সজনে পাতার পুষ্টিগুণ-সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
সজনে পাতার পুষ্টিগুণ রয়েছে অধিক পরিমাণ।বর্তমানে পুষ্টিবিজ্ঞানীরা সজনে পাতাকে সুপার ফুড নামে অভিহিত করেন। বর্তমান সময়ে এটা বিজ্ঞানীদের একটি আলোড়ন সৃষ্টিকারী একটি গবেষণা। সজনে পাতায় এত পরিমান পুষ্টিগুণ আছে যা যেকোনো মানুষকে বিস্মিত করবে। আপনারা কি জানেন সজনে পাতার পুষ্টিগুণ-সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। আর যদি না জেনে থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেলে আপনাদেরকে সজনে পাতার পুষ্টিগুণ-সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং সজনে পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হলো।
আজকের আর্টিকেলে সজনে পাতার পুষ্টিগুণ-সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং সজনে পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরন তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তাই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার অনুরোধ রইল।
ভূমিকা
বর্তমানে পুষ্টিবিজ্ঞানীরা সজনে পাতাকে সুপার ফুড নামে অভিহিত করেন। বর্তমান সময়ে এটা বিজ্ঞানীদের একটি আলোড়ন সৃষ্টিকারী একটি গবেষণা। সজনে পাতায় এত পরিমান পুষ্টিগুণ আছে যা যেকোনো মানুষকে বিস্মিত করবে।
সজনে পাতার পুষ্টিগুণ অধিক থাকার কারনে বিজ্ঞানীরা এখন বলছেন যে এ সময়ের একটি অলৌকিক পাতা সজনে পাতা। সজিনা বা সজনে গাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম হল মরিঙ্গা অলিফেরা (moringa oleifera)।বর্তমানে পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে ৩০০ রোগের প্রতিশোধক সজিনা পাতার গুড়া।
সজনে পাতার পুষ্টিগুণ
সজনে পাতার পুষ্টিগুণ রয়েছে অসংখ্য।পুষ্টিবিদদের মতে সজনে পাতায় দুধের তুলনায় চার গুণ বেশি ক্যালসিয়াম এবং দুই গুণ বেশি আমিষ রয়েছে। গাজরের তুলনায় চার গুণ বেশি ভিটামিন এ পাওয়া যায়। কলার চেয়ে তিনগুণ বেশি পরিমাণ পটাশিয়াম বিদ্যমান রয়েছে। এছাড়াও সজনে পাতায় কমলালেবুর তুলনায় সাত গুণ বেশি ভিটামিন সি রয়েছে। তাই সজনে পাতার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে কিছুটা তুলে ধরা হলঃ
- ক্যালোরি,
- প্রোটিন,
- ফ্যাট,
- ফাইবার,
- মিনারেল,
- কার্বোহাইড্রেট,
এছাড়াও সজিনা পাতায় রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অ্যাসেনসিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিড যেমনঃ
- ভিটামিন এ,
- ভিটামিন সি,
- ভিটামিন বি6,
- ক্যালসিয়াম,
- ম্যাগনেসিয়াম,
- পটাশিয়াম,
- ফসফরাস,
- সালফার,
- কপার,
- জিংক,
- আইরন,
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট,
- অক্সালিক এসিড, প্রভৃতি।
- সাবনিনস,
- স্টোরোল,
- টারপেনয়েডস,
- ফ্লাভোনইডস,
- অ্যালকালয়েডস,
- অন্থারাকুইনোনস, প্রভৃতি।
সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা
পুষ্টিবিদদের মতে সজনে পাতায় রয়েছে অসংখ্য উপকারিতা। এই পাতায় রয়েছে প্রায় ৩০০ রোগের প্রতিশোধক। সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা তুলে ধরা হলো।
আরো পড়ুনঃ চিয়া সিড এর পুষ্টিগুণ-খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
- সজনে পাতায় ক্যালসিয়াম এর পরিমাণ প্রায়125% যা দুধের তুলনায় প্রায় চার গুণ বেশি । আর এ ক্যালসিয়াম আমাদের হার ও দাঁত মজবুত করে এবং হাঁটুর জয়েন্ট এর ব্যাথা কমায়।
- সজনে পাতা দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে। কারন এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন ও ফাইবার। আর প্রোটিন এবং ফাইবার গ্রহণ করলে পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকে ফলে খাদ্য গ্রহণের প্রবণতা কমিয়ে আনে যার দরুন দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- সজনে পাতায় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে যা প্রায় কমলা লেবুর চেয়ে ৭ গুণ বেশি। ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং জ্বর, সর্দি, কাশি জনিত সমস্যা দূর করে।
- সজনে পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এন্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এটির শরীরের মেটাবলিজম সিস্টেমকে উন্নত করে। এছাড়া ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ও চুল নখ সুন্দর রাখতে এবং ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে।এছাড়াও এটি ভিটামিন সি ও এর অভাবজনিত ক্ষতি থেকে আমাদের বাঁচায়।
- সজনে পাতা রক্তের সুগারের পরিমাণ স্বাভাবিক রাখে যার ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
- সজনে পাতায় প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকায় এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- সজনে পাতায় প্রচুর পরিমাণ আয়রন রয়েছে যার ফলে এটি শরীরের রক্তস্বল্পতার ঘাটতি পূরণ করে।
- সজনে পাতায় কলার চেয়ে তিনগুন পরিমাণ পটাশিয়াম রয়েছে। যার ফলে এটা শরীরের স্বাভাবিক রক্তচাপ বজায় রাখতে স্নায়ু ও পেশির কর্মক্ষমতা সঠিক রাখতে এবং কোষের পুষ্টি পরিবহন করতে সহায়তা করে।
- সজনে পাতা শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বা টক্সিন বের করতে সাহায্য করে।
- সজনে পাতা হজমে সহায়তা করে এবং এসিডিটি সমস্যা দূর করে। নিয়মিত সজনে পাতা খেলে মুখে রুচি বাড়ে।
- সজনে পাতা মস্তিষ্কের স্ট্রেস এবং প্রদাহ নিরাময় করতে পারে।
- সজনে পাতায় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ রয়েছে। আমরা সবাই প্রায়ই জানি ভিটামিন এ চোখের জন্য অনেক ভালো। ভিটামিন এ রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।তাই প্রতিদিন নিয়মিত দুই থেকে চার টেবিল চামচ সজনে পাতার গুড়া খেলে ভিটামিন এ এর ঘাটতি পূরণ হবে বলে মনে করেন পুষ্টিবিদরা।
- দৈনিক ৬চা চামচ সজনে পাতার গুড়া একটি গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মায়ের চাহিদার সবটুকু ক্যালসিয়াম ও আয়রন সরবরাহ করতে সক্ষম।
- সজিনা পাতা, বহুমূত্র রোগের জন্য অনেক উপকারী।
- এলার্জিজনিত সমস্যা দেখা দিলে সজনের পাতা বেটে আক্রান্ত স্থানে প্রলেপ দিলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
- পুষ্টিবিদদের মতে সজিনা পাতা কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করে। কৃমি সমস্যা হলে সজনার পাতা গুড়া করে অথবা অন্য খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়ালে ভালো হয়।
- সজনে পাতায় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে বলে শরীরে বয়সের ছাপ সহজে পড়ে না।এবং ত্বক ও চুল সুন্দর রাখে।
- সজিনা পাতা গর্ভবস্থায় মায়ের শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এবং মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি করে কোন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়া।
- শরীরের কোন স্থানে পোকা কামড় দিলে সেই ক্ষতস্থানে সজনার পাতার প্রলেপ দিলে তাৎক্ষণিক ভাবে অ্যান্টিসেপটিক হিসাবে অনেক ভালো কাজ করে।
- শরীরের কোন স্থানে ব্যথা হলে সেই স্থানে সজিনা পাতার প্রলেপ দিলে ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- লিভার ও কিডনি সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- শরীরে কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে সজিনা পাতা।
- সজিনা পাতা ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। তাই প্রতিদিন পরিমান মতো এই পাতা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
সজনে পাতা খাওয়ার নিয়ম
সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা উভয় রয়েছে। তাই এ পাতা পরিমাণ মতো খাওয়া উচিত।সজনে পাতা খাওয়ার নিয়ম অতি সহজ।সজনে পাতা বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যায়। সজনে পাতা শাক হিসাবে, ভাজি করে ,ভর্তা ,বড়া, সালাত উপর ছড়িয়ে আবার রান্না কর।
তরকারির উপর ছিটিয়ে দিয়েও খাওয়া যায়।
সবচেয়ে ভালো হয় সজনে পাতা ভালো করে পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। এরপর এই পাতা রোদে শুকিয়ে নিন। পরবর্তীতে এই শুকনো পাতা ব্লেন্ডারে অথবা হাত দিয়েও আপনি গুড়া করে নিতে পারেন। এই গুড়া পাতা আপনি ছয় মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে পারবেন। প্রতিদিন এক থেকে দুই চা চামচ সজনে পাতার গুড়া খেতে পারলে সারা দিনের নানা পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে। ৬ মাস যদি কেউ এই পাতার গুড়া খেতে পারে তাহলে সে অনেক স্ট্রং ও কর্মক্ষম হয়ে উঠবে।
সজনে পাতা দুধের সাথে অথবা কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে খাওয়া যায়। সজিনা পাতা জুস করে মধু দিয়ে মিশিয়ে খেতে পারেন। চা বা কফি তৈরিতে সজনে পাতার পাউডার ব্যবহার করা যায়।
সজনে পাতা খাওয়ার অপকারিতা
সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা উভয় রয়েছে।আমরা সজনে পাতার অনেক উপকারিতা সম্পর্কে জানলাম এবার জানব এর অপকারিতা সম্পর্কে। সজনে পাতার পুষ্টিগুণ অধিক পরিমাণ। এর কারনে বেশি পরিমাণ খেলে দেখা দিতে পারে নানা সমস্যা যেমনঃ ডায়রিয়া, বদহজম, বারে বারে বমি, মাথা ঘোরানো, ব্লাড প্রেসার বিপদসীমার নিচে নেমে যেতে পারে। এছাড়াও রক্তের সুগার লেভেল অতিমাত্রায় কমিয়ে দিয়ে ডায়াবেটিস রোগীদের বিপাকে ফেলতে পারে।
আরো পড়ুনঃ ডিমের পুষ্টিগুণ-ডিম খাওয়ার উপকারিতা
পূর্ণবয়স্কদের ক্ষেত্রে সজনে পাতার গুড়া দুই থেকে চার চা চামচ এবং বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এক থেকে দুই টেবিল চামচ এর বেশি সজনে পাতার গুড়া খাওয়া উচিত না। তবে আরেকটি বিষয় জানা প্রয়োজন বাচ্চাদের এবং প্রেগন্যান্ট মহিলাদের এই প্রাকৃতিক খাবারটি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া উচিত। কারণ অনেকের শরীরে সজনে পাতার গুড়া তে এলার্জি বাড়তে পারে।
শেষ কথা
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে আজকে এই পোষ্টের মাধ্যমে আমরা সজনে পাতার পুষ্টিগুণ-সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং সজনে পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন। সজনে ডাটা এবং পাতা আমাদের শরীরের জন্য খুব ভালো।
কিন্তু সজনে পাতার সাথে সংলগ্ন ডালগুলো আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।কারণ এতে বেশ কিছু ধরনের ক্ষতিকর উপাদান থাকে যেগুলো আমাদের দেহের ইমিউনিটি সিস্টেমের বিশাল ক্ষতি করতে পারে। তাই আমাদের সকলের উচিত সজনে পাতা খাওয়ার সময় পাতার সাথে সংলগ্ন ডালটি পরিহার করা। তাই পরিমিত পরিমাণ সজনে পাতার গুঁড়ো খাওয়া অভ্যাস করা উচিত।