জিকিরের গুরুত্ব ও ফজিলত

প্রিয় পাঠক আপনারা কি জানেন জিকিরের গুরুত্ব ও ফজিলত কতটা আল্লাহর দরবারে। জিকিরের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্ট ও নৈকট্য লাভ করা যায়। জিকির নফসকে শক্তিশালী করে। জিকির আল্লাহর আজাব হতে নাজাতের উসিলা। আজকের আর্টিকেলটি পড়লে জিকিরের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে জানতে পারবে। তাই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার অনুরোধ রইলো।

জিকিরের গুরুত্ব ও ফজিলত

শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচতে এবং আল্লাহর সন্তুষ্ট ও নৈকট্য লাভের জন্য জিকিরের গুরুত্ব ও ফজিলত অধিক। তাই প্রত্যেকটা মুসলমানের উচিত সবসময় আল্লাহর জিকির করা

ভূমিকা

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করিয়া দেবে যে বুদ্ধিমান লোকেরা কোথায়? মানুষ জিজ্ঞাসা করবে, বুদ্ধিমান কারা? উত্তর দেয়া হবে ঐ সমস্ত লোক বুদ্ধিমান যারা দাঁড়িয়ে,বসে, শয়নাবস্তায় আল্লাহর জিকির করত ( অর্থাৎ সর্ব অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করত )

এবং যারা আসমান ও জমিনের সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা ফিকির করতো এবং বলিতো হে পরওয়ারদেগার তুমি এসব অনর্থক সৃষ্টি করো নাই। আমরা তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করি! সুতরাং তুমি আমাদেরকে জাহান্নামের আজাব হতে রক্ষা করো।


হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তারপর তাদের জন্য একটি ঝান্ডা তৈরি করা হবে যার পেছনে এরা যেতে থাকবে এবং তাদেরকে বলা হবে যে অনন্তকালের জন্য তোমরা বেহেস্তে প্রবেশ করো। সুতরাং আল্লাহর কাছে জিকিরের গুরুত্ব ও ফজিলত অধিক।

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমরা যখন জান্নাতের বাগিচায় যাতায়াত করো তখন সেখানে খুব বেশি বিচরণ করো। কেউ একজন জিজ্ঞাসা করল ইয়া রাসুলুল্লাহ! জান্নাতের বাগিচা কি? হুজুর ( সাঃ) উত্তর দিলেন, জিকিরের হালকা-(তিরমিজী)। অর্থাৎ দুনিয়ার জিকিরের মজলিস কে নবীজি জান্নাতের বাগান সমতুল্য বলে আখ্যায়িত করেছেন।


নফল ইবাদতের মধ্যে যেকোনো প্রকার ত্রুটি আল্লাহর জিকিরের দ্বারা মাফ হয়ে যায়। হযরত আনাছ ( রা:) হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন যে, জিকিরে এলাহি ঈমানের চিহ্ন মুনাফিকি হতে নিষ্কৃতি,শয়তান হতে হেফাজত এবং দোযখের অগ্নি হতে বাঁচার উপায়। এসব কারণে জিকিরকে বহু ইবাদত হতে উত্তম বলা হয়েছে।

জিকিরের গুরুত্ব ও ফজিলত

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস ( রা:) বলেন, আল্লাহ তাআলা যেকোনো ফরজ কাজের জন্য একটা সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কিন্তু জিকিরের জন্য কোন সীমারেখা নেই এবং বিবেক বুদ্ধি থাকা পর্যন্ত উহার জন্য কোন ওজর আপত্তি চলবে না। কেননা কুরআনে এরশাদ হয়েছে।

খুব বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করতে থাকো। অর্থাৎ রাত্রি বেলায়,দিনের বেলায়, জঙ্গলে, সমুদ্রে, দেশে-বিদেশে, স্বচ্ছলতায়, গরিবি অবস্থায়, সুস্থতায়, অসুস্থতায়, নীরবে এবং জোরে অর্থাৎ সর্বক্ষেত্রে সর্বাবস্তায় আল্লাহর জিকির করিতে থাকো। সুতরাং আল্লাহর দরবারে জিকিরের গুরুত্ব ও ফজিলত অধিক।


বিখ্যাত মোহাদ্দেছ হাফেজ এবনে কাইয়্যেম “ওয়াবেলুছ ছাইয়্যেব” নামক গ্রন্থে জিকিরের ১১৭ বেশি উপকারিতা লিপিবদ্ধ করিয়াছেন।এখানে ঐ গ্রন্থ থেকে সংক্ষিপ্তভাবে কিছুটা বর্ণনা করা যাচ্ছে।
  • জিকির আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ।
  • জিকির বান্দার রিজিক বৃদ্ধি করে।
  • শরীর এবং অন্তরে শক্তি আনয়ন করে।
  • চেহারা ও অন্তরকে রৌশন করে দেয়।
  • জিকির আল্লাহর মারফতের দরজা খুলে দেয়।
  • অন্তরের শান্তি এবং প্রশস্ততা আনয়ন করে।
  • জিকির দ্বারা আল্লাহর মহব্বত পয়দা হয়।
  • জিকির বেহেস্তের চারা গাছের সমতুল্য
  • জিকিরের মজলিশ ফেরেশতাদেরই মজলিস।
  • জিকির হলো অন্তরের যাবতীয় রোগের চিকিৎসা।
  • জিকির অন্তর হতে চিন্তা ফিকির দূর করে ফেলে।
  • জিকির আল্লাহর আজাব হতে নাজাতের উসিলা।
  • সমস্ত আমল আল্লাহর জিকিরের জন্যই নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
  • জিকির শয়তানকে বিদূরিত করে ও তার শক্তিকে চুরমার করে দেয়।
  • জিকির কারীদের চেহারা দুনিয়াতেও নূরানী থাকবে আখেরাতেও নূরানী হবে।
  • আল্লাহ পাক জিকির কারীদের জন্য ফেরেশতাদের উপর গর্ব করে থাকেন।
  • যারা সর্বদা জিকিরের মগ্ন থাকবে তারা হাসতে হাসতে বেহেস্তে প্রবেশ করবে।
  • জিকির কারিদের উপর আল্লাহর রহমত ও ফেরেশতাদের দোয়া বর্ষিত হতে থাকে।
  • বান্দার জিকির সমূহ আরশের চতুর্দিকে তাহার জিকির করিয়া চক্কর দিতে থাকে।
  • জিকির মানুষের অন্তরকে নিদ্রা হতে জাগ্রত এবং গাফেলত হতে সতর্ক করে দেয়।
  • আরামের সময় আল্লাহর জিকির করলে বিপদের সময় আল্লাহ পাক তাকে স্মরণ করে থাকেন।
  • জিকির গোলাম আজাদ করা, অগণিত মাল খরচ করা এবং আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করার সমতুল্য।
  • জিকিরকারীকে প্রভাব ও কমনীয় পোশাক পরানো হয় অর্থাৎ তাকে দেখলে ভয় হয় আবার ভালো লাগে।
  • জিকির অন্তরকে জিন্দা করে। হাফেজ ইবনে তাইমিয়া বলেন, জিকির অন্তরের জন্য ঐরূপ মাছের জন্য পানি যেই রূপ।
  • জিকির অন্তর এবং রুহের খোরাক, খাদ্য না পেলে শরীরের যে অবস্থা হয় জিকির না করলে অন্তর ও রুহের ও সে অবস্থা হয়।
  • গাফেলের অন্তরে আল্লাহ পাকের সঙ্গে যে অসম্পর্কের ভাব সৃষ্টি হয়, বেশি বেশি জিকির দ্বারা এটা দূর হয়ে যায়।
  • জিকির অন্যান্য ইবাদতের সাহায্য করে, যেহেতু বেশি বেশি জিকিরের দরুন প্রত্যেকটি ইবাদতের কষ্টই অনুভব হয় না।
  • অন্তরকে মরিচা হতে পরিষ্কার করে দেয়। হাদিসে আছে, প্রত্যেক বস্তুতে মরিচা ও ময়লা পড়ে। অন্তরের ময়লা ও মরিচা হল খাহেশ এবং গাফলত। আর জিকির হলো উহার জন্য রেত স্বরূপ।
  • জিকিরের বরকতে গীবত,চোগলখুরী, মিথ্যা, কটুক্তি এবং বাজে কথা হতে জবান হেফাজতে থাকে। আর যে জিকির করে না সে বাজে কথায় লিপ্ত হয়ে পড়ে।
  • জিকিরের দরুন যে কোন কষ্ট সহজ হয়ে যায়, যে কোন কঠিন কাজ সহজ হয়ে যায় এবং যাবতীয় বিপদ কেটে যায়।
  • জিকিরের মজলিস ফেরেশতাদের মজলিস, আর বাজে কথার মজলিস শয়তানের মজলিস। এখন যার যে রূপ ইচ্ছা সে সেরূপ মজলিস পছন্দ করতে পারে।
  • জিকির কেয়ামতের দিন অনুতাপ হতে রক্ষা করবে,আর যেখানে জিকির হয় না কেয়ামতের দিন ওই মজলিস অনুতাপের কারণ হবে।
  • জিকিরের সহিত যদি নির্জনে ক্রন্দন করা যায়, তবে কেয়ামতের ভীষণ রৌদ্রতাপে যখন মানুষ দিশেহারা হয়ে যাবে তখন সে আরশের নিচে ছায়া পাবে।
  • জিকির সবচেয়ে সহজ ইবাদত হওয়া সত্বেও সমস্ত ইবাদত হতে উত্তম। যেহেতু শরীরের অন্যান্য অঙ্গ পতঙ্গ নাড়াচাড়া করার চেয়ে জিহ্বা নাড়াচাড়া করা খুব সহজ।
  • জিকিরের নূর দুনিয়াতেও সঙ্গে থাকে কবরেও সঙ্গে থাকে এবং পুলসিরাত পার হবার সময়ও উহা আগে আগে থাকবে।
  • অন্তরের মধ্যে বিশেষ ধরনের একটা কঠোরতা থাকে যেটা জিকির ব্যতীত অন্য কোন জিনিস দ্বারা নরম হয় না।
  • জিকির হলো আল্লাহর সঙ্গে বন্ধুত্বের শিকড় আর জিকির হইতে বিমুখ থাকা হল, তাহার সাথে শত্রুতার শিকড়।
  • যে ব্যক্তি এটা চাই যে,দুনিয়াতে থেকেই সে বেহেস্তের বাগানে অবস্থান করবে সে যেন জিকিরের মজলিসে বসে কেননা এটা হল বেহেস্তের বাগান।
  • জিকিরের দরুণ অন্তর হতে ভয় ভীতি দূর হয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং যত বেশি করে জিকির করা যাবে তত বেশি ভয় ভীতি দূর হয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।
  • একটি হাদিসে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি "ছোবহানাল্লাহে, অবিহামদিহী, ছোবহানাল্লাহিল আজীম"সাতবার পড়বে বেহেস্তে তার জন্য একটা গম্বুজ নির্মিত হবে।
  • যেই ব্যক্তি পথে-ঘাটে,ঘরে-বাহিরে, দেশে-বিদেশে বেশি বেশি করে জিকির করতে থাকবে কিয়ামতের দিন তত বেশি তার জন্য সাক্ষ্য দাতা হবে।
  • জিকির দ্বারা আল্লাহর দিকে আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়। এমন কি আস্তে আস্তে আল্লাহর তার একমাত্র ভরসা স্থল হয়ে যায় এবং যাবতীয় বিপদ-আপদে আল্লাহর দিকে দৃষ্টি নিপতিত হয়।
  • জিকির দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয় এবং জিকির যতই বৃদ্ধি পায় আল্লাহর নৈকট্য তত বৃদ্ধি পেতে থাকে। পক্ষান্তরে জিকির হইতে যতই গাফেল হবে আল্লাহ হতে তত দূরত্ব বৃদ্ধি পাবে।
  • জিকির জাহান্নামের জন্য বেড়া স্বরূপ। যেকোনো বদ আমলের কারণে জাহান্নামের উপযুক্ত হলেও জিকির মাঝখানে আসিয়া প্রাচীরের মতো দাঁড়ায়। সুতরাং জিকির যত বেশি হবে বেড়াও তত মজবুত হবে।
  • জিকির একটি বৃক্ষ, যাতে মারেফতের ফল ধরে থাকে। সুফিয়াদের পরিভাষায় উহাকে 'মাকাম এবং হাল, বলা হয়। জিকির যত বেশি হবে এই বৃক্ষের শিকড় তত মজবুত হবে এবং শিকড় যত মজবুত হবে বৃক্ষে তত বেশি ফল ধরবে।
  • সমস্ত নেক আমলের মোকাবেলায় জিকিরের মধ্যে একটি বিশেষ ধরনের লজ্জত রয়েছে। মালেক বিন দীনার (রহ:) বলেন, লজ্জত হাসেল কারীদের জন্য জিকিরের চেয়ে লজ্জতের বস্তু আর কিছুই নেই। এজন্য আল্লাহর দরবারের জিকিরের গুরুত্ব ও ফজিলত অধিক।
  • জিকিরের বদৌলতে বেহেস্তে বালাখানা তৈরি হতে থাকে, বান্দা জিকির হতে বিরত থাকলে ফেরেশতাগণ ও নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে ফেরেশতাগণ বলেন, নির্মাণের খরচ এখনো এসে পৌঁছায় নাই।
  • জিকিরের সাহায্যে মোরাকাবা নসিব হয় যাহা ক্রমানয় এহছানের স্তরে পৌঁছে দেয় আর এই স্তরে পৌঁছতে পারলে এমন ইবাদত নসিব হয় যেমন আল্লাহকে দেখতে পাওয়া যায়।(আর এই এহসান হলো ছুফিদের চরম উদ্দেশ্য)
  • জিকির কারিদের জন্য ফেরেশতাগণ ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। হযরত আমর বিন আছ (রা:) বলেন, বান্দা যখন "ছোবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী অথবা আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন"বলে তখন ফেরেশতাগণ দোয়া করেন যে,হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করো।
  • যে পাহাড় অথবা ময়দানে আল্লাহর জিকির করা হয় সে অন্যের উপর গর্ব করে থাকে, যেমন হাদিসে বর্ণিত আছে, এক পাহাড় অন্য পাহাড়কে ডেকে বলে আজ তোমার উপর দিয়ে কোন জিকির কারী অতিক্রম করেছে কি? হ্যাঁ বাচক উত্তর শুনলে সে খুব খুশি হয়।
  • বেশি বেশি করে জিকির করলে মোনাফেকী হতে মুক্ত থাকার সনদ স্বরূপ, কারণ মোনাফেকদের পরিচয় আল্লাহ পাক এইভাবে দিয়েছেন। মোনাফেকরা আল্লাহ তায়ালার জিকির খুব কমই করে থাকে। হযরত কাব আহবার (রা:) বলেন, যে প্রচুর পরিমাণে জিকির করবে সে নেফাক হতে মুক্ত থাকবে।
  • জিকির কারীদের কে আল্লাহ তা'আলা সত্যবাদী বলে আখ্যায়িত করেছেন, আর যাকে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা সত্যবাদী বলেছেন তাদের হাশর কখনো মিথ্যা বাদীদের সাথে হতে পারে না। হাদিসে বর্ণিত আছে, বান্দা যখন লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহু বলে তখন আল্লাহ পাক বলেন আমার বান্দা সত্যিই বলেছে, আমি ব্যতীত অন্য কোন মাবুদ নাই এবং আমি সবচেয়ে বড়।
  • জিকির দ্বারা আল্লাহর মহব্বত পয়দা হয়, আর এই মহব্বত হলো ইসলামের রুহু এবং দিনের মারকাজ এবং সৌভাগ্য ও নাজাতের ভিত্তিমূল। যে আল্লাহর প্রেমে আবদ্ধ হতে চায় সে যেন বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করে। বেশি বেশি জিকির আল্লাহর মহব্বতের দরজা স্বরূপ।
  • জিকির করলে দরবারের এলাহিতে জাকেরের আলোচনা হতে থাকে। কুরআন পাকে আছে-আল্লাহ পাক বলেন,আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব। হাদিসে বর্ণিত আছে, যে আমাকে মনে মনে স্মরণ করবে, আমিও তাকে মনে মনে স্মরণ করব। জিকিরের বুজুর্গীর জন্য উক্ত আয়াত ও উক্ত হাদিসই যথেষ্ট।
  • আল্লাহর দরবারে কিছু চাইলে যা পাওয়া যায়, না চাহিয়া শুধু জিকিরে লিপ্ত থাকলে তার চেয়ে বেশি পাওয়া যায়। যেমন হাদিসে কুদছীতে আছে, যে ব্যক্তি জিকিরের দরুন কিছু প্রার্থনা করতে পারল না, আমি তাকে প্রার্থনা কারির চেয়ে বেশি প্রদান করে থাকি।
  • সমস্ত আমলের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ যার মধ্যে বেশি বেশি করে জিকির হতে থাকে। অর্থাৎ রোজার মধ্যে ঐ রোজাই উত্তম যাহাতে অধিক পরিমাণ জিকির হতে থাকে। তদ্রুপ হজ্বের মধ্যে ঐ হজ্বই শ্রেষ্ঠ যার মধ্যে বেশি পরিমাণ জিকির হতে থাকে, জিহাদ ইত্যাদিরও একই হুকুম। সুতরাং জিকিরের গুরুত্ব ও ফজিলত অধিক
  • যে ব্যক্তি জিকির করলো না সে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলো না। হাদিসে বর্ণিত আছে, হযরত মুসা (আ:) আরজ করলেন, হে আল্লাহ! আমার উপর তোমার অফুরন্ত এহসান সুতরাং তুমি আমাকে এমন পন্থা দেখাও যার দ্বারা আমি তোমার বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করতে পারি। এরশাদ হল হে মুসা! তুমি যত বেশি বেশি আমার জিকির করবে তত বেশি আমার শুকরিয়া আদায় হবে।
  • জিহ্বা যতক্ষণ আল্লাহর জিকিরে থাকবে ততক্ষণ গীবত,শেকায়েত,পরনিন্দা,বেহুদা কথা হতে বিরত থাকবে।কেননা জিহ্বা কোন দিনই চুপ থাকে না, হয় জিকিরে রত থাকবে না হয় বাজে কথায় রত থাকবে। অন্তরের অবস্থাও তদ্রূপ, যদি আল্লাহর প্রেমে লিপ্ত না থাকে তবে নিশ্চয় কোন মাখলুকের প্রেমে লিপ্ত থাকবে।
  • শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। শয়তান চারিদিক থেকে মানুষকে চক্রান্তের বেড়াজালে ঘিরে রাখে। শয়তানের ঐসব কুচক্রী বাহিনীকে তাড়ানোর জন্য জিকিরের মত হাতিয়ার আর কিছুই নেই। এই জন্যই শয়তানের চক্রান্ত হতে বাঁচিবার জন্য বিভিন্ন হাদিসে বহু দোয়া শিক্ষা দেওয়া হয়েছে,যা পাঠ করলে শয়তান কাছেও আসতে পারে না। এছাড়াও শয়নকালে পাঠ করলে সমস্ত রাত্রি নিরাপদে থাকা যায়।
  • জিকির নফল ইবাদত সমূহের সমকক্ষ। হাদিসে বর্ণিত আছে, গরিব মিসকিনদের একটি দল হুজুর পাক ( সাঃ) এর নিকট অভিযোগ করিল যে, ধনী ব্যক্তিরা উচ্চ মর্যাদা সমূহ লাভ করিয়া যাইতেছে। যেহেতু তারা নামাজ রোজা আমাদের শরীক কিন্তু হজ্ব,ওমরাহ ও জেহাদ ইত্যাদিতে সম্পদ খরচ করে আমাদের ঊর্ধ্বে চলে যাচ্ছে। হুজুর (সাঃ) এরশাদ করলেন, আমি তোমাদেরকে এমন আমল বলে দেবো কি? যতদ্বারা কেবল তারাই তোমাদের সমকক্ষ হতে পারবে যারা তোমাদের মত আমল করবে। তারপর হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে প্রত্যেক নামাজের পর সুবহানাল্লাহ, আল্লাহু আকবার পড়ার তালিম দিলেন। হুজুর (সা:) এই হাদীসে, জিকির কে যাবতীয় হজ্ব, ওমরাহ ও জেহাদের সমতুল্য সাব্যস্ত করেছেন।

শেষ কথা:

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে জিকির আল্লাহ তায়ালার প্রতি আনুগত্য প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম। একটি হাদিসে এসেছে, যেই ঘরে আল্লাহর জিকির করা হয় সেই ঘর আসমান ওয়ালাদের নিকট এইভাবে চমকাতে থাকে।যেভাবে দুনিয়াবাসীদের নিকট আসমানের তারকা সমূহ চমকাতে থাকে। নফল ইবাদতের মধ্যে যেকোনো ত্রুটি আল্লাহ জিকিরের মাধ্যমে মাফ করে দেন। সুতরাং জিকিরের গুরুত্ব ও ফজিলত অধিক।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url