আমের পুষ্টিগুণ-আম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

প্রিয় পাঠক আপনারা কি জানেন আমের পুষ্টিগুণ-আম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। আর যদি না জেনে থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কারণ আজকের আর্টিকেলে অতি সুস্বাদু ও রসালো ফল আমের পুষ্টিগুণ-আম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব। তাই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার অনুরোধ রইল।
আমের পুষ্টিগুণ-আম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
আম অতি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর একটি ফল। বর্তমানে আমকে ফলের রাজা বলা হয়। বর্তমান পৃথিবীর প্রায় সর্বোত্র এর চাষাবাদ হয়। আমের পুষ্টিগুণ-আম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

ভূমিকা

মৌসুমী ফল আম শুধু গ্রীষ্মকালেই পাওয়া যায়। কাঁচা পাকা আম দিয়ে অনেক কিছু তৈরি করা যায়। কাঁচা আম মরিচ,লবণ ও কাসুন্দি দিয়ে মেখে খাওয়ার মজাই আলাদা। কাঁচা আম খেতে কিছুটা টক হলেও পাকা আম সরস ও মিষ্টি। কাঁচা আমে উচ্চ মাত্রার ভিটামিন 'এ' এবং ভিটামিন 'সি' থাকায় ফলটি আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। পুষ্টিবিদ মিস তাসনিম বলেছেন, একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ অনায়াসে দৈনিক দুটো আম খেতে পারেন।

আমের পুষ্টিগুণ

আমের পুষ্টিগুণ রয়েছে অধিক পরিমাণ। আমের পুষ্টিগুণ-আম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কম-বেশি সবাই জানে। আমের কিছু পুষ্টি উপাদান নিম্নে বর্ণিত হলো:
  • প্রোটিন,
  • পটাশিয়াম,
  • ম্যাগনেসিয়াম,
  • সোডিয়াম,
  • ক্যালসিয়াম,
  • আয়রন,
  • ফসফরাস,
  • ভিটামিন এ,
  • ভিটামিন সি,
  • ভিটামিন কে,
  • ভিটামিন ই,
  • ভিটামিন বি১,
  • ভিটামিন বি২,
  • ভিটামিন বি৬,
  • ভিটামিন বি কমপ্লেক্স,
  • বিটা ক্যারোটিন,
  • রিভোফ্লেভিন,
  • থায়ামিন,
  • ডায়েটারি ফাইবার, ইত্যাদিসহ আমে নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে।

আম খাওয়ার উপকারিতা

আমের পুষ্টিগুণ অধিক হওয়ায় এটা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। আম খাওয়ার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। আম খাওয়ার উপকারিতা তুলে ধরা হলো:
  • কাঁচা আমে রয়েছে প্রি-বায়োটিক ডায়েটরি ফাইবার নামে জরুরি উপাদান যা পাকস্থলী ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
  • আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি সিক্স বা পাইরিডক্সিনও।পাইরিডক্সিনও মানুষের মস্তিষ্কে গাবা নামের এক ধরনের হরমোন তৈরি করে, যা প্রতিরোধ করে স্ট্রোক ও মস্তিষ্কের অন্যান্য জটিল রোগ।
  • কাঁচা আমে থাকা উচ্চ মাত্রার পটাশিয়াম হৃদপিন্ডের স্পন্দন এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। তবে উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগীরা কাঁচা আম লবণ বা চিনি দিয়ে খাবেন না। কাঁচা লবণ রক্তচাপ বাড়ায় আর চিনি বা মিষ্টি রক্তের সুগার বাড়ায়।
  • মুখের ভেতরের চামড়া উঠে যাওয়া, মাড়িতে ঘা হওয়া, ঠোঁটের কোনায় ঘা কিংবা ঠোঁটের চামড়া ফেটে গেলে এই আমে থাকা ভিটামিন 'সি' খুবই কার্যকরী।
  • কাঁচা আমের থাকা ভিটামিন 'সি'ছোঁয়াচে রোগ থেকে দূরে রাখে। দাঁত, চুল ও নখ ভালো হওয়ার জন্যও এই ভিটামিন 'সি' অত্যন্ত জরুরী।
  • আমে রয়েছে প্রচুর পরিমান ভিটামিন 'বি' কমপ্লেক্স। এই ভিটামিন শরীরের স্নায়ু গুলোতে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়। আম শরীরকে সতেজ রাখে এবং আম খেলে ভালো ঘুম হয়।
  • আমের পুষ্টিগুণ অধিক এ কারণে দেখা যায় আমাদের দেহের রক্তের মধ্যে টক্সিন নামের কিছু উপাদান রয়েছে, যা দেহের রোগ তৈরি করে। কাঁচা আম এই টক্সিনকে ধ্বংস করে।
  • গর্ভবতী মায়েরা কাঁচা আম খেলে বাচ্চার মেধা ভালো হয়, জন্মের পর বাচ্চার সংক্রামক রোগগুলো তুলনামূলকভাবে কম হয়।
  • কাঁচা আমে রয়েছে মোট ১৭ রকমের অ্যামাইনো এসিড। অ্যামাইনো এসিড মানুষের পুষ্টি ও বর্ধনের জন্য ভীষণ জরুরী।
  • আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন 'এ' যা চোখের জন্য খুবই উপকারী। ভিটামিন 'এ' চোখের স্নায়ু ও মাংস পেশি শক্তিশালী করতে এর ভূমিকা অপরিহার্য।
  • কাঁচা আমের ভিটামিন 'সি' অ্যান্টি-এজিং ফ্যাক্টর হিসেবেও কাজ করে। এই অ্যান্টি-এজিং ফ্যাক্টর বার্ধক্যকে দূরে ঠেলে দেয়।
  • আমে থাকে প্রচুর পরিমাণে এনজাইম যা শরীরের প্রোটিনের অণুগুলো ভেঙে ফেলতে সাহায্য করে, এর ফলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়।
  • কাঁচা আম চর্বি কমাতে এবং ওজন হ্রাস করতে সাহায্য করে। যেকোনো কাটা ছেঁড়া বা অপারেশনের পরে এটি কাটা স্থান দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে।
  • আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ স্যালিক অ্যাসিড,সাইট্রিক অ্যাসিড ও টারটারিক অ্যাসিড যা শরীরের ক্ষার ধরে রাখতে সাহায্য করে।
  • আমে রয়েছে কপার নামের একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান যা দেহের রক্ত বাড়াতে সাহায্য করে।
  • আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। যেটা বিভিন্ন রকম ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। যেমন ধরুন প্রোস্টেট ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার, লিউকেমেনিয়া এই ধরনের সমস্যা থেকে রক্ষা করতে পারে আম।
  • আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ডায়েটারি ফাইবার,যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। আম দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখতে সহায়তা করে।
  • আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ,ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বককে করে উজ্জ্বল ও লাবণ্যময়। এছাড়াও পরমিত আম খেলে ত্বকের দাগ কমাতে এবং ত্বকের বার্ধক্য রোধ করতে সাহায্য করে।

আম খাওয়ার অপকারিতা

  • পাকা আমে প্রচুর পরিমাণ সুগার থাকে তাই আম বেশি খেলে ডায়াবেটিস রোগী জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
  • কিডনির সমস্যা যাদের আছে তাদের কম আম খাওয়া উচিত। আম খেলে কিডনির সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে।
  • আমে অধিক পরিমাণ সুগার থাকে তাই একসঙ্গে অনেক আম খেলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। এর কারণ হলো অন্যান্য খাবারের তুলনায় আমে ফাইবারের পরিমাণ কম এবং প্রাকৃতিক শর্করার পরিমাণ বেশি এবং ক্যালোরি বেশি,যার ফলে দ্রুত ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
  • যাদের অ্যালার্জি সমস্যা আছে তাদের আম কম খাওয়া উচিত। আবার যাদের অ্যাজমা রোগ আছে তারা আম খুব সামান্য পরিমাণ খাওয়া উচিত। কারণ দেখা যায় অ্যাজমা রোগীরা আম বেশি খেলে তাদের এই অ্যাজমা রোগ বেড়ে যায়।
  • আমে কিছু ক্ষতিকর উপাদান আছে যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। যেমন: ফিটোকেমিক্যাল, কম্পাউন্ড তথা গ্যালিক এসিড, কোয়ানেরটিন, ম্যাঙ্গোফেরিন এবং টেনিন বা কস জাতীয় উপাদান আর এই উপাদানগুলো শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
  • বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত আম খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে। কারণ এতে গাজনযোগ্য কার্বোহাইড্রেট রয়েছে যা ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম (আইবিএস) বাড়াতে পারে এছাড়াও পাচনতন্ত্রকে বিপর্যস্ত করতে পারে।
  • আম সঠিকভাবে না খেলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। কারণ আমে প্রচুর পরিমাণ চিনি রয়েছে যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, আমের প্রাকৃতিক চিনি ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের রোগ বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।
  • আম অনেক সুস্বাদু এর কারণে দেখা যায় অনেকেই অধিক পরিমাণ আম খেয়ে ফেলে। অতিরিক্ত আম খাওয়া ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে। আম অধিক পরিমাণ আঁশ সমৃদ্ধ ফল, যা অতিরিক্ত খেলে ডায়রিয়ার সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
  • আমের মধ্যে এক ধরনের ইউরিশিয়াল নামক রাসায়নিক উপাদান থাকে। আর এই রাসায়নিক উপাদান অনেকের জন্য শরীরের এলার্জি সমস্যা সৃষ্টি করে। এর ফলের চর্ম রোগ দেখা দেয়। এর রাসায়নিক উপাদান ত্বকের সমস্যা যেমন: ত্বক ফুলে ওঠা, ফোস্কা এবং চুলকানি হতে পারে।
  • অতিরিক্ত আম খেলে উচ্চরক্তচাপ জনিত সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। তাই যাদের উচ্চরক্তচাপ জনিত সমস্যা আছে তাদের পরিমিত আম খাওয়া উচিত।
  • ডায়রিয়া চলাকালে কাঁচা আম না খাওয়াই ভালো।

শেষ কথা

উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আম অধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হলেও সবসময় পরিমিত খাওয়া অতি জরুরী। প্রতিদিন একটি থেকে দুইটি বা তিনটি এর বেশি আম খাওয়া উচিত নয়। তবে সব সময় দুপুরের খাবারের পর আম খাওয়া ভালো, কারণ এটি হজম প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে। রাতে বেশি আম খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে, তাই রাতে পরিমাণে কম আম খাওয়া উচিত। আজকের আর্টিকেলে আমের পুষ্টিগুণ-আম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url