্ল্যাকফুট রোগের সৃষ্টি হয়।
- শরীরের বাহ্যিক অংশের গ্যাংগ্রিন ও স্বাভাবিক ক্ষত থেকে মারাত্মক সংক্রমণের সৃষ্টি করে।
- হৃদযন্ত্রের পেশির পরিবর্তন ঘটায়।একে মায়োকার্ডাইটিস বলে।
- ভেন্ট্রিকুলার অ্যারিদমিয়াস দেখা দেয়।
- ইসিমিক হৃদরোগের সৃষ্টি করে, যা মানুষের মৃত্যু ঘটায়।
৮)স্নায়বিক প্রভাব
আর্সেনিক মানুষের স্নায়ুতন্ত্রকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে। যা মানুষের মনোবৈকল্য থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে। আর্সেনিকের স্নায়বিক প্রভাব সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো:
তাৎক্ষণিক প্রভাব: আর্সেনিকের স্নায়বিক তাৎক্ষণিক প্রভাবসমূহ নিম্নরূপ:
- অতিরিক্ত আর্সেনিকের উপস্থিতির ফলে এক থেকে পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে নিউরোপ্যাথি রোগের সৃষ্টি হয়। এর ফলে নিউরনের অ্যাক্সন বিনষ্ট হয়ে যায়।
- সেনসোরিমটর পলি নিউরোপ্যাথি রোগের সৃষ্টি হয়।
- শরীরের নিম্নাংশ ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে।
- রোগী প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়।
- কখনো কখনো শরীরের উপরাঙ্গও দুর্বল হয়ে পড়ে।
- শরীরের মাংসপেশি ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং দুর্বল হয়ে পড়ে।
- রোগী স্পর্শ অনুভূতি হারিয়ে ফেলে।
- হাতের আঙ্গুলে কম্পন দেখা যায়।
- কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র বিকল হয়ে যায়।
দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব: আর্সেনিকের স্নায়বিক দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব সমূহ নিম্নরূপ:
- স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়।
- তীব্র মাথা যন্ত্রণার সৃষ্টি হয়।
- তরঙ্গের পরিবর্তন ঘটে।
- উদ্বিগ্নার সৃষ্টি হয়।
- ভাঙ্গা ভাঙ্গা ঘুম হয়।
- কর্মশক্তি লোপ পায়।
- যৌন স্পৃহা কমে যায়।
- বিষণ্নতা দেখা দেয়।
- কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা দেখা দেয়।
- শরীরে অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটে।
- ফ্লেক্সর ও এক্সটেনশন পেশির সংকোচন হ্রাস পায়।
৯) প্রজনন সংক্রান্ত প্রভাব
মানুষের প্রজনন ক্ষমতার উপর আর্সেনিকের তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘস্থায়ী উভয় ধরনের প্রভাব পড়ে। এছাড়া দেখা যায় যে, আর্সেনিকে আক্রান্ত মাতার গর্ভের সন্তানের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। সন্তান প্রসবের সময় প্রকট জটিলতার সৃষ্টি হয়।
শেষ কথা
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, আর্সেনিকে আক্রান্ত ব্যক্তি শেষ পরিণতিতে মৃত্যুবরণ করে। তাই আর্সেনিক প্রতিকারের জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন আর্সেনিক মুক্ত পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা। এছাড়াও আর্সেনিকে আক্রান্ত রোগীকে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা প্রদান করা। আজকের আর্টিকেলে আর্সেনিক রোগের লক্ষণ-মানুষের স্বাস্থ্যের উপর আর্সেনিকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন।