কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
প্রিয় পাঠক আপনারা কি জানেন কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। আর যদি না জেনে থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কারণ আজকের আর্টিকেলে কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং কাঁচা হলুদ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন।
কাঁচা হলুদ মূলত একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক। শরীরের প্রদাহ কমাতে, রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বাড়াতে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে কাঁচা হলুদের জুড়ি নেই। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এক টুকরা কাঁচা হলুদ আপনাকে বাঁচিয়ে দিতে পারে বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে। তাই আজকের আর্টিকেলে কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করব। তাই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার অনুরোধ রইলো।
ভূমিকা
হলুদ খেতে তিতকুটে স্বাদের হলেও প্রায় সব ধরনের রান্নাতে এটার ব্যবহার হয়। হলুদ ছাড়া রান্না-বান্নার কথা যেমন কল্পনাই করা যায় না তেমনি শরীরের ক্ষতস্থান সারিয়ে তোলাসহ শারীরিক ও মানসিক অনেক সমস্যা সমাধানেও হলুদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। হলুদ রক্ত পরিষ্কার করে এবং শরীরের জমে থাকা টক্সিন বের করে দেয়। এছাড়াও হলুদ শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বহুলাংশে বৃদ্ধি করে।
হলুদের উপকারিতা না জেনেই প্রতিদিন রান্নার স্বাদবর্ধক হিসেবে আমরা এটা খেয়ে থাকি। আমরা অনেকে আবার রূপচর্চাতেও হলুদ ব্যবহার করে বেশ উপকৃত হচ্ছি। তবে কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা উভয় দিক রয়েছে। তাই অতিরিক্ত কাঁচা হলুদ কখনোই সেবন করা উচিত নয়। বিজ্ঞানীদের মতে, প্রতিদিন ২৫০ মিলিগ্রামের বেশি কাঁচা হলুদ খাওয়া উচিত নয়।
কাঁচা হলুদের পুষ্টি উপাদান
হলুদ নানা পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। হলুদ অতিরিক্ত তাপে সিদ্ধ করে ব্যবহার করলে এর অনেক গুণ নষ্ট হয়ে যায়। তাই রান্নাতে ব্যবহৃত হলুদের চেয়ে কাঁচা হলুদের উপকারিতা অনেক বেশি। প্রতি১০০ গ্রাম কাঁচা হলুদের মধ্যে রয়েছে।
- প্রোটিন-৭.৮৩গ্রাম,
- চর্বি-৯.৮৮গ্রাম,
- শর্করা-৬৪.৯ গ্রাম,
- কার্বোহাইড্রেট-৬.৩১গ্রাম,
- গ্লুকোজ-০.৩গ্রাম,
- ফোলেট-৩৯আইইউ,
- ফসফরাস-২৬৮মিগ্রাম,
- ফাইবার-২১গ্রাম,
- ক্যালসিয়াম-১৮৩মিগ্রাম,
- নায়াসিন-৫.১৪ মিগ্রাম,
- আয়রন-৪১.৪২ মিগ্রাম,
- ভিটামিন সি-২৫.৯মিগ্রাম,
- ভিটামিন ই-৩.১০মিগ্রাম,
- ভিটামিন কে-১৩.৪আইইউ,
- কপার-৬০৩ আইইউ,
- জিংক-৪.৫মিগ্রাম,
এছাড়াও হলুদে রয়েছে কারকিউমিন, খনিজ লবণ, লোহা, ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি৬ প্রভৃতি।কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা উভয় দিক রয়েছে।নিম্নে কাঁচা হলুদের সম্পর্কে বর্ণিত হলো:
কাঁচা হলুদের উপকারিতা
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
হলুদের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ লবণ, ক্যালসিয়াম,পটাশিয়াম, ফসফরাস, লোহা ইত্যাদি নানা পুষ্টি উপাদান রয়েছে। তাই হলুদ খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পায়।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
হলুদে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ কারকিউমিন, নিয়াসিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। হলুদে থাকা বিশেষ উপাদান কারকিউমিন যা একাই একশোর বেশি রোগ সারাতে সক্ষম। শরীরকে ক্যান্সার মুক্ত রাখতে নিয়াসিন একটি প্রয়োজনীয় ভিটামিন। এছাড়াও কাঁচা হলুদে থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আরো পড়ুন:পেঁয়াজের উপকারিতা ও অপকারিত-পেঁয়াজের পুষ্টিগুণ
কাঁচা হলুদ ক্যান্সার প্রতিরোধ করার পাশাপাশি ক্যান্সারের ছড়িয়ে যাওয়ার গতিকেও মন্থর করে। কারণ কারো যদি ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে পড়ে সে যদি প্রতিদিন সকালে এক টুকরো কাঁচা হলুদ থেঁতো করে পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারে তাহলে তার ক্যান্সার ছড়িয়ে যাওয়া সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
ডায়রিয়া নিরাময় করে
কাঁচা হলুদ ডায়রিয়া নিরাময়ের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত কার্যকরী। ডায়রিয়া হলে এক চামচ পরিমাণ কাঁচা হলুদের রস পানির সাথে মিশিয়ে খেয়ে ফেলুন। কারণ জীবাণু ধ্বংস হলে ডায়রিয়া নিরাময় হবে। এছাড়াও যারা অন্ত্রের নানা রকম রোগে ভুগছেন তারা প্রতিদিন টাটকা হলুদ বেটে সেই রস পানিতে মিশিয়ে খাবেন। হলুদ অন্ত্রের রোগের মহাঔষধ।
প্রদাহ দূর করে
শরীরের প্রদাহ কমাতে কাঁচা হলুদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারণ কাঁচা হলুদে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা যেকোন জীবাণু সংক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করে। এছাড়াও কাঁচা হলুদে রয়েছে কারকিউমিন নামক একটি বিশেষ পুষ্টি উপাদান যা শরীরের যে কোন প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ করে
ওজন নিয়ন্ত্রণে কাঁচা হলুদের উপকারিতা অপরিসীম। হলুদের মধ্যে থাকা বিশেষ উপাদান কারকিউমিন শরীরের ফ্যাট সংরক্ষণকারী কোষগুলি উৎপাদনে বাধার সৃষ্টি করে যার ফলে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমতে পারে না। এছাড়াও হলুদ বিপাকীয় প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তাই প্রতিদিন সকালে এক চামচ কাঁচা হলুদের রস সামান্য কুসুম গরম পানির মধ্যে মিশিয়ে খেলে আপনার ওজন সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
সর্দি কাশি দূর করে
হলুদে হয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি যা শরীরের জ্বর,সর্দি-কাশি সহজে দূর করতে সহায়তা করে। কাশি কমাতে হলে কাঁচা হলুদের রস কয়েক চামচ খেয়ে নিন কিংবা এক টুকরো হলুদের সাথে মধু মাখিয়ে তা মুখের মাঝে রেখে আস্তে আস্তে চুষতে পারেন। এটিও করতে না পারলে এক গ্লাস গরম দুধের মধ্যে হলুদের গুড়া এবং পরিমাণ মতো গোলমরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে পান করুন। কয়েকবার সেবনেই কাশি ও গলা ব্যথা দুটোই দূর হবে।
ত্বককে রক্ষা করে
ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন বলিরেখা,ব্রণ,কালো দাগ, ব্ল্যাকহেডস দেখা দেয়। যেহেতু কাঁচা হলুদে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা ত্বককে বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও ত্বকের ভেতরে কোলাজিনের উৎপাদন বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। দুধের সাথে এক চামচ কাঁচা হলুদের রস নিয়মিত পান করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়।
আরো পড়ুন:
এছাড়াও রোদে পুড়ে কিংবা অন্য কোন কারণে ত্বকের রং কালো হয়ে গেলে হলুদ চমৎকার কাজ করে। সামান্য পরিমাণে শসার রস নিয়ে তাতে অল্প একটু হলুদ বাটা কিংবা গুঁড়ো মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগিয়ে তা ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর পানিতে ধুয়ে ফেলুন। কিছুদিন এভাবে ব্যবহার করলে বেশ উপকার পাবেন।
হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় দেখা গেছে, কাঁচা হলুদে থাকা বিশেষ উপাদান কারকিউমিন শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। যার ফলে আমাদের শরীরে হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখার পাশাপাশি স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমাতে সাহায্য করে।
হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
কাঁচা হলুদ হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। কাঁচা হলুদ লিভারে থাকা বিভিন্ন খারাপ ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে লিভারকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও কাঁচা হলুদের মধ্যে রয়েছে গ্যাস্ট্রো-প্রটেক্টিভ কিছু গুন যা খাবার পরিপাকে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত কাঁচা হলুদ খেলে গ্যাস-অম্বল থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়।
মস্তিষ্কের উন্নতি ঘটায়
কাঁচা হলুদ মস্তিষ্কের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কারণ কাঁচা হলুদে থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফোলেট যা বিষন্নতা দূর করতে বিশেষভাবে সহায়তা করে এবং সুনিদ্রায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। কারণ ফোলেট শরীরে অতিরিক্ত হোমোসিস্টেইন তৈরিতে বাধা দিয়ে সেরোটোনিন, ডোপামিনের মত গুরুত্বপূর্ণ হরমোন সিক্রেশনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে যা সুনিদ্রাসহ মনকে প্রফুল্ল রাখে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কাঁচা হলুদ অনেক উপকারী। কারণ কাঁচা হলুদ রক্তের শর্করার মাত্রা ঠিক রাখতে সহায়তা করে। তাই ডায়াবেটিস রোগীরা যদি প্রতিদিন সকালে এক চামচ কাঁচা হলুদের রস খেতে পারেন তাহলে সহজেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
রক্তশূন্যতা দূর করে
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরী অফ মেডিসিনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, কাঁচা হলুদে অনেক আয়রন থাকে। শরীরে আয়রনের স্বল্পতা দেখা দিলে কাঁচা হলুদ আয়রন বাড়াতে সহায়তা করে। প্রতিদিন সকালে চা চামচের এক চামচ কাঁচা হলুদের রস ও সামান্য পরিমাণে মধু মিশিয়ে নিয়মিত সেবন করলে রক্তশূন্যতা অচিরেই দূর হয়ে যায়।
কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করে
কাঁচা হলুদে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান যা শরীরের বিভিন্ন সংক্রমণ জনিত রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। কাঁচা হলুদে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান দেহে খারাপ ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ, জন্ম এবং বংশবিস্তারে বাধা প্রদান করে। একাধারে সাতদিন সকালে খালি পেটে এক চামচ করে কাঁচা হলুদের রস সামান্য কুসুম গরম পানির সাথে মিশিয়ে খেলে দেহের অভ্যন্তরীণ ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এবং কৃমির ধ্বংস করতে সাহায্য করে।
ব্যাথা উপশম করে
শরীরের কোন স্থানে ক্ষত বা ব্যাথা সারাতে হলুদ কার্যকরী ভূমিকা রাখে। যারা আর্থ্রাইটিস,গেঁটে বাত কিংবা অন্য কোন ব্যথায় ভুগছেন, তাদের জন্য হলুদের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। এছাড়াও কাঁটা ছেড়াই হলুদ অ্যান্টিসেপ্টিকের মত কাজ করে। হালকা গরম পানি দিয়ে হলুদের পেস্ট তৈরি করে তা ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দিলে দ্রুত সেরে যায়। আবার শরীরের কোন অংশ পুড়ে গেলে পানির মধ্যে হলুদের পাউডার মিশিয়ে প্রলেপ দিলে আরাম পাওয়া যায়।
কাঁচা হলুদের অপকারিতা
কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা উভয় দিক রয়েছে। সবার শরীরের জন্য কাঁচা হলুদ সুফল বয়ে নাও আনতে পারে। দেখা যায় কাঁচা হলুদ খেলে অনেকের শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাই কাঁচা হলুদের কিছু অপকারিতা তুলে ধরা হলো:
- গবেষকদের মতে, প্রতিদিন ২৫০ মিলিগ্রামের বেশি হলুদ খাওয়া উচিত নয়। কারণ অতিরিক্ত হলুদ শরীরের আয়রন শোষণ করে নেয়। ফলে রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়। এর ফলে শরীর দেখা দিতে পারে আয়রনের ঘাটতি।
- অতিরিক্ত কাঁচা হলুদ খেলে মাথা ব্যথা,মাথা ঘোরা সহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত কাঁচা হলুদ খেলে অনেকের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা বৃদ্ধি পায়। তাই কাঁচা হলুদ খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
- গর্ভবতী এবং বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন নারীদের ক্ষেত্রে কাঁচা হলুদ খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ এটা জরায়ু সংকোচনকে বৃদ্ধি করতে পারে।ফলে দেখা দিতে পারে নানান জটিলতা।
- অতিরিক্ত হলুদ খেলে পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। যেমন অ্যাসিড রিফ্লাক্স, হজমে সমস্যা, ডায়রিয়া, লিভার বড় হয়ে যাওয়া, লিভারে প্রদাহসহ নানা সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
- গবেষকদের মতে, প্রতিদিন ২৫০ মিলিগ্রামের বেশি কাঁচা হলুদ খেলে কিডনিতে পাথর, পিত্তথলির পাথর এবং রক্তপাতের মতো বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
- শরীরে আয়রনের ভারসাম্য বজায় রাখে হেপসিডিন ও পেপটাইডস। অতিরিক্ত কাঁচা হলুদ খেলে শরীরের আয়রনের ভারসাম্য বজায়কারী এই হেপসিডিন ও পেপটাইডস সংশ্লেষণকেও বাধা সৃষ্টি করতে পারে। সুতরাং কাঁচা হলুদ খাওয়ার ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে।
- হলুদে প্রচুর পরিমাণ কারকিউমিন থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকার। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণ হলুদ খেলে এই কারকিউমিন আবার আয়রন শোষণ করে অ্যানিমিয়া রোগ সৃষ্টি করতে পারে।
- অতিরিক্ত হলুদ খেলে অ্যালার্জিজনিত সমস্যা বেড়ে গিয়ে শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ বৃদ্ধি পেতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এটা বেশি হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
- যারা বিভিন্ন ধরনের সাপ্লিমেন্ট খাচ্ছেন তারা অবশ্যই কাঁচা হলুদ খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শ নেওয়া অতি জরুরী।
কাঁচা হলুদ খাওয়ার নিয়ম
কাঁচা হলুদ খাওয়ার অনেক নিয়ম রয়েছে। অনেকে বছরের পর বছর কাঁচা হলুদ খেয়ে যাচ্ছেন। এটা একদম ঠিক নয়। কারণ অতিরিক্ত কাঁচা হলুদ খাওয়ার বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। গবেষকদের মতে প্রতিদিন ২৫০ মিলিগ্রামের বেশি কাঁচা হলুদ খাওয়া উচিত নয়। টানা একমাস আপনি কাঁচা হলুদ খেতে পারেন এরপর কয়েক মাস বাদ দিন আবার এক মাস খান আবার কয়েক মাস বাদ দিন এভাবে পর্যায়ক্রমে খেতে পারে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এবং রাত্রে ঘুমানোর আগে কাঁচা হলুদ খেতে পারেন।
আরো পড়ুন:
কাঁচা হলুদ থেঁতো করে এর রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন, আবার দুধের সঙ্গে কাঁচা হলুদের রস মিশিয়ে খেতে পারেন, আবার চায়ের সঙ্গে মিশিয়েও খেতে পারেন। কাঁচা হলুদের রস খাওয়ার পর আধা ঘন্টা সময় কিছু না খাওয়াই ভালো। তবে কাঁচা হলুদের রসের সঙ্গে গোলমরিচের গুঁড়া মিশিয়ে খেলে শরীরে অবজার্ভ ভালো হয় এতে এর উপকারিতা বেশি পাওয়া যায়। কারণ গোলমরিচের আছে পিপারিন যা কারকিউমিনের কার্যক্ষমতা প্রায় ২০০০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়।
শেষ কথা
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, অতি প্রাচীনকাল থেকে হলুদ মহৌষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কাঁচা হলুদ শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেমকে বুস্ট করে। কাঁচা হলুদের পুষ্টি উপাদান বিভিন্ন রোগ,সংক্রমণ এবং প্রদাহ জনিত রোগ থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু অবশ্যই মনে রাখতে হবে মাত্রাতিরিক্ত হলুদ ব্যবহার করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত এবং বিভিন্ন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করছেন তাদের ক্ষেত্রে কাঁচা হলুদ ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আজকের আর্টিকেলে কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং কাঁচা হলুদ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন।