জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ সমূহ বর্ণনা কর

প্রিয় পাঠক আপনারা কি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কারণ আজকের আর্টিকেলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করব। আশা করি আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন।
 
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ সমূহ বর্ণনা কর
নানা কারণে পৃথিবীর জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে। আর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষের জীবন ও জীবিকার উপর নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আজকের আর্টিকেলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করব। তাই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার অনুরোধ রইল।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ

জলবায়ু গঠনের ক্ষেত্রে জলবায়ু শক্তি বা Climate যে forcings নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। জলবায়ু শক্তি বলতে বোঝায় বিকিরণ,পৃথিবীর কক্ষপথের বিচ্যুতি, পর্বত গঠন ও মহীসঞ্চারণ এবং গ্রীনহাউস গ্যাসের পরিবর্তন।এই অবস্থাগুলি প্রাথমিক জলবায়ু গঠনকারী নিয়ামকগুলোর কার্যকারিতা ত্বরান্বিত অথবা হ্রাসপ্রাপ্ত করে। বরফাচ্ছাদন ও মহাসাগরগুলি ধীরগতিতে জলবায়ু গঠনকারী শক্তির উপর প্রভাব বিস্তার করে। এক্ষেত্রে জলবায়ু বহি:শক্তির দ্বারা প্রভাবিত ও পরিবর্তিত হতে শত শত বছর বা তার অধিক সময় নিয়ে থাকে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ সমূহ

আধুনিক বিজ্ঞানীদের মতে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য নিম্নোক্ত ভূ-নৈসর্গিক অথবা মানবীয় কারণসমূহ দায়ী। নিম্নের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ গুলো বর্ণনা করা হলো:
  • প্লেট টেকটনিক,
  • সৌরশক্তি উৎপাদন,
  • কক্ষপথের বিচ্যুতি/তারতম্য/পরিবর্তনশীলতা,
  • ক্রমিক ধাক্কা ও আকস্মিক স্থানান্তর,
  • অগ্নুৎপাত,
  • মহাদেশ সমূহের স্থান পরিবর্তন,
  • মহাসাগরের পরিবর্তনশীলতা,
  • বায়ুমণ্ডলের গঠনের পরিবর্তন,
  • প্রকৃতির উপর মানুষের অসংস্কৃত হস্তক্ষেপ,

১/প্লেট টেকটনিক

লক্ষ লক্ষ বছর যাবৎ প্লেট গতির তারতম্য জনিত কারণে ভূ-ত্বক ও মহাসাগরের বিন্যাসে পরিবর্তন আসছে এবং নতুন ভূ-প্রকৃতি সৃষ্টি অথবা অবলুপ্ত হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া স্থানীয় এবং বৈশ্বিক জলবায়ুর ধরন বদলাতেও ভূমিকা রেখে চলছে। এছাড়াও মহাদেশসমূহের অবস্থান মহাসাগরগুলির জ্যামিতিক অবস্থানকে প্রভাবিত করে এবং মহাসাগরীয় স্রোতকে নিয়ন্ত্রণ করে। সমুদ্রের অবস্থান উত্তাপ ও জলীয়বাষ্প পরিবহনের নিয়ামক হিসেবে কাজ করে।

৫ মিলিয়ন বছর আগে প্লেট গতির তারতম্যে সৃষ্ট পানামা যোজক আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরকে পৃথক করা ছাড়াও উত্তর আটলান্টটিকে উপসাগরীয় স্রোত সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে যা উত্তর আটলান্টিক তিরবর্তী অঞ্চল সমূহের জলবায়ুর অন্যতম নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করছে।কার্বনিফেরাস যুগে প্লেট টেকটনিক ব্যাপক পরিসরে কার্বন সঞ্চিত করে বর্ধিত হিমবাহ সৃষ্টিতে সহায়তা করে।

২/সৌরশক্তি উৎপাদন

বিভিন্ন শতাব্দীতে সৌরতাপের কার্যকারিতার তারতম্য জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম শক্তি হিসেবে কাজ করে থাকে। সৌরকলঙ্ক (Sunspot) এবং বেরিলিয়াম আইসোটপ পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা সৌর শক্তির তারতম্য ব্যাখ্যা করে থাকেন। সূর্য পৃথিবীর শক্তির প্রধান উৎস হিসেবে কাজ করে। সৌরজগতের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি তারতম্য বৈশ্বিক জলবায়ুর ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

তিন থেকে চারশো কোটি বছর আগে সূর্য বর্তমান সময় যে তাপ প্রদান করে তার মাত্র ৭০% করত। যদি ঐ সময় বায়ুমণ্ডলের উপাদান গুলির মিশ্রণ বর্তমানের মত হতো তাহলে কোন তরল পদার্থ থাকত না।(Marts 2006,Wastan and Harrison.2005,Hegemann et.al.1994)।বিজ্ঞানীদের এই প্রকল্পকে Faint Young Sun Paradox বলা হয়ে থাকে (Sagan & Mullen 1972)।


এই স্ববিরোধী প্রকল্পের সমাধানকল্পে বলা যায়, তৎকালে বায়ুমন্ডলে গ্রিন হাউজ গ্যাসের পরিমাণ বর্তমান সময়ের তুলনায় বেশি ছিল (Sagan and Chyba 1997)।২.৪ বিলিয়ন (২শ'৪০ কোটি) বছর আগে বায়ুমন্ডলে অক্সিজেন সৃষ্টির পর সৌর শক্তির আগমন বৃদ্ধি পায় এবং এ সময় থেকে তাৎপর্যপূর্ণ জলবায়ুগত পরিবর্তন সূচিত হয়।

সৌরশক্তির আগমনে স্বল্পকালীন সময়ের জন্য তারতম্য ঘটতে পারে। ১১ বছরের সৌরচক্র এক্ষেত্রে বিবেচ্য (Wilson et.al.1991) এবং দীর্ঘসময়ে এর সামঞ্জস্য বিধান হয়ে থাকে (Wilson et.al 2003)। সৌরশক্তির নিবিড়তার তারতম্যের তাৎপর্যপূর্ণ ফলাফল হিসেবে ক্ষুদ্র বরফ যুগের উল্লেখ করা যায় (Wilson.et.al.1994) ১৯০০-১৯৫০ সালের মধ্যে কিছুটা উষ্ণায়ন পর্যবেক্ষিত হয়।

অধিকাংশ গবেষণা ১৭৫০ সাল থেকে এ পর্যন্ত সৌরশক্তির পরিবর্তনশীলতার কারণে সামান্য শীতলীকরণ প্রভাব পড়ছে বলে ইঙ্গিত দান করে। কিছু গবেষক বলেন চাক্রিক সৌর চিহ্ন কার্যাদি (Cyclical sunspot acticity) সৌর বিকিরণ বৃদ্ধি করেছে যা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সহায়তা করছে (NASA.2003)।

৩/কক্ষপথের বিচ্যুতি বা পরিবর্তনশীলতা

পৃথিবীর কক্ষপথের সামান্য পরিবর্তন বিভিন্ন ঋতুতে সূর্যালোকের তারতম্য নিশ্চিত করে। স্থানিক গড় সূর্যকিরন ও বার্ষিক গড় সূর্যকিরনের মধ্যে সামান্য পরিবর্তন থাকলেও ভৌগোলিক ও ঋতুগত বন্টনে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। পৃথিবীর কক্ষপথে তিন ধরনের পরিবর্তনশীলতা সনাক্ত করা যায়। যেমন:
  • পৃথিবীর উপকেন্দ্রিকতার পরিবর্তনশীলতা,
  • আবর্তনকালীন পৃথিবীর অক্ষের তীর্যক কোন,
  • পৃথিবীর অক্ষের পূর্বগামীতা,
এই নিয়ামক গুলি একত্রে মিলাঙ্কোভিচ চক্র (Milankovitch Cycle) সৃষ্টি করে যা'জলবায়ুর উপরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া ফেলে থাকে। বরফ যুগে ও আন্ত: বরফ যুগে এই চক্রের কার্যকর ভূমিকা উল্লেখ করার মতো। সাহারা মরুভূমির অগ্রগমন ও পশ্চাদপসরণের ক্ষেত্রেও এই চক্রের ভূমিকা ছিল।

৪/ক্রমিক ধাক্কা ও আকস্মিক স্থানান্তর

ক্রমিক জলবায়ু পরিবর্তনকে আবহাওয়াবিদরা (Gradual Push) বলে অভিহিত করেন। পরিবর্তক শক্তির ক্রমাগত ক্রিয়ার হঠাৎ জলবায়ুর পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।১৯৯৭ সালে এলনিনোর দীর্ঘস্থায়িত্বের কারণে আমাজান বেসিন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নিরক্ষীয় অরণ্যে দাবাণলে সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞে বায়ুমন্ডলে অতিমাত্রায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড সঞ্চিত হয় এবং সারাবিশ্বে দ্রুত চরম আবহাওয়া অনুভূত হয়।


আকস্মিক জলবায়ু স্থানান্তর ঘটে থাকে মহাসাগরের স্রোতচক্রের মাধ্যমে। শেষ বরফ যুগে উত্তর আটলান্টিকের স্রোতচক্র সারাবিশ্বের জলবায়ুর উপর প্রভাব ফেলেছিল (Calvin.2004)।১৯৭৬-১৯৭৭ সালে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে এ ধরনের স্থানান্তরের উদাহরণ দেওয়া যায়। ১৯৫০ সাল থেকে এলনিনোর স্থায়িত্ব ক্ষণস্থায়ী হলেও লানিনো ছিল দীর্ঘস্থায়ী।

১৯৭৭ সাল পর্যন্ত এ অবস্থা চলতে থাকে। ১৯৫০-১৯৭৬ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিক তাপমাত্রায় তেমন কোন পার্থক্য দেখা যায়নি যদিও এ সময় জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধিতে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ৩১০ থেকে ৩৩২ পিপিএম এ উন্নতি হয়।১৯৭৭ সালে আকস্মিকভাবে পৃথিবীর ভূ-ভাগের তাপমাত্রা গড়ে ২° সেলসিয়াস বেশি রেকর্ডকৃত হয়।

৫/মহাদেশ সমূহের স্থান পরিবর্তন

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ সমূহের মধ্যে অন্যতম মহাদেশ সমূহের স্থান পরিবর্তন। আধুনিক ভূবিজ্ঞানীদের মতে, ভূত্বক কতকগুলো সঞ্চরণশীল Plate পাতের সমন্বয়ে গঠিত। এ প্লেটগুলো শিলামন্ডলের নিচে অবস্থিত উত্তপ্ত এবং তরল ক্ষুদ্ধমন্ডলের উপরে ভাসমান। এরা চারিদিকের প্রবল চাপে স্থিতিস্থাপক হলেও চাপের তারতম্য ঘটলে মাঝে মাঝে গতিশীল হয়ে পড়ে।

ভূবিজ্ঞানীদের মতে, ভূপৃষ্ঠে ১১ টি প্রধান পাত এবং ২০ অপ্রধান পাতে বিভক্ত।পার্মোকার্বনিফেরাস ও প্লাইস্টোসিন হিম যুগে প্লেটগুলোর অবস্থান ও গতিবিধি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়,এ দুটি হিমযুগেই সৃষ্টি হবার জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। টারসিয়ারী যুগে মহাদেশগুলোর গড় উচ্চতা প্রায় ৩০০ মিটারের বেশি ছিল। বিশেষ করে উচ্চ অক্ষাংশ অঞ্চলে পর্বতগুলোর তুলনামূলক উচ্চতা ছিল আরো বেশি।

ফলে টারসিয়ারী যুগে উচ্চ অক্ষাংশ অঞ্চলে বায়ুর তাপমাত্রা গড়ে ২.২° সেলসিয়াস এর কম ছিল। ফলে হিমযুগ সূচিত হওয়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ভূপৃষ্ঠের ভারসাম্যজনিত কারণে বা ক্ষয়ীভবনের কারণে ভূমির উচ্চতা হ্রাস পায়। ফলে ভূখণ্ডগুলো ক্রমে নিম্ন অক্ষাংশের দিকে সরে আসার ফলে বরফ গলে যায়, অর্থাৎ হিমযুগের সমাপ্তি ঘটে।

৬/মহাসাগরের পরিবর্তনশীলতা

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ সমূহের মধ্যে মহাসাগরের পরিবর্তনশীলতা অন্যতম। কারণ মহাসাগরগুলি জলবায়ুর অন্যতম নিয়ন্ত্রক বা মৌলিক অংশ। স্বল্প মেয়াদী সামুদ্রিক প্রবাহের তারতম্য জলবায়ুর আঞ্চলিক প্রভেদ সৃষ্টি করে। দীর্ঘমেয়াদী তাপ জলীয় প্রবাহ এক অক্ষাংশ থেকে আরেক অক্ষাংশে তাপ পরিবহনের কাজ করে থাকে। উষ্ণ স্রোত বরফাচ্ছাদিত উচ্চ অক্ষাংশ বরফ মুক্ত রাখে ও বৃষ্টিপাত ঘটায় আবার শীতল স্রোত নিম্ন অক্ষাংশে শীতলতা আনায়ন করে।

৭/অগ্নুৎপাত

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ সমূহের মধ্যে অগ্নুৎপাত একটি অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অগ্নুৎপাত হলো ভূ-গর্ভ থেকে উত্তপ্ত গলিত সান্দ্র অথবা বায়বীয় পদার্থ ভূপৃষ্ঠে উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়া। সরাসরি অগ্নুৎপাত উষ্ণ প্রস্ববন বা গেইসার আগ্নেয় কর্মকাণ্ডের উদাহরণ। অগ্নুৎপাত বায়ুমন্ডলে বিভিন্ন গ্যাসীয় পদার্থ জলীয়বাষ্প,ধুলিকণা,ভস্ম ইত্যাদি নিক্ষেপ করে থাকে। অগ্নুৎপাতের সময় নিক্ষিপ্ত পদার্থের প্রায়ই ৯০% জলীয় বাষ্প।


এ কারণে ব্যাপক অগ্নুৎপাতের সময় সন্নিহিত অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। প্রতি শতাব্দীতে অগ্নুৎপাতের ফলে জলবায়ু অনেকখানি প্রভাবিত হয়। বায়ুমন্ডলের নিক্ষিপ্ত গ্যাসীয় পদার্থ ও ভস্মাদি তাপ বিকিরণে বাধার সৃষ্টি করে। ব্যাপক অগ্নুৎপাত পরবর্তী কয়েক বছর এ অবস্থা বিরাজ করে।

১৯৯১ সালে বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মাউন্ট পিনাটুবো অগ্নুৎপাত জলবায়ুর উপর তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলে।ঐ অগ্নুৎপাতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা০.৫°সে. হ্রাসপ্রাপ্ত হয় (Adams.2006)। ১৮১৫ সালে মাউন্ট টামবোরা অগ্নুৎপাতের পর একটি বছর গ্রীষ্মকাল অনুভূত হয়নি (Oppenheimer.2003)। মাঝে মধ্যে আগ্নেয়গিরি অঞ্চলসমূহ সৃষ্ট অগ্নুৎপাত ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণ হয়।

আগ্নেয়গিরি সমূহ বৈশ্বিক কার্বন চক্রে অবদান রাখে। ভূগর্ভ থেকে বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড সংযোজনেও এদের ভূমিকা আছে। তবে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে মানব কর্মকাণ্ডে নি:সৃত কার্বন-ডাই-অক্সাইড আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইডের ১৩০ গুণ অধিক (US Department of Interior.2008)

৮/বায়ুমন্ডলের গঠনের পরিবর্তন

পৃথিবী পরিবেষ্টিত বায়ুর পরিমণ্ডলকে বায়ুমণ্ডল বলা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ সমূহের মধ্যে বায়ুমণ্ডলের গঠনের পরিবর্তন অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।এ বায়ুমণ্ডলের সার্বিক অবস্থা বা উৎকর্ষ ঠিক পূর্বের অবস্থায় নেই। বায়ুমন্ডলের উপাদানের পরিমাণের পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে।এ জলবায়ু ঘটিত পরিবর্তনের পিছনে রয়েছে বায়ুমণ্ডলের দূষণ ও মানুষের অদূরদর্শী ক্রিয়াকলাপ।

যেমন,অরণ্য নিধন,আকাশ,সাগর আর ভূগর্ভে আণবিক অস্ত্রের পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ এবং জীবাশ্ম-জ্বালানির বাধাহীন ব্যবহারের ফলে বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের ঘনত্ব ক্রমশ বাড়ছে। এছাড়া দূষণ জনিত কারণে মিথেন,জলীয়বাষ্প এবং ওজন প্রভৃতি গ্যাসের ঘনত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৯/প্রকৃতির উপর মানুষের অসংস্কৃত হস্তক্ষেপ

মানুষের কার্যকলাপে বর্তমান বিশ্বে জলবায়ুর পরিবর্তন সৃষ্টি হচ্ছে। বিগত ও বর্তমান শতাব্দীতে চলমান বৈশ্বিক উন্নয়ন প্রকৃতির উপর মানুষের অসংস্কৃত হস্তক্ষেপের ফল। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানুষের কার্যকলাপ সরাসরি আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপর প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ,ব্যাপক পরিসরে সেচকার্য কোন অঞ্চলের বায়ুমণ্ডলের আর্দ্রতার উপর সরাসরি প্রভাব বিস্তার করে।


মানুষের হস্তক্ষেপে জলবায়ুর পরিবর্তন প্রসঙ্গে যুক্তি-তর্কের অবতারণা হচ্ছে। বিগত দশকসমূহের তুলনায় বর্তমানে মানুষের কর্মকাণ্ডে উষ্ণায়নের মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে (Ipcc.2007)। ফলাফল পর্যবেক্ষণ সৃষ্ট বিতর্কে অবিলম্বে উষ্ণায়ন কমানোর পন্থা নির্ধারণ এবং পরবর্তী পরিস্থিতিতে অভিযোজনের বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

মানবীয় কর্মকান্ডে সৃষ্ট ক্ষতিকর বিষয়গুলি হচ্ছে জীবাশ্ম জ্বালানির যথেষ্ট ব্যবহারের ফলে বায়ুমন্ডলে অতিমাত্রায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড সংযোজন, সি.এফ.সি., মিথেন ও সালফার ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ ইত্যাদি। এছাড়া নির্বনায়নও উষ্ণায়নের ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। এছাড়া উপরোক্ত বিষয়গুলি পৃথকভাবে অথবা সম্মিলিতভাবে জলবায়ু ক্ষুদ্রায়তন জলবায়ু অথবা জলবায়ুর নিয়ামক সমূহের উপর প্রভাব বিস্তার করছে।

শেষ কথা

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের একটি অংশ হিসেবে বাংলাদেশেও জলবায়ু পরিবর্তন সংঘটিত হতে পারে। কিছু কিছু বিশেষজ্ঞের মতে,বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রার বৃদ্ধি একই সঙ্গে ইতিবাচক ও নেতিবাচক পরিণতি বয়ে আনবে-কোন কোন অঞ্চলের জন্য তা হবে ধ্বংসাত্মক, আবার অন্যান্য অঞ্চলের জন্য তা উপকারী হয়ে দেখা দেবে। আজকের আর্টিকেলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url