তিসি বীজের পুষ্টিগুণ-তিসি বীজ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

তিসি বীজের পুষ্টিগুণ-তিসি বীজ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের সঠিক তথ্য জানা আছে কি? বর্তমান সময়ে তিসি বীজ অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খাবার যা সুপারফুড হিসেবে পরিচিত। তিসি বীজের পুষ্টিগুণ আমাদের শরীরের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় তিসি বীজের পুষ্টিগুণ-তিসি বীজ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং তিসি বীজ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অবগত হওয়া।

তিসি বীজের পুষ্টিগুণ-তিসি বীজ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

তিসি বীজের পুষ্টিগুণ-তিসি বীজ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য টি পেতে হলে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়বেন। তো চলুন তিসি বীজ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

ভূমিকা

বর্তমানে তিসি বীজ বা ফ্ল্যাক্সসিড সুপার ফুড হিসেবে পরিচিত। কারন এই তিসি বীজে রয়েছে অসংখ্য পুষ্টিগুণ যা আমাদের শরীলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। সর্ব প্রথম তিসি বীজ মিশরে পাওয়া যেতো । এর পর চীনে চাষ হয়। পরবর্তীতে তিসি বীজের গুনগত মান দেখে সারা বিশ্বে তিসির চাষ হয়। আমাদের দেশে তিসি শস্য হিসেবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে চাষ হয়ে থাকে।


বর্তমান সময়ে তিসি বীজের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে অবগত হওয়ায় এর চাহিদা এবং ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে।এই বীজ বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যায়। তবে অবশ্যই এই বীজ টি হালকা তাপে ভেজে নিতে হবে এবং গুড়া করে নিলে ভালো হয়। এই বীজ বিভিন্ন ধরনের খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। সব চেয়ে ভালো হয় প্রতিদিন সকালে ১ চা চামচ তিসির গুড়া হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে খেলে।

তিসি বীজের পুষ্টিগুণ

তিসি বীজের পুষ্টিগুণ রয়েছে অসংখ্য। বর্তমানে তিসি বীজের পুষ্টিগুণ শুনলে যে কোন মানুষ বিস্মিত হয়ে যাবে।তিসি বীজের পুষ্টিগুণ অধিক থাকার কারণে পুষ্টিবিদরা একে সুপার ফুড নামে আখ্যায়িত করেন। নিম্নে তিসি বীজের কয়েকটি পুষ্টিগুণ যথা ক্রমে দেওয়া হলঃ
  • ফাইবার,
  • প্রোটিন,
  • অ্যমিনো অ্যাসিড,
  • অ্যান্টি অক্সিডেন,
  • লিগন্যানস,
  • ক্যালোরি,
  • কার্বহাইড্রেট,
  • ফ্যাট,
  • উচ্চমানের আমিষ,
  • ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রভৃতি রয়েছে।
এছাড়াও তিসি বীজে রয়েছে ভিটামিন ও মিনারেল যেমনঃ
  • ক্যালসিয়াম,
  • কপার,
  • আয়রন,
  • ম্যাঙ্গানিজ,
  • ম্যাগনেসিয়াম,
  • সিলোনিয়াম,
  • সোডিয়াম,
  • ভিটামিন C
  • ফসফরাস,
  • ভিটামিন E,
  • জিংক, ভিটামিন K,B6
উপরোক্ত পুষ্টিগুণ ছাড়াও তিসি বীজের পুষ্টিগুণ উপাদান রয়েছে অসংখ্য পরিমান।

তিসি বীজের উপকারিতা

তিসি বীজের উপকারিতা অপরিসীম। তিসি বীজের পুষ্টিগুণ উপাদানে ভরপুর এই বীজ টি শরীরে নানা উপকার সাধন করে থাকে। তিসি বীজের কিছু উপকারিতা তুলে ধরা হলো।
  • উচ্চরক্ত চাপ কমায়,
  • হজম ক্ষমতা বাড়ায়
  • খারাপ কোলেস্টোরর কমায়,
  • কোষ্টকাটিন্যতা দূর করে,
  • ক্যানসারের ঝুকি কমায়,
  • স্ট্রোক বা হৃদ রোগ প্রতিরোধ করে,
  • ওজন নিয়ন্ত্রন রাখতে সাহায্য করে,
  • ব্রেনের কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে,
  • দৃষ্টি শক্তির উন্নতি ঘটায়,
  • লিভারের কর্ম ক্ষমতা বেড়ে যায়,
  • কোলন,প্রসটেট,স্তনের ক্যানসার রোদ করে,
  • তিসির অ্যান্টি অ্যান্জিওজেনিক উপাদান শরীরে টিউমার হতে বাধা দেয়,
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে তিসির উপকারিতা অপরিসীম।
  • টাইপ-২ ডাইবেটিস নিয়ন্ত্রন করে,
  • কৃমি নাশকের জন্য অধিক কার্যকর,
  • অটো ইমিউন রোগ প্রতিরোধ করতে অনেকটা সক্ষম,
  • হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
  • চুল ও ত্বক সুন্দর করে।
তিসি বীজের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবেনা। শরীরের বিভিন্ন উপকারিতা পেতে হলে নিয়মিত এবং পরিমিত পরিমাণ তিসি বীজ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

তিসি বীজের অপকারিতা

তিসি বীজ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা উভয় রয়েছে। তবে অতি মাত্রায় তিসি বীজ খাওয়া যাবে না। প্রতিদিন ৩থেকে ৪ চা চামচ এর বেশি তিসি বীজের গুড়া খাওয়া উচিত না। অধিক পরিমান তিসি বীজ সেবন করলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।


অতি মাত্রায় তিসি বীজ খেলে দেখা যায় ডায়রিয়া, অ্যালার্জি, ব্লাড প্রেসার বিপদ সীমার নিচে নেমে যেতে পারে,আবার দেখা যায় তল পেটে ব্যাথা,মাথা ঘুরানো, বারে বারে বমি হওয়া, আরেকটি বিষয় জানা প্রয়োজন গর্ভবতী মায়েদের এবং ছোট বাচ্চাদের জন্য এই প্রাকৃতিক খাবার টি গ্রহন করতে নিষেধ করেন চিকিৎসকরাহ।

কারন এতে আছে অ্যান্টি-মাইক্রোবাল উপাদান যা গর্ভবতী মা ও শিশুদের জন্য ক্ষতি কারক। তাই অবশ্যই তিসি বীজ সঠিক মাত্রায় খাওয়া উচিত।

তিসি বীজ খাওয়ার নিয়ম

তিসি বীজ খাওয়ার নিয়ম অতি সহজ।তিসি বীজ বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যায়। তবে অবশ্যই এই বীজ টি হালকা তাপে ভেজে নিতে হবে এবং গুড়া করে নিলে ভালো হয়। এই বীজ কখনো কাঁচা খাওয়া উচিত না। কাঁচা তিসি বীজ খেলে ক্ষতি হতে পারে। এ বীজ বিভিন্ন ধরনের খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়।


সব চেয়ে ভালো হয় প্রতিদিন সকালে ১ থেকে 2 চা চামচ তিসির গুড়া হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে খেলে। এছাড়া তিসির গুড়া ওটস , পুডিং, জুস, ইত্যাদির সঙ্গে মিশিয়ে নেওয়া যায়। কেউ চাইলে টক দই, সিরিয়াল রান্না করার সবজি বা সালাতের উপরে ছরিয়ে খেতে পারেন। তিসি বীজ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সঠিক ধারনা থাকা অতি জরুরী।

শেষ কথা

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে এই আর্টিকেলে আমরা তিসি বীজের পুষ্টিগুণ-তিসি বীজ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং তিসি বীজ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন।

তিসি বীজের পুষ্টিগুণ অধিক পরিমান। এর বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। তিসিতে থাকা কিছু এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে অনেক সাহায্য করে। তাই আমরা যদি নিয়মিত অল্প পরিমাণ তিসি বীজ খায় তাহলে খুব বেশি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে না। খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url