এল নিনো ও লা নিনা বলতে কি বুঝায়

প্রিয় পাঠক আপনারা কি এল নিনো ও লা নিনা সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কারণ আজকের আর্টিকেলে এল নিনো ও লা নিনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করব।তাই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার অনুরোধ রইল।

এল নিনো ও লা নিনা বলতে কি বুঝায়

এল নিনো ও লা নিনা মূলত ভূ-চক্রের উপাদান। এই প্রপঞ্চগুলি মহাসাগর থেকে বায়ুমন্ডলে প্রভাব বিস্তার করে পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে।

এল নিনো

সাধারণ মানে তুলনায় দীর্ঘমেয়াদী প্রশান্ত মহাসাগরীয় বক্ষের তাপমাত্রার পার্থক্য এল নিনো বলে চিহ্নিত। ঐ সময়ে প্রশান্ত মহাসাগরে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চাইতে গড় ০.৫ সেলসিয়াস (০.৯) কম বা বেশি থাকে।আর এই অবস্থা ২ থেকে ৭ বছর বিরতিতে এসে দেখা যায় ৯ মাস হতে ২ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। আর যখন ঐ উষ্ণায়ন বা শীতলায়ন ৭-৯ মাস হয় তখন তা এল নিনো অবস্থা এবং যখন ৫-৭ মাস স্থায়ী হয় তখন তা এল নিনো উপাখ্যান হিসেবে চিহ্নিত। এল নিনোর প্রাথমিক চিহ্নাদি হল:

১) ইন্দোনেশিয়া,অস্ট্রেলিয়া ও ভারতে বায়ুচাপ বৃদ্ধি পায়,

২) মধ্য এবং পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে বায়ুচাপ হ্রাস পায়,

৩) দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় আয়ন বায়ু দুর্বল হয়ে পড়ে,

৪) পেরুর নিকট উষ্ণ বায়ু সৃষ্টি হয় এবং উত্তর পেরুর মরুভূমি এলাকায় বৃষ্টিপাত হয়।

৫) ভারত মহাসাগর ও পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর হতে পূর্ব মহাসাগরে উষ্ণ পানির অনুপ্রবেশ ঘটে।এতে করে প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় দীর্ঘ মেয়াদী খরার সৃষ্টি হয়।

লা নিনা

লা নিনা হলো এল নিনোর বিপরীত জলবায়ু প্রপঞ্চ।এটা প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণা দোলণ চক্রের শীতল অবস্থা। স্থানীয় ভাষায় লা-নিনা কে বলা হয় বালিকা এর অপর নাম লা ভাইজো বা বৃদ্ধ।দেখা যায় এটা হল তাপমাত্রার শীতল অস্থিতিশীল অবস্থা।লা-নিনার প্রাথমিক চিহ্নাদি হল:

১) স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে শুষ্ক অবস্থা বিরাজ করে দক্ষিণ আমেরিকা ও উত্তর আমেরিকাতে (বিশেষত: শীতকালে)

২) দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি আর্দ্র থাকে। এছাড়াও উত্তর অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও উত্তর ব্রাজিলে এই অবস্থা বিরাজ করে। উত্তর গোলার্ধে ফিলিপাইন ও ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়াতে বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়।

৩) পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগর স্বাভাবিকের চাইতে শীতল থাকে।

এল নিনো ও লা নিনার নামকরণ

এল নিনো মূলত: দক্ষিণ আমেরিকার জেলেদের দ্বারা সনাক্তকৃত হয়।মৎস্য আহরনের মৌসুমে সমুদ্রে গরম পানির অনুপ্রবেশের ফলে সাগরের মাছ উপকূলে চলে আসে অথবা অন্যদিকে সরে যায়।এছাড়া গ্রীষ্মকালের শুরুতে ঐ ঘটনা ঘটায় মৎস্যজীবিরা এর নামকরণ করে যীশুর সন্তান (শিশু পুত্র) হিসেবে। অপরদিকে লা নিনা অর্থ বালিকা শিশু। সাগরে ঠান্ডা পানির অনুপ্রবেশে এই নামকরণ করা হয়। কোন কোন স্থানে লা নিনাকে এল ভাইজো বা বৃদ্ধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এ সময়ে পানি শীতল হওয়াতে প্রচুর মাছ ধরা পড়ে।

এল নিনোর প্রাথমিক পর্যায় সমূহ

বলা হয় এল নিনো প্রশান্ত মহাসাগরীয় আয়ন বায়ুর দুর্বল প্রবাহের সাথে সম্পৃক্ত।আয়ন বায়ু যখন মাসের পর মাস অতিশয় দুর্বল হয়ে পড়ে এবং কেলভিন তরঙ্গের প্রভাবে সমুদ্রের পানি কয়েক সেন্টিমিটার উঁচু হয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণ আমেরিকার নিকট প্রবাহিত হয় তখন এল নিনোর প্রাথমিক অবস্থা শুরু হয়েছে বলে ধরে নেয়া হয়।


আয়ন বায়ু দুর্বল হয়ে দুটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলেও তা'এল নিনোর আগমন বার্তা ধরে নেয়া যায়।প্রশান্ত মহা সাগরকে তাপের সংরক্ষণাগার হিসেবে ধরা যায় যা'বিশ্বের বায়ু প্রবাহের প্যাটার্নকে বদলে দিতে পারে এবং বৈশ্বিক আবহাওয়ার পরিবর্তন সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে।এল নিনো শুরুর পর্যায়ে বৃষ্টিপাত পশ্চিম মহাসাগর এলাকা থেকে দক্ষিণ আমেরিকার দিকে সরে যায়।

১৯৬৯ সালে Jacob Bjerknes এল নিনো ও দক্ষিণা দোলন সম্পর্কে বলেন, পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে উষ্ণ এলাকা সৃষ্টি হয়ে আয়ন বায়ুকে দুর্বল বা প্রবাহ বন্ধ করে দেয় এবং উষ্ণ পানি পশ্চিমে চালিত হয়। ফল হিসাবে দেখা যায় যে বর্ধিত উষ্ণ পানি পূর্ব দিকে সঞ্চিত হতে থাকে।

পূর্বদিকে ৩০-৬০ দিনের বৃষ্টিপাতের অনিয়মিত স্থানান্তরও এল নিনোর প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।পশ্চিমা বায়ু প্রবাহের প্রভাবে নিরক্ষরেখার উত্তরে ও দক্ষিণে ঘূর্ণবাত্যা শক্তিশালী হয়ে নিরক্ষীয় প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব দিকে গমন করলেও এল নিনোর বিকাশে সহায়ক হয়।

এল নিনো ও লা নিনার প্রতিক্রিয়া

এল নিনো ও লা নিনার ফলে বিশ্বব্যাপী খরা, বন্যা ও ঝড় সৃষ্টি হয়ে থাকে। সাধারণভাবে বলা হয় এল নিনো খরা ও ঘূর্ণিঝড় এবং লা নিনা বর্ধিত বৃষ্টিপাত ও বন্যার জন্য দায়ী। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূল এল নিনোর প্রভাবে মারাত্মক খরার কবলে পড়ে।অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলের বনভূমি অঞ্চলে এল নিনোর প্রভাবে খরার কবলে পড়ে ও যৎসামান্য বৃষ্টিপাত হয়।


এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার বৃহৎ প্রবাল প্রাচীর এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল অন্যান্য প্রবল দ্বীপসমূহ ও এল নিনো কালীন কেলভিন তরঙ্গের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।১৯৮২/৮৩ সালের এল নিনোতে বৃহৎ প্রবল প্রাচীরের একটা বড় অংশ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

উত্তাপ বৃদ্ধি জনিত কারণে প্রবাল কীটের মৃত্যু এবং তরঙ্গের আঘাতে প্রবাল প্রাচীর ক্ষয়ে যাওয়ায় প্রবাল গঠিত ভূমিরূপগুলি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।১৯৮২/৮৩ সালের এল নিনোতে অস্ট্রেলিয়াতে ৭১ ব্যক্তির প্রাণহানি ঘটে এবং ৮,০০০ ব্যক্তি গৃহহীন হয়।

জলবায়ুবিদ্যা এবং এল নিনোর প্রতিক্রিয়া

সাধারণভাবে এল নিনো গুলি নিরক্ষীয় প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। কিন্তু শক্তিশালী এল নিনো গুলির প্রতিক্রিয়া বিশ্বব্যাপী।

১) এল নিনো বায়ুমন্ডলে জেট স্ট্রীমের গতিপথ পরিবর্তন করে। যার ফলে জেট স্ট্রীম ঝড়ো হাওয়া বা ঝড় সৃষ্টির জন্য অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করে।এল নিনো সারাবিশ্বে অস্বাভাবিক আবহাওয়ার সৃষ্টির জন্য দায়ী। অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আফ্রিকা এবং ব্রাজিলে মারাত্মক খরা ও দাবানল এল নিনোরই ফলাফল। আবার দক্ষিণ-পূর্ব যুক্তরাষ্ট্র,পেরু ও চিলিতে বর্ধিত বৃষ্টি, বন্যা এবং হারিকেন সৃষ্টির পিছনেও এল নিনো কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে।

২) এল নিনোর কারণে সমুদ্রের স্বাভাবিক খাদ্যচক্র ব্যাহত হয়ে মৎসের প্রজনন ও বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং মৎসের মড়কও দেখা দেয়। উষ্ণ পানির প্রবাহের ফলে প্লাঙ্কটন সমৃদ্ধ ঠান্ডা পানি নিচের দিকে গমন করার ফলেই মৎস্য খাদ্যের সংকট দেখা যায় এবং মৎস্য আহরণ বন্ধ হয়ে যায় বা তাৎপর্যপূর্ণভাবে কমে যায়।

৩) লা নিনার প্রতিক্রিয়াও এল নিনোর মত ভয়ংকর ও ধ্বংসাত্মক। লা নিনার প্রভাবে ভারতীয় উপমহাদেশের মৌসুমী বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হয় এবং মৌসুমী বায়ুর প্রকোপ অত্যন্ত বেড়ে যেয়ে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা দেখা যায়।অপরদিকে উত্তর আমেরিকায় গ্রীষ্মকাল উষ্ণ ও শুষ্ক এবং শীতকালে অত্যাধিক বরফপাত ঘটে।লা নিনা চলাকালীন সময়ে মারাত্মক ও ধ্বংসাত্মক টর্নেডো সংঘটিত হতে দেখা যায়।

এল নিনো প্রভাবের ভৌগোলিক বন্টন

অধিকাংশ সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ই নিরক্ষীয় অঞ্চলে উৎপত্তি লাভ করে পরবর্তীতে মেরুর দিকে ধাবিত হয়।এল নিনো চলাকালীন সময়ে দেখা যায় যে প্রশান্ত মহাসাগরীয় নিরক্ষীয় এলাকায় সমুদ্র বক্ষে নিম্নচাপ ও ঘূর্ণবাত্যা সৃষ্টি হয়ে তা উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বিভিন্ন স্থানে আঘাত হানে।সামুদ্রিক ঘূর্ণিবাত্যার এক তৃতীয়াংশ সংঘটিত হয় এল নিনো চলাকালীন সময়ে।

আফ্রিকা মহাদেশের উপর প্রভাব

পূর্ব আফ্রিকার কেনিয়া,তানজানিয়া এবং হোয়াইট নীল বেসিন মার্চ-মে পর্যন্ত সাধারণ অবস্থার চেয়ে অধিক বৃষ্টিপাতের সম্মুখীন হয়। অপরদিকে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জাম্বিয়া, জিম্বাবুই, মোজাম্বিক ও বতসাওয়ানা স্বাভাবিকের বেশি শুষ্কতাজনিত সমস্যার সম্মুখীন হয়।

এশিয়া

দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলি (ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া এবং ভিয়েতনাম) এল নিনো চলাকালীন সময়ে বর্ধিত শুষ্কতা জনিত সমস্যায় আক্রান্ত হয়। অতিরিক্ত উত্তাপ জনিত খরা ও ফসলহানি এবং বর্ধিত ঘূর্ণিঝড় এল নিনো চলাকালীন সময়েই পর্যবেক্ষিত হয়েছে। বাংলাদেশে ২০১০ সালে অনাবৃষ্টিও এল নিনোর ফলাফল। এল নিনোর ফলে এশিয়ার বিভিন্ন বনাঞ্চলে দাবানল সৃষ্টি হয়ে থাকে। এছাড়া জাপান,কোরিয়া ও পূর্ব চীন এল নিনো চলাকালীন সময়ে বর্ধিত প্রবল সামুদ্রিক ঝড়ের (টাইফুন) সম্মুখীন হয়।

অস্ট্রেলিয়া

এল নিনো অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ গুলোতে সরাসরি অনেক বিধ্বংসী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। পূর্বে উল্লেখিত কোরাল অবক্ষয় ছাড়াও কুইন্সল্যান্ড, ভিক্টোরিয়া ও তাসমানিয়া অঞ্চলে জুন-আগস্ট পর্যন্ত সময়ে বর্ধিত শুষ্কতা জনিত সমস্যায় আক্রান্ত হয়। এছাড়াও বনাঞ্চলে অগ্নিকাণ্ডও এল নিনোর আরেকটি বিধ্বংসী ফল।

এন্টার্কটিকা

এন্টার্কটিকার পশ্চিম উপদ্বীপ, রস,এমান্ডসেন ও বিলিংসাউসেন সাগরে এল নিনো চলাকালীন সময়ে বর্ধিত বরফ জমে থাকে এবং উচ্চ বায়ুমণ্ডলীয় চাপ সৃষ্টি হয়।

ইউরোপ

ইউরোপে এল নিনোর সরাসরি বিধ্বংসী প্রতিক্রিয়া তেমন একটা পর্যবেক্ষিত হয় না। উত্তর ইউরোপে এল নিনো চলাকালীন সময়ে বর্ধিত আর্দ্র অবস্থা পরিলক্ষিত হয়। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ঐ সময় তুলনামূলক শুষ্ক শীতকাল পর্যবেক্ষিত হয়েছে এবং আল্পস পর্বতে দেখা যায় তুষারাবরন নিম্নতম পর্যায়ে থাকে।

দক্ষিণ আমেরিকা

দক্ষিণ আমেরিকায় এল নিনো সরাসরি ব্যাপক বিধ্বংসী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে থাকে। বজ্রঝড় এবং বর্ধিত বৃষ্টিপাত এল নিনো সংক্রান্ত সাধারণ ঘটনা।বর্ধিত বৃষ্টিপাতে পেরু ও ইকুয়েডরে ডিসেম্বর ও ফেব্রুয়ারিতে বন্যা দেখা দেয়। এল নিনো দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলে মৎস্য শিল্পের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে থাকে।


ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে প্লাঙ্কটন সমৃদ্ধ ঠান্ডা পানির স্থলে গরম পানি অনুপ্রবেশ করাতে দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলে প্রচুর মাছ মারা যায়। এছাড়াও কোন কোন প্রজাতি অন্যত্র চলে যায়। আবার গরম পানের আগমনে উপকূলের দিকে প্রচুর মৎস্য ভেসে আসাতে অতিরিক্ত মৎস্য আহরণ ও মৎসের রিজার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

উত্তর আমেরিকা

এল নিনোর ফলে উত্তর-পশ্চিম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উষ্ণতর আবহাওয়া বিরাজ করে। দেশের কোন কোন স্থানে গড় মানের তুলনায় কম তুষারপাত হয়।এছাড়াও মেক্সিকো এবং দক্ষিণ-পশ্চিম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আর্দ্রতর শীতকাল বিরাজ করে। কানাডা জেট প্রবাহ উত্তরমুখী হওয়ার কারণে উষ্ণ এবং শুষ্ক শীতকাল সৃষ্টি হয়। গ্রীষ্মকালে উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায় কানাডার বনাঞ্চলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

এছাড়া তুষার ঝড়ের ঘটনাও এল নিনোর অবদান বলে অনেকে মনে করেন।১৯৯৮ সালে দক্ষিণ ওন্টারিও ও দক্ষিণ কুইবেকে সৃষ্ট তুষার ঝড় এল নিনোর ফলাফল। যুক্তরাষ্ট্রের গ্রীষ্মকালও এল নিনোর সময়ে স্বাভাবিকের চেয়ে আর্দ্র থাকে।এল নিনোর প্রভাবে সমুদ্র তরঙ্গ সৃষ্টি হওয়ায় উপকূলভাগ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।এছাড়া ঐ সময় বর্ধিত জোয়ারও দেখা যায়। এল নিনোর সুফল হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হারিকেনের প্রকোপ কমে (এশিয়ায় ঘূর্ণিঝড় বাড়ে)।

লা নিনার জলবায়ুগত প্রতিক্রিয়া

লা নিনা-এল নিনোর বিপরীত। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে এর জলবায়ুগত প্রতিক্রিয়াগুলিও এল নিনোর বিপরীত। পশ্চিম ও পূর্ব গোলার্ধে এই দুই ঘটনা বিপরীত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

এশিয়া: লা নিনার সময় ক্রান্তীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি করে। এছাড়া সাগরে নিম্নচাপের ফলে বর্দ্ধিত বৃষ্টিপাত ও বন্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে।এছাড়া ২০০৮ সালে সাগর বক্ষে তাপমাত্রা ২°সেলসিয়াস কমে যাওয়াতে মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়াতে বৃষ্টিপাত বেড়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশে ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের বন্যা লা নিনার অবদান।

দক্ষিণ আমেরিকা: লা নিনার সময় দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলে খরার সৃষ্টি হয়।উত্তর ব্রাজিলে সাধারণ মাত্রার চেয়ে বৃষ্টিপাত বাড়ে।

উত্তর আমেরিকা: উত্তর আমেরিকার দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে গড় মানের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত দেখা যায়। ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়।কানাডার লা নিনার প্রতিক্রিয়ায় শীতের প্রকোপ বাড়ে এবং বর্ধিত তুষারপাত দেখা যায়।

সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ: ১৯৮৮-১৯৮৯ সালে শক্তিশালী লা নিনার আবির্ভাব হয়। এছাড়া ১৯৯৫,১৯৯৮-২০০০, ২০০০-২০০১, এবং সর্বশেষ ২০০৬ সালে শক্তিশালী লা নিনা দেখায়। দেখা যায় ২০০৭ সালে মধ্যম মাত্রায় লা নিনা আবির্ভূত হয় যা ২০০৮ এ যথেষ্ট শক্তি অর্জন করে যা আবার ২০০৯ এ দুর্বল হয়ে পড়ে।২০০৮ এ হারিকেন মৌসুম শক্তিশালী হওয়ার পেছনে লা নিনার অবদান ছিল সরাসরি। জুন ২০০৯ থেকে এল নিনো সৃষ্টি হয়ে ২০১০ এর মধ্যভাগ পর্যন্ত সর্বোচ্চ শক্তি অর্জন করেছে।

শেষ কথা

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে এল নিনো ও লা নিনা ভূ-চক্রের উপাদান।এই প্রপঞ্চগুলি মহাসাগর থেকে বায়ু মণ্ডলে প্রভাব বিস্তার করে পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে।মার্কিন বিজ্ঞানীদের মতে, বিগত বরফযুগ সমূহেও এল নিনো ও লা নিনার ঘটনাবলী কোথাও খরা আবার বর্ষণ সৃষ্টি করত। এক্ষেত্রে কেন এবং কিভাবে পৃথিবীর জলবায়ু দ্রুত পরিবর্তন ঘটে সেটা একটা জটিল বিষয়। আজকের আর্টিকেলে এল নিনো ও লা নিনা বলতে কি বুঝায় সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url