বাংলাদেশের নদ-নদীর একটি বিবরণ দাও

প্রিয় পাঠক আপনারা কি জানেন আজকের আর্টিকেলে বাংলাদেশের নদ-নদীর একটি বিবরণ বিস্তারিতভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। কারণ আজকের আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা জানতে পারবেন বাংলাদেশের নদ-নদী কয়টি ও কি কি এবং নদ-নদীর গতিপথের বর্ণনা। তাই আর্টিকেলটি না টেনে সম্পূর্ণ পড়ার অনুরোধ রইল।আশা করি আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন।

বাংলাদেশের নদ-নদীর একটি বিবরণ দাও
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় এদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বহুলাংশে নদ-নদীর উপর নির্ভরশীল। নদীমাতৃক বাংলাদেশে অসংখ্য নদী, উপনদী ও শাখানদী দ্বারা পরিবেষ্টিত। তাই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নদ-নদীর প্রভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে বাংলাদেশের নদ-নদীর একটি বিবরণ তুলে ধরা হলো।

ভূমিকা

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিবহন ব্যবস্থায় নদীপথের গুরুত্ব অপরিসীম।যেকোন দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় নদ-নদী ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। নদীমাতৃক দেশ আমাদের এ বাংলাদেশ।তাই স্বাভাবিক ভাবেই এদেশের মানুষের জীবনযাত্রার উপর নদীর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। এদেশে জালের ন্যায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ছোট-বড় প্রায় ৩১০ টি নদ-নদী।বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে নদী অত্যন্ত নিবিড় ভাবে জড়িত।

বাংলাদেশের প্রধান প্রধান নদ-নদীর বিবরণ

পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, কর্ণফুলি বাংলাদেশের প্রধান নদ-নদী। এছাড়া পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, আড়িয়াল খাঁ, রুপসা, সাঙ্গু, ফেনী, মাতামুহুরী, হালদা, কাসালং ও নাফ নদী বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। নিম্নে বাংলাদেশের প্রধান প্রধান নদ-নদীর বিবরণ দেওয়া হলো।

১) পদ্মা

পদ্মা বাংলাদেশের প্রধান নদী এবং এটি গঙ্গা নদীর একটি অন্যতম শাখা। মধ্য হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে এর উৎপত্তি। এই উৎপত্তিস্থল থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে রাজমহল পাহাড়ের নিকট দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে একটি শাখা ভাগীরথী নামে পশ্চিম বাংলায় প্রবেশ করেছে। দ্বিতীয় শাখাটি বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চলের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে প্রবেশ করে পদ্মা নামে প্রবাহিত হতে থাকে। পদ্মা নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৫৫ কিলোমিটার।


এরপর পদ্মা নদীটি দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে চাঁদপুরে তিন নদীর মিলিত স্রোত মেঘনা নামে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। পদ্মার শাখা নদীর মধ্যে মাথাভাঙ্গা, ভৈরব, গড়াই, মধুমতি, ইচ্ছামতি ও আড়িয়াল খাঁ উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে ভৈরবের শাখা নদী কপোতাক্ষ, শিবসা ও পশুর। উত্তর দিক থেকে আগত উপনদীগুলোর মধ্যে মহানন্দা প্রধান। এছাড়াও মহানন্দারও কয়েকটি উপনদী রয়েছে, যেমন:পুনর্ভবা, নাগর, কুলিক ও টাঙ্গন।

২) মেঘনা

মেঘনা বাংলাদেশের প্রধান প্রধান নদ-নদীগুলোর একটি। মেঘনা ভারতের নাগা-মনিপুর জলবিভাজি কার দক্ষিণ ঢালে, বরাক নদী থেকে এর উৎপত্তি। বরাক নদী সিলেট সীমান্তে সুরমা ও কুশিয়ারা নামে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সুরমা নদী বাংলাদেশের উত্তরে খাসিয়া ও জয়ন্তিয়া পাহাড়ের নিকট দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পশ্চিম দিকে ছাতক, সিলেট ও সুনাম গঞ্জের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে আজমিরিগঞ্জের কাছে, কালনি নদীর সাথে মিশেছে।


আর কুশিয়ারা দক্ষিণে মনুমুখের নিকট প্রথমে বিবিয়ানা ও পরে কালনি নামে আজমিরিগঞ্জের ঊর্ধ্বে কালনির সাথে মিশেছে।সুরমা ও কুশিয়ারার মিলিত প্রবাহ মেঘনা নামে ভৈরব বাজারে পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের সাথে মিলিত হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়েছে এবং চাঁদপুরের কাছে পদ্মার সাথে মিলিত হয়ে মেঘনা নামে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৩০ কিমি.

৩) যমুনা

যমুনা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং বিশ্বের দীর্ঘতম নদী সমূহের মধ্যে অন্যতম। প্রকৃতপক্ষে ব্রহ্মপুত্র নদের নিম্ন প্রবাহ যমুনা নামে অভিহিত। জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ নামক স্থানে ব্রহ্মপুত্র নদ তার পুরাতন গতিপথ পরিবর্তন করে দক্ষিণা ভিমুখী যমুনা নদী নামে প্রবাহিত হয়ে আরিচার নিকটে গঙ্গা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। বাংলাদেশে এ নদীর দৈর্ঘ্য ৯০ কিলোমিটার।

৪) ব্রহ্মপুত্র

ব্রহ্মপুত্র বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান নদ। বাংলাদেশের নদ-নদীর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র একটি অন্যতম প্রধান নদ।এ নদ হিমালয়ের কৈলাসশৃঙ্গের একটি হিমবাহ থেকে উৎপত্তি হয়। এর উৎপত্তিস্থল থেকে তিব্বত ও আসামের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রংপুর অঞ্চলের কুড়িগ্রামের নিকট বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। অতঃপর জামালপুরের অদূরে দেওয়ানগঞ্জের কাছে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়েছে।

৫) কর্ণফুলী

বাংলাদেশের নদ-নদীর একটি অন্যতম প্রধান নদী হলো কর্ণফুলী। কর্ণফুলী চট্টগ্রাম ও রাঙ্গামাটির প্রধান নদী। আসামের লুসাই পাহাড় থেকে কর্ণফুলী নদীর উৎপত্তি হয়। এর গতিপথ পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। এর কোন শাখা নদী নেই। কর্ণফুলী নদীর প্রধান উপনদী হল কাসালং ও বোয়ালখালী। কর্ণফুলী নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬০ কিলোমিটার।

৬) পুরাতন ব্রহ্মপুত্র

পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ ময়মনসিংহের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভৈরবের নিকট মেঘনায় পতিত হয়েছে। প্রায় ২০০ বছর পূর্বে এটি ছিল ব্রহ্মপুত্র নদের মূল গতিপথ। এটি শীতলক্ষ্যা টোকন নগরের কাছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র থেকে নির্গত হয়ে নারায়ণগঞ্জ ধলেশ্বরীর সাথে মিশেছে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২৪০ কিলোমিটার।

৭) সাঙ্গু

সাঙ্গু নদী বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান নদী।এছাড়াও সাঙ্গু নদী মায়ানমার ও বাংলাদেশ সীমানায় আরাকান পাহাড় থেকে উৎপত্তি হয়ে পার্বত্য বান্দরবান ও চট্টগ্রামের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। সাঙ্গু নদীর কোন শাখা নদী বা উপনদী নেই। সাঙ্গু নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮০ কিলোমিটার।

৮) ফেনী

বাংলাদেশের নদ-নদীর একটি অন্যতম প্রধান নদী ফেনী।ফেনী নদী নোয়াখালী জেলায় অবস্থিত। এই ফেনী নদী পার্বত্য ত্রিপুরা থেকে উৎপত্তি হয়ে নোয়াখালী জেলার পূর্ব সীমানা দিয়ে সন্দ্বীপ প্রণালির উত্তরে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। এ নদীর কোন শাখা নদী বা উপনদী নেই। এ নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৮০ কিলোমিটার।

৯) মাতামুহুরী

বাংলাদেশের নদ-নদীর মধ্যে মাতামুহুরী নদী অন্যতম। মাতামুহুরী নদী কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত। এটি লামার মইভার পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে লামা থানার ভেতর দিয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়েছে এবং কক্সবাজার জেলার উত্তরে চকোরিয়ার পশ্চিমে অগ্রসর হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১২০ কিলোমিটার।

১০) হালদা

বাংলাদেশের নদ-নদীর মধ্যে হালদা নদী অন্যতম। হালদা নদী, কালুরঘাটের নিকট অবস্থিত। এ নদী খাগড়াছড়ির বাদনাতলি পর্বতশৃঙ্গ থেকে উৎপত্তি হয়েছে।উৎপত্তিস্থল থেকে দক্ষিণে অগ্রসর হয়ে কালুরঘাটের নিকট কর্ণফুলী নদীতে পতিত হয়েছে।

১১) নাফ

বাংলাদেশের নদ-নদীর একটি অন্যতম নদী নাফ। এই নদী বাংলাদেশ ও মায়ানমারের সীমানা বরাবর অবস্থিত। বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ সীমা বরাবর যে নদী প্রবাহিত হচ্ছে তার নাম নাফ নদী।মায়ানমার ও টেকনাফের সীমা নির্দেশ করে এ নদী বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৫৬ কিলোমিটার।

শেষ কথা

অর্থাৎ উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশের বুক চিরে প্রবাহিত হয়েছে অসংখ্য নদ-নদী।পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র প্রভৃতি প্রধান নদী ছাড়াও যেসব শাখা নদী ও উপনদী রয়েছে সেগুলোও প্রধান নদীগুলোর মত অকৃপণ হাতে বাড়িয়ে দিচ্ছে এদেশের কৃষিজমির উর্বরাশক্তি। আবার কখনো ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে গ্রাস করছে লোকালয়, নিঃস্ব করছে মানুষকে। তা সত্বেও এদেশের নদীগুলো অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরাট অবদান রাখছে। আজকের আর্টিকেলে বাংলাদেশের নদ-নদীর একটি বিবরণ বিস্তারিতভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url