জমাদিউস সানি মাসের ইবাদতের বিবরণ
প্রিয় পাঠক আপনারা কি জমাদিউস সানি মাসের ইবাদত সম্পর্কে জানতে চান। এ মাস আরবি বছরের ষষ্ঠ মাস। এ মাসে নফল নামাজ,রোজা,জিকির আজকার, কুরআন তেলাওয়াত,দুরুদ শরীফ পাঠ ,তাজবিহ-তাহলিল,দান সদকা অধিক ফজিলত পূর্ণ। আজকের আর্টিকেলে জমাদিউস সানি মাসের ইবাদতের বিবরণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন।
আজকের আর্টিকেলে জমাদিউস সানি মাসের ইবাদতের বিবরণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এই আর্টিকেলে এই মাসে কিভাবে ইবাদত করবেন সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তাই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার অনুরোধ রইল।
ভূমিকা
জমাদিউস সানি আরবি বছরের ষষ্ঠ মাস। এ মাসটিতেও নফল ইবাদতের ফজিলত অত্যাধিক। মহান আল্লাহ তা'য়ালা জমাদিউস সানি মাসেরও বহু ফজিলত রেখেছেন। এ মাসে নফল নামাজ ও নফল রোজা এবং বিভিন্ন প্রকার নফল ইবাদত করলে প্রচুর পরিমাণ সওয়াব পাওয়া যায়। এই ইবাদত গুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা বিভিন্ন ধরনের উৎকৃষ্ট নেয়ামত দান করেন। এ মাসে অফুরন্ত সাওয়াব আছে বিধায় সাহাবায়ে কেরাম গণ এ মাসের বিভিন্ন ধরনের ইবাদতে মগ্ন থাকতেন।
জমাদিউস সানি মাসের ইবাদতের বিবরণ
জমাদিউস সানি মাসে বিভিন্ন ধরনের নফল ইবাদত রয়েছে। নফল নামাজ,নফল রোজা, জিকির আজকার, দরুদ শরীফ পাঠ, কুরআন তেলাওয়াত, দান খয়রাত,তওবা-ইস্তেগফার প্রভৃতি ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব। এইসব ইবাদত ইহকাল এবং পরকাল উভয় ক্ষেত্রে মঙ্গলজনক। নিম্নে জমাদিউস সানি মাসের ইবাদতের বিবরণ তুলে ধরা হলো:
জমাদিউস সানি মাসের নফল নামাজ
ফাজায়েলুশ শুহুর এবং আরো বিভিন্ন কিতাবে এ মাসের ফজিলতের বিষয়ে বর্ণিত হয়েছে। এ সকল কিতাবের বর্ণনাতে জানা যায় যে, এ মাসটির শেষ ১০ দিন প্রত্যেক রাতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবাগণ ২০ রাকাত নফল নামাজ আদায় করতেন। এ ধরনের ইবাদতের বহু ফজিলত নিহিত আছে।
কোন কোন কিতাবে এমনও বর্ণিত আছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সহচর ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রা:) এ মাসের প্রথম তারিখে রাতে ১২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করতেন এবং অন্যান্য সাহাবীগণও এ নামাজ বিশেষ পছন্দ করতেন। অনেক সাহাবী হযরত আবু বকর (রা:)কে অনুসরণ করে এ নামাজ আদায় করতেন।
আরো পড়ুন: জমাদিউল আউয়াল মাসের ইবাদতের বিবরণ
নামাজ পড়ার কোন বাধ্য বাধক নিয়ম নেই।তবে হযরত আবু বকর (রা:) সূরা ফাতিহার সাথে যে কোন সূরা দিয়ে নামাজ আদায় করতেন। আবার কোন কোন সময় সূরা ইখলাস দিয়েও নামাজ আদায় করতেন।
অনেক কিতাবে এমনও বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি এ মাসের প্রত্যেক দিন ফজর এবং মাগরিব নামাজের পর ১০০ বার করে বিভিন্ন তাসবিহ পাঠ করবে মহান আল্লাহ তা'য়ালা তাকে তার পরিবার পরিজনসহ পরম সুখে বসবাস করার সৌভাগ্য দান করবেন।
জমাদিউস সানি মাসের নফল রোজা
ফাজায়েলুশ শুহুর এবং আরো বিভিন্ন কিতাবে এ মাসের ফজিলতের বিষয়ে বর্ণিত হয়েছে। এ সকল কিতাবের বর্ণনাতে জানা যায় যে, এ মাসটির শেষ ১০ দিন প্রত্যেক রাতে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবাগণ ২০ রাকাত নফল নামাজ আদায় করার পাশাপাশি দিনের বেলা এ ১০ দিন নফল রোজা পালন করতেন।
এ ধরনের ইবাদতের বহু ফজিলত নিহিত আছে। এমন নফল রোজার বদলাতে মহান আল্লাহ তা'য়ালা বান্দার বহুদিনের গুনাহ সমূহ মাফ করে দিবেন এবং রোজি রোজগারের অত্যাধিক বরকত দান করবেন। রোজা নফস কে শক্তিশালী করে। রোজার প্রতিদান আল্লাহ নিজের হাতে দেবেন। রোজার বহু ফজিলত রয়েছে।
আরো পড়ুন: রবিউল আউয়াল মাসের ইবাদাতের বিবরণ
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা:) বলেন, হুজুর পাক (সাঃ) এরশাদ করেছেন, রোজা এবং কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে আল্লাহ! আমি তাহাকে দিনের বেলায় খানা পিনা হইতে বিরত রেখেছি। কাজেই তার বিষয়ে তুমি আমার সুপারিশ কবুল করো।
হযরত মুআজ ইবনে আনাস (রা:) বর্ণনা করেন, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাস ছাড়া অন্য সময় আল্লাহ তাআলার জন্য একটি রোজা রাখবে, দ্রুতগামী ঘোড়া ১০০বছরে যতদূর রাস্তা অতিক্রম করতে পারবে, দোজখ তার কাছ থেকে তত দূরে অবস্থান করবে।
হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যদি কেউ একদিন নফল রোজা রাখে, তবে তার যে সওয়াব হবে তা পৃথিবীর সমান স্বর্ণ দান করলেও তার সমান হবে না। (তারবানি ও আবু ইয়ালি)
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার নফল রোজা রাখতেন। কারণ আল্লাহর দরবারে প্রত্যেকটি বান্দার আমল এই দুই দিনে হাজির করা হয়। সুতরাং প্রতিমাসে এই দিনগুলোতে রোজা রাখা নবীর সুন্নাত।
প্রত্যেক আরবি মাসের ১৩-১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখা সুন্নাত এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। কারণ আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রতিমাসে এ তারিখ গুলোতে রোজা রাখতে দেখা যেত। এই রোজাকে বলা হয় আইয়ামে বিদ'-সুন্নাত রোজা।
জমাদিউস সানি মাসের অন্যান্য ইবাদত
জমাদিউস সানি মাসেও বিভিন্ন ধরনের নফল ইবাদত করা যায়। কারণ নফল ইবাদত দুনিয়া ও আখেরাত উভয় দিক বিবেচনা দিক থেকে অধিক ফজিলত পূর্ণ। নফল ইবাদত পালনে যদিও ইসলামী শরীয়ত বাধ্য করেনি, তবে কেউ যদি পালন করে তবে সে অধিক সাওয়াব অর্জন করবে।
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কেয়ামতের দিন বান্দার আমল সমূহের মধ্যে সর্বপ্রথম ফরজ আমলের হিসাব নেওয়া হবে। যদি তার ফরজ আমল ঠিক হয় তাহলে সে সফল হবে, আর যদি ফরজ আমল ঠিক না হয় তবে সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আরো পড়ুন: জিকিরের গুরুত্ব ও ফজিলত
যদি ফরজ আমলের মধ্যে কিছুটা ত্রুটি বের হয় তখন আল্লাহ তা'আলা বলবেন, এই বান্দার কিছু নফল ইবাদত আছে কিনা দেখো, এভাবে নফল ইবাদত দ্বারা ফরজের ঘাটতি পূরণ করা হবে। ( তিরমিজী ) সুতরাং এই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, প্রত্যেকের মুসলমানের নিকট নফল ইবাদতের পুঁজি থাকা উচিত।
কেননা ফরজের ঘাটতি হলে নফল ইবাদত দ্বারা ঘাটতি পূরণ করা হবে। জমাদিউস সানি মাসে প্রত্যেক মুসলমানের বিভিন্ন ধরনের নফল ইবাদত করা উচিত। প্রত্যেক মুমিনের এই চেতনা থাকা জরুরি যে নেক আমলের জন্য কোন মৌসুমই মূল্যহীন নয়।
এ মাসে জিকির আজকার, তাজবিহ-তাহলিল, কুরআন খতম, দরুদ শরীফ পাঠ, দান-সদকাহ, দোয়া-কালাম, তওবা-ইস্তেগফার,ওমরাহ, হজ্ব প্রভৃতি ইবাদতের মাধ্যমে এই মাসকে সার্থক ও সাফল্যময় করা যায়। সুতরাং শ্রেষ্ঠ নবীর উম্মাত হিসেবে এ মাস জুড়ে নিজেদের ইবাদত বন্দেগীতে নিয়োজিত রাখা উচিত।
যেসব দিন ও মাসের বিশেষ ফজিলত ও বৈশিষ্ট্য কুরআন ও হাদিসে উল্লেখ করা হয়নি, সেসব দিন ও মাসে বেশি করে নফল ইবাদত করলে আমলকারী অবশ্যই অন্যদের থেকে এগিয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা নেক আমলের প্রতিযোগিতা কর। ( সূরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৪৮)
শেষ কথা:
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে প্রত্যেক মুমিনের এই চেতনা থাকা জরুরি যে নেক আমলের জন্য কোন মৌসুমই মূল্যহীন নয়। যে যত নেক আমল করবে সে ততো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবে। আল্লাহ জিন ও মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তার ইবাদতের জন্য। এজন্য প্রত্যেকটা মুসলমানের উচিত সঠিকভাবে আল্লাহর ইবাদত করা। আজকের আর্টিকেলে জমাদিউস সানি মাসের ইবাদতের বিবরণ গুলো সঠিকভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি পড়বেন সে জমাদিউস সানি মাসের ইবাদত গুলো সঠিকভাবে পালন করার চেষ্টা করবেন।