শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল স্থাপত্যের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বমানের বিমানবন্দরের যুগে পদার্পণ করল। আর এই তৃতীয় টার্মিনালটি ছিল সরকারের একটি মেগা প্রকল্প। আজকের আর্টিকেলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করব।
আজকের আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল এর সার্বিক বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন। সুতরাং আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার অনুরোধ রইল।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর
বিশ্বমানের বিমানবন্দরের যুগে বাংলাদেশ পদার্পণ করল।৭ অক্টোবর ২০২৩ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ টার্মিনাল বিশ্বমানের যাত্রী সেবা এবং নিরাপত্তা প্রদানের লক্ষ্যে দেশের বিমান চলাচল খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।
এই তৃতীয় টার্মিনালের ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।সুতরাং এবার বাংলাদেশের বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থায় আরও একধাপ এগিয়ে যাবে। এ টার্মিনালে থাকছে বিশ্বমানের অত্যাধুনিক সব ব্যবস্থা। টার্মিনালটি চালু হওয়ার পর বিমানবন্দরের বাড়বে যাত্রী সংখ্যা এবং বাড়বে উড়োজাহাজ।
বিমানবন্দর টিতে থাকছে অত্যাধুনিক সব অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা। আমদানি ও রপ্তানির জন্য থাকছে আলাদা কার্গো কমপ্লেক্স। এছাড়াও যাত্রীদের জন্য থাকছে মেট্রোরেলের সুবিধা। সেই সাথে থাকছে ৩৭ টি বিমান পার্কিংয়ের ব্যবস্থা।
৭ অক্টোবর ২০২৩ স্বপ্নের এই মহা প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যার মধ্য দিয়ে দেশেরে এভিয়েশন সেক্টর কে এগিয়ে নিয়ে যেতে একটি বড় ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তৃতীয় টার্মিনালের প্রসারতা
বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বিমানবন্দর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বর্তমানে দুইটি টার্মিনাল রয়েছে। এই দুটি টার্মিনাল ১ লাখ বর্গমিটার জায়গার উপর প্রসারিত।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের( বেবিচক) তথ্য অনুযায়ী, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এখন প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৩০ টি বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ করে। ১৯ থেকে ২১ হাজার যাত্রী প্রতিদিন বিমানবন্দর দুটি টার্মিনাল ব্যবহার করে।
এখানে বর্তমানে বছরে প্রায় ৮০লাখ যাত্রী সেবা গ্রহণ করে থাকে। বর্তমানে তৃতীয় টার্মিনালটি নির্মিত হচ্ছে ঐ দুটি টার্মিনালের চেয়ে দ্বিগুণ বড়। আর এই তৃতীয় টার্মিনালটি ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার এলাকা জুড়ে প্রসারিত।
তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে আরো ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রী কে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে বলে কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন। এ টার্মিনালে থাকছে বিশ্বমানের অত্যাধুনিক সব ব্যবস্থা। সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন ও ক্যালিবারেশন সম্পন্ন হওয়ার পর তৃতীয় টার্মিনালটি আগামী বছরের শেষের দিকে যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য সম্পূর্ণভাবে চালু হবে বলে আশা করা যায়।
তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণে আওয়ামী লীগের অবদান
আওয়ামীলীগ দেশের অবকাঠামো ব্যাপক উন্নয়ন প্রসারিত করছে। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আওয়ামীলীগ রাস্তা মহাসড়ক, রেলপথ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রসারণ করেছে।
বাংলাদেশের অন্যতম শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল এর কাজ প্রায় ৯০% শেষ হয়েছে। এটা বাংলাদেশের একটা অন্যতম মেগা প্রকল্প। বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) জানান, এই মেগা প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে যাত্রী সেবার মানের আমূল পরিবর্তন আসবে।
তৃতীয় টার্মিনালের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) তথ্য অনুযায়ী শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। এই টার্মিনালে ১১৫টি চেক- ইন কাউন্টার থাকবে এবং টার্মিনালটিতে ৩৭ টি বিমান পার্কিং ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি পার্কিং এপ্রোন থাকবে।
এছাড়াও আমদানি ও রপ্তানির জন্য থাকবে আলাদা কার্গো কমপ্লেক্স। তিনতলা এ টার্মিনানের আয়তন ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার। এতে আছে ৬৪ টি ডিপারচার ও ৬৪ টি অ্যরাইভাল ইমিগ্রেশন ডেক্স, ২৭ টি ব্যাগেজ স্ক্যানিং মেশিন, ৪০ টি স্ক্যানিং মেশিন, ১১ টি বডি স্ক্যানার ও ১৬ টি ক্যারোসেল এবং ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ রয়েছে।
তৃতীয় টার্মিনালটিতে অত্যন্ত পরিসীলিত মেঝে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলোসহ নজর কারা সিলিং এ সজ্জিত করা হয়েছে। এছাড়া তৃতীয় টার্মিনালটিতে আগামী বছরের মধ্যে ডাবল এন্ট্রি ব্রিজ, বারটি বোডিং গেট এবং ১৪টি বোর্ডিং ব্রিজ পরবর্তীতে স্থাপন করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তৃতীয় টার্মিনালটি একটি মাল্টিমোডাল পরিবহন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে যাত্রীরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবেশ ও প্রস্থান করতে সক্ষম হয়।
নতুন টার্মিনালটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ভূগর্ভস্থ রেলপথ (এমআরটি ৫, কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর অংশ) ও একটি ভূগর্ভস্থ টানেলের মাধ্যমে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনের সঙ্গে সংযুক্ত হবে।
এছাড়াও হজ যাত্রীরা আশকোনা হজ ক্যাম্প থেকে আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যানেলের মাধ্যমে তৃতীয় টার্মিনালে যেতে পারবেন।সিভিল অ্যভিয়েশনের চেয়ারম্যান বলেন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল টি এরই মধ্যে রানওয়ে সঙ্গে সংযোগ দেয়া হয়েছে।
এছাড়াও অটোমেটিক রোবোটিক সমৃদ্ধ কার্গো টার্মিনাল করা হয়েছে। পাশাপাশি যাতায়াত ব্যবস্থা অতি সহজ করতে মাল্টিপল-ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও হজ ক্যাম্প থেকে সরাসরি টানেল নির্মাণে সেনাবাহিনী কে কাজ দেওয়া হয়েছে।
সফট ওপেনিংয়ের পর বাকি ১০% কাজের মধ্যে সব ইন্টেরিয়র কাজ। এখানে এক হাজার ২৩০টি গাড়ি একসঙ্গে পার্কিং করতে পারবে। বর্তমান এই সরকারের একটি বড় অর্জন হচ্ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের টার্মিনাল এর উন্নয়ন মূলক কাজ।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল এর কাজটি সম্পন্ন হলে এখানে প্রায় ১ হাজার ২৩০টি গাড়ি একসঙ্গে পার্কিং করতে পারবে। এছাড়াও এ তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শেষ হলে যাতায়াত বিমানের ভাড়া কমে আসবে।
অর্থের জোগান
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয় ২০১৭ সালে এবং এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ২০২৪ সালের এপ্রিলে। এ প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে ২৮শে ডিসেম্বর।
এই প্রকল্পটি নির্মাণ কাজ করছে জাপানের মিতসুবিসি ও সুজাতা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং কোম্পানি। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা। জাপানি সহযোগিতা সংস্থা জায়কা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। বাকি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল অর্থনৈতিক গুরুত্ব অধিক। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই টার্মিনাল দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়নের মাধ্যমে বিপুল বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করবে।
ফলের সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান এবং চাঙ্গা হবে জাতীয় অর্থনীতি। এ আধুনিকায়ন টার্মিনাল হওয়ার ফলে বিমানবন্দরে যাত্রী সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। ফলে সিভিল এভিয়েশনের রাজস্ব বহুগুণে বাড়বে। এছাড়াও অর্থনীতিবিদরা মনে করেন শিল্প খাতের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এছাড়াও (বেবিচকের) কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশী যাত্রীদের আকৃষ্ট করতে এবং পর্যটন ও ব্যবসায়িক গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশ একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে পারবে। সুতরাং এইসব উন্নত সুযোগ-সুবিধা অত্যন্ত জরুরী।
শেষ কথা
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে বাংলাদেশের শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল টির অনেক প্রয়োজন ছিল। নতুন এই তৃতীয় টার্মিনালের স্থাপত্যের মাধ্যমে মূলত বাংলাদেশ সনাতনের ধারা বিমানবন্দর পরিসেবা থেকে বেরিয়ে আধুনিক বিমানবন্দর যুগে প্রবেশ করল। আজকের আর্টিকেলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন।