রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র- বাংলাদেশ

বর্তমান বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সবচেয়ে বড় একটি মেগা প্রজেক্ট। আপনারা কি জানেন রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্পর্কে। আর যদি না জেনে থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কেননা আজকের আর্টিকেলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করব।

রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র- বাংলাদেশ

আর্টিকেলটি পড়লে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র- বাংলাদেশ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন। তাই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার অনুরোধ রইল।

ভূমিকা

বাংলাদেশের পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুর নামক স্থানে নির্মিত হচ্ছে শক্তিধর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এটা বাংলাদেশের প্রথম রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এই রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ২.৪ গিগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন একটি শক্তি শালী বিদ্যুৎ কেন্দ্র। বাংলাদেশের রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রাথমিকভাবে ১ লক্ষ ১৩ হাজার ৯২কোটি ৯১ লক্ষ টাকা নির্মাণ ব্যায় খরচ ধরা হয়েছে।


সরকারের মতে এই প্রকল্প পরিবেশবান্ধব এবং আর্থিকভাবে লাভজনক।বাংলাদেশের এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের মেয়াদ জুলাই ২০১৬ থেকে ডিসেম্বর ২০২৫। রাশিয়ার বিখ্যাত রোসাটোম স্টেট অ্যাটমিক এনার্জি কর্পোরেশন কর্তৃক নির্মিত হচ্ছে বাংলাদেশের এই বিশাল রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র টি।

রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অবস্থান

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে ২০০ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে এবং পাবনা ঈশ্বরদী উপজেলার পদ্মা নদীর তীরবর্তী পাকশী ইউনিয়নের রূপপুর গ্রামে রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র টি নির্মিত হয়। স্বাধীনতার পূর্ব ১৯৬১ সালে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ১৯৬২ সালে প্রস্তাবিত ১২ টি এলাকার মধ্য থেকে বেছে নেওয়া হয় রুপপুর এলাকাটি।

প্রকল্পটি পদ্মা নদীর পাশে নির্মিত অর্থাৎ হার্ডিঞ্জ ব্রীজ ও লালন সেতুর পাশে নদীর তীরে অবস্থিত। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ২৬০ একর এবং আবাসিক এলাকার জন্য ৩২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয় এবং ক্ষতিগ্রস্ত জনগণকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় এবং নিকটবর্তী এলাকায় পুনর্বাসিত করা হয়। কিন্তু পাকিস্তানি গোষ্ঠীর বৈষম্য মূলক আচরণের জন্য তা আমাদের অধরাই থেকে যায়।

রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইতিহাস

সর্বপ্রথম ১৯৬১ সালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র টি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ১৯৬২ সালে পাবনা জেলার ঈশ্বরদী থানার পদ্মা নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকার রূপপুরকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্থান হিসেবে নির্বাচন করা হয়।

এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ২৬০ একর এবং আবাসিক এলাকার জন্য ৩২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ভূমি উন্নয়ন, অফিস, সাব- স্টেশন, রেস্ট হাউস, আবাসিক ইউনিটের নির্মাণ কাজ কিছুটা সম্পন্ন করা হয়।

১৯৬৯-১৯৭০ সালে পাকিস্তান সরকার এ প্রকল্পটি বাতিল করে দেয়। ১৯৭২-১৯৭৫ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২০০ মেগা ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ডঃ এম এ ওয়াজেদ মিয়াকে প্রস্তাবিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিচালকের দায়িত্ব দিয়েছিলেন জাতির পিতা। সে অনুযায়ী কিছু কাজও হয়েছিল।কিন্তু দুর্ভাগ্য ক্রমে ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট ঘাতকের দল রাতে পিতা সহ সপরিবারে হত্যা করার পর এই রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র টির সকল উন্নয়নমূলক কাজ থেমে যায়।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাস্তবায়নে অঙ্গীকার বদ্ধ হয়। ২০০৯ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে অপরিহার্য কার্যাবলী সম্পাদন করা হয়।একুশে মে ২০১০ তারিখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এবং রাসান ফেডারেশন সরকারের মধ্যে পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার বিষয়ক Framework Agreement স্বাক্ষরিত হয়।

১০ নভেম্বর ২০১০ তারিখে জাতীয় সংসদে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সিদ্ধান্ত প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। ২০১৩ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাশান ফেডারেশন সফর কালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র টির কার্যাদি সম্পাদনের জন্য State Export Credit চুক্তি স্বাক্ষরিত করেন।

২ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রথম পর্যায়ে কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।

২০১৬ সালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র মূল পর্যায়ের কার্যাবলী সম্পাদনের জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং রাসান ফেডারেশন সরকারের মধ্যে স্টেট ক্রেডিট চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি কি?

রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান জ্বালানি ইউরেনিয়াম। এই কেন্দ্রের একেকটি ইউনিটে ১৬৩ টি ফুয়েল অ্যাসেম্বলি লোড করা হবে। ২টি চুল্লিতে ৩২৬ টি ফুয়েল অ্যাসেম্বলিতে থাকবে ৮০ টন ইউরেনিয়াম জ্বালানি। চুক্তি হিসেবে প্রথম তিন বছরের জ্বালানি রাশিয়া থেকে আসবে। পরবর্তীতে প্রতি ১৮ মাস পরপর এক-তৃতীয়াংশ ফুয়েল অ্যাসেম্বলি বদলানো হবে।

রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ কত বছর?

একক প্রকল্প হিসেবে এটা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কোন অবকাঠামো স্থাপন প্রকল্প। সরকারের মতে এই প্রকল্প পরিবেশবান্ধব এবং আর্থিকভাবে লাভজনক। বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করার পর এর স্থায়িত্ব হবে প্রায় ১০০ বছর।

রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র কত মেগাওয়াট?

রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইউনিট রয়েছে দুইটি।আর এই কেন্দ্রের দুটি ইউনিটের ২৪০০ মেগা ওয়ার্ড বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নির্মাণে প্রাথমিকভাবে ১ লক্ষ ১৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচ ধরা হয়েছে।একক প্রকল্প হিসাবে এটা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ২৫ হাজার শ্রমিক দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে।

রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হবে কবে?

রাশিয়ার কারিগরি প্রযুক্তি এবং অর্থ সহায়তায় নির্মাণাধীন এই প্রকল্পের কোন অনুষ্ঠানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২০২৩ সালে মধ্যে প্রথম ইউনিট থেকে এবং ২০২৪ সালের মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করার কথা জানান।

কিন্তু পরবর্তীতে ৫ অক্টোবর ২০২৩ প্রথম তেজস্ক্রিয় জ্বালানি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ভার্চুয়ালি ভাবে যুক্ত হয়ে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ২০২৪ সালে প্রথম ইউনিট এবং ২০২৬ সালে দ্বিতীয় ইউনিট চালু হবে।

অচিরেই প্রথম ইউনিট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রেটে যুক্ত হবে। আর এই বিদ্যুৎ হবে অত্যন্ত পরিবেশবান্ধব।ভ্লাদিমির পুতিন জানান পূর্ণাঙ্গ সক্ষমতায় চালু হবে ২০২৬ সালে।

রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অর্থের যোগান

রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ খরচ ১,১৩,০৯২.৯১ কোটি টাকা বা ১২.৬৫ বিলিয়ন ডলার। ৯০ ভাগ অর্থ সহজ শর্তে ঋণ দিবে রাশিয়ার প্রতিষ্ঠান রোসাটম। বাকি ১০ ভাগ অধ্যয়ন করবে বাংলাদেশ সরকার। আর এই ঋণ ২৮ বছর ধরে পরিশোধ করার সুযোগ পাবে বাংলাদেশ।

রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তা

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তার বিষয়টিকে সবথেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে বর্তমান প্রজন্মের সবচেয়ে বেশি নিরাপদ ও সর্বাধুনিক রিঅ্যাক্টর ভিভিইআর -১২০০ ব্যবস্থাটি গ্রহণ করেন। এ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্বাচিত পারমাণবিক চুল্লিতে ৫ স্তরের নিরাপত্তার বৈশিষ্ট্য থাকবে।যেমন:

১. ফুয়েল প্লেট
২. ফুয়েল ক্ল্যাডিং
৩. রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল
৪. প্রথম কন্টেইনমেন্ট বিল্ডিং
৫. দ্বিতীয় কন্টেইনমেন্ট বিল্ডিং।

আর এই পাঁচ স্থরের নিরাপত্তা প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিমান দুর্ঘটনা, মনুষ্য সৃষ্ট দুর্ঘটনা, ভূমিকম্প, বন্যা মোকাবেলায় সক্ষম থাকবে এ পারমাণবিক চুল্লি। এছাড়াও এই প্ল্যান্টের ডিজাইন গুলো এমন ভাবে করা হয়েছে যে ৮ মাত্রা ভূমিকম্প সহনীয়।

এছাড়াও ৫.৭ টন পর্যন্ত ওজনের বিমানের আঘাতেও এটি অক্ষত থাকবে। এছাড়াও প্রাকৃতিক পরিবেশের নিরাপত্তার কথা ভেবে ২০১৭ সালের ৩০ আগস্ট রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্পেন্ট ফুয়েল রাশিয়ায় ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ ও রুশ ফেডারেশনের মধ্যে এক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

প্রথম তেজস্ক্রিয় জ্বালানি হস্তান্তর

৫ অক্টোবর ২০২৩ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র (আরএনপিপি) ইস্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার আরেকটি পদক্ষেপ। প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা পরমাণু জ্বালানি গ্রহণ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মস্কোর ক্রেমলিন থেকে যুক্ত হন ভার্চুয়ালিভাবে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পক্ষ থেকে রোসাটমের মহাপরিচালক অলেকি লিখাচেভ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তরের জন্য জ্বালানি সরবরাহের সনদ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের হাতে জ্বালানি সরবরাহের একটি মডেল তুলে দেন।

তেজস্ক্রিয় জ্বালানি হস্তান্তর করার ফলে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৩ তম এবং দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় পারমাণবিক জ্বালানি ব্যবহারকারী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আগামীতে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠবে এই রুপপুর পারমণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার আরেকটি পদক্ষেপ।

আমরা এখন পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারকারী দেশ। এটা আমাদের জন্য গর্বের। এই দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিশাল বর্ণাঢ্য আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তেজস্ক্রিয় জ্বালানির প্রথম চালান রাশিয়ার একটি উড়োজাহাজে করে বাংলাদেশে আনা হয়।

সেনাবাহিনীর কঠোর নিরাপত্তায় পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের জ্বালানি হিসেবে ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল বা ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান ঢাকা থেকে প্রকল্প এলাকায় আনা হয়। জানা গেছে রোসাটম রূপপুরের জন্য প্রথম তিন বছর জ্বালানি বিনামূল্যে সরবরাহ করবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ ও ২০১৮ সালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিটের কংক্রিট উদ্বোধন করেন। ২০২১ ও ২০২২ এ কেন্দ্রের যথাক্রমে ইউনিট১ ও ইউনিট ২ এর রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল স্থাপন করেন। ৫ অক্টোবর ২০২৩ রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি সংযুক্ত করেন।

রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অর্থনৈতিক গুরুত্ব

বাংলাদেশে ক্রোমবর্ধমান বৈদ্যুতিক চাহিদা, জ্বালানির সংকট, পরিবেশের ভারসাম্য ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে এই রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বাংলাদেশে অন্যান্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তুলনায় রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে অনেক বেশি বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করা সম্ভব।

পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অল্প পরিমাণ জ্বালানি থেকে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করা যায়। হিসাব করে দেখা গেছে যে ৪৫০০ টন কয়লা থেকে যে পরিমাণ তাপ শক্তি পাওয়া যায়। মাত্র ১ কেজি ইউরেনিয়াম থেকে ঠিক সে পরিমাণ শক্তি পাওয়া সম্ভব। এ প্রকল্পটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে এবং ন্যাশনাল গ্রিড এর সক্ষমতা বাড়বে।

রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম হবে তিন থেকে সাড়ে তিন টাকা পার ইউনিট প্রতি। বাংলাদেশের লোডশেডিং এর হার হ্রাস পাবে, সর্বাপরি দেশের জিডিপির মান বাড়বে এবং জীবন যাত্রার মান অনেক উন্নত হবে। এছাড়াও দেশ-বিদেশি বিনিয়োগ এর হার বৃদ্ধি পাবে।

এছাড়াও প্রতিকূল আবহাওয়াতে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ কোন সমস্যা সৃষ্টি হবে না। এর প্রাথমিক ডিস্ট্রিবিউশন খরচ কিছুটা কম। বিশ্বব্যাপী প্রচুর পরিমাণ পারমাণবিক জ্বালানি জমা রয়েছে এজন্য এ জাতীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে হাজার বছর যাবত নিশ্চিন্তে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ করা সম্ভব।

বাংলাদেশের ১৮ লাখ পরিবার এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সুবিধা লাভ করবে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রায় আড়াইহাজার দক্ষ জনশক্তি গড়ে উঠবে। এই রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে প্রায় ২০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

শেষ কথা

বিদ্যুৎ উৎপাদনে পারমাণবিক প্রযুক্তির নির্ভরতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রায় ৩০ টির বেশি দেশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেল গ্যাস এর মূল্য সংক্রান্ত অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বেশ উপযোগী হবে। আজকের আর্টিকেলে বাংলাদেশের রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাবেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url