জমাদিউল আউয়াল মাসের ইবাদতের বিবরণ

প্রিয় পাঠক আপনারা কি জমাদিউল আউয়াল মাসের ইবাদত সম্পর্কে জানতে চান। এ মাস আরবি বছরের পঞ্চম মাস। এ মাসে নফল নামাজ,রোজা, জিকির আজকার, কুরআন তেলাওয়াত, দরুদ শরীফ পাঠ, তাজবিহ-তাহলিল, দান-সদকাহ অধিক ফজিলত পূর্ণ। আজকের আর্টিকেলে জমাদিউল আউয়াল মাসের ইবাদতের বিবরণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন।

জমাদিউল আউয়াল মাসের ইবাদতের বিবরণ

প্রত্যেকটা মুমিনের উচিত ফরজ ইবাদত গুলো পালন করার পাশাপাশি নফল,সুন্নত ও মুস্তাহাব ইবাদত মেনে চলা। জমাদিউল আউয়াল মাসে ইবাদত গুলো কিভাবে করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। সুতরাং আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার অনুরোধ রইল।

ভূমিকা

জমাদিউল আউয়াল মাস আরবি বছরের পঞ্চম মাস। এ মাসে বিভিন্ন প্রকার নফল ইবাদত ও নফল নামাজের অত্যাধিক ফজিলত রয়েছে। এ মাসে নফল ইবাদত সমূহ সঠিকভাবে আদায় করতে পারলে মহান আল্লাহ অশেষ সওয়াব দান করবেন এবং এর দ্বারা উৎকৃষ্ট নেয়ামত দান করবেন। এ মাসে অফুরন্ত সওয়াব আছে বিধায় সাহাবায়ে কেরাম নফল ইবাদত করতেন।

জমাদিউল আউয়াল মাসের নফল নামাজ

তোহফাতুল ইয়ামানী কিতাবে বর্ণিত আছে যে, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবাগণ জমাদিউল আউয়াল মাসের প্রথম তারিখে নিম্নের নিয়মে বিশ রাকাত নফল নামাজ আদায় করতেন। এ নামাজ কে সাহাবাগণ অশেষ সওয়াবের উছিলা এবং বিশেষ কল্যাণকর ইবাদত হিসাবে বিবেচনা করতেন। আর এ নামাজ সাহাবাগণ মাগরিব ও ইশা নামাজের মধ্যবর্তী সময় আদায় করতেন।

নফল নামাজের নিয়ম

এ নফল নামাজের নিয়ম হলো: দু' দু' রাকাত করে দশ সালামে এ ২০ রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়। প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে এবং এর সাথে ১১ বার করে সূরা ইখলাস পাঠ করতে হবে। নামাজ শেষে ১০০ বার করে নিম্নের দরুদ শরীফ পাঠ করে তারপর মুনাজাত করতে হবে।

দরুদ শরীফ হল:

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লাইতা আলা সাইয়্যিদিনা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি সাইয়্যিদিনা ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।

কোন কোন কিতাবে জমাদিউল আউয়াল মাসের প্রথম রাতে মাগরিব নামাজের পর ৮ রাকাত নফল নামাজের কথা উল্লেখ আছে। এ নফল নামাজ আদায়কারীর জন্য অশেষ সওয়াব নিহিত আছে।

নামাজ আদায়ের নিয়ম হলো: দু' দু' রাকাত করে নিয়ত করে চার সালামে নামাজ আদায় করতে হবে এবং এর প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে ১১ বার করে সূরা ইখলাস পাঠ করতে হবে।

নামাজ শেষে যে কোন একটি দরুদ শরীফ পাঠ করে মুনাজাত করবে। এ নামাজের ফজিলতের কথা বর্ণিত আছে যে, একাগ্রতার সাথে এ নামাজ আদায় করলে মহান আল্লাহ পাক নামাজিকে অচিরেই সমাজের বিশেষ সম্মানের অধিকারী ও বহু ধনসম্পদের মালিক বানাবেন।

জমাদিউল আউয়াল মাসের নফল রোজা

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যদি কেউ একদিন নফল রোজা রাখে, তবে তার যে সওয়াব হবে তা পৃথিবীর সমান স্বর্ণ দান করলেও তার সমান হবে না। (তাবরানি ও আবু ইয়ালি)।

হযরত মুআজ ইবনে আনাস( (রা:) বর্ণনা করেন, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাস ছাড়া অন্য সময় আল্লাহ তা'আলার জন্য একটি রোজা রাখবে, দ্রুতগামী ঘোড়া একশ বছরে যতদূর রাস্তা অতিক্রম করতে পারে, দোজখ তার কাছ থেকে তত দূরে অবস্থান করবে।


আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সপ্তাহে প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার নফল রোজা রাখতেন। কারণ আল্লাহর দরবারে প্রত্যেকটি বান্দার আমল এই দুই দিনে পৌঁছানো হয়। রোজা নফসকে বিশুদ্ধ করে। রোজার প্রতিদান আল্লাহ নিজের হাতে দেবেন। সুতরাং প্রতিমাসেই এই দিনগুলোতে রোজা রাখা সুন্নত।

এছাড়াও প্রত্যেক আরবি মাসের ১৩-১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখা সুন্নত এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। কারন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রতিমাসে এ তারিখ গুলোতে রোজা রাখতে দেখা যেত। তাই জমাদিউল আউয়াল মাসে ১৩,১৪,১৫ তারিখে রোজা রাখতে পারেন।

এছাড়াও বিভিন্ন কিতাবে বর্ণিত আছে জমাদিউল আউয়াল মাসের ১ তারিখ ১০ তারিখ ২৯ ও ৩০ তারিখে রোজা রাখার কথা। জমাদিউল আউয়াল মাসের ১ তারিখ ১০ তারিখ ২৯ ও ৩০ তারিখে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবীগণকে এ দিনগুলোতে রোজা রাখতে দেখা যেত।

সুতরাং আমরা তার প্রিয় উম্মত হিসেবে এই মাসের এই দিনগুলোতে রোজা রাখতে পারি। এ রোজা গুলোতে রয়েছে অধিক সওয়াব ও ফজিলত। কারণ এ পবিত্র দিনগুলোতে রোজা রাখার বদলে মহান আল্লাহ তা'আলা রোজাদারের রুজি রোজগারে অত্যাধিক রহমত ও বরকত দান করেন।

জমাদিউল আউয়াল মাসের অন্যান্য ইবাদত

জমাদিউল আউয়াল মাস ইবাদতের দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ মাসে বিভিন্ন নফল ইবাদত করা যায়। কারণ নফল ইবাদত দুনিয়া ও আখেরাত উভয় দিক বিবেচনা দিক থেকেই অধিক ফজিলত পূর্ণ। নফল ইবাদত পালনে যদিও ইসলামী শরীয়ত বাধ্য করেনি, তবে কেউ যদি পালন করে সে বিরাট সওয়াব অর্জন করবে।

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কেয়ামতের দিন বান্দার আমল সমূহের মধ্যে সর্বপ্রথম ফরজ আমলের হিসাব হবে। যদি তার ফরজ আমল ঠিক হয় তাহলে সে সফল হবে, আর যদি ফরজ আমল ঠিক না হয় তবে সে নাকামিয়াব ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।


যদি ফরজ আমলের মধ্যে কিছুটা ত্রুটি বের হয় তখন আল্লাহ তায়ালা বলবেন, এই বান্দার কিছু নফল আছে কিনা দেখো। এভাবে নফল ইবাদত দ্বারা ফরজের ঘাটতি পূরণ করা হবে।(তিরমিজী)।এই হাদিসে প্রমাণিত হলো, প্রত্যেকের নিকট নফল ইবাদতের পুঁজি থাকা উচিত। কেননা ফরজের ঘাটতি হলে নফল দ্বারা উহার ঘাটতি পূরণ করা হবে।

এ মাসে কুরআন তেলাওয়াত,দরুদ শরীফ পাঠ, জিকির আজকার, তাজবিহ-তাহলিল, দান- সদকাহ, দোয়া-কালাম, তওবা- ইসতেগফার, ওমরাহ, হজ প্রভৃতি ইবাদতের মাধ্যমে এই মাসকে সার্থক ও সাফল্যময় করা যায়। সুতরাং প্রত্যেক মুমিন মুসলমানদের উচিত এ মাসজুড়ে নিজেকে ইবাদাত বন্দেগিতে নিয়োজিত রাখা।

এছাড়াও প্রতিটি মাসের প্রথমে এবং শেষে বিশেষ দোয়া কালাম ও নামাজ রোজা, বিশেষ নেক আমলের মাধ্যমে ইবাদত পালন করা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাত। শ্রেষ্ঠ নবীর উম্মাত হিসেবে আমাদের প্রত্যেকটা মাসেই ইবাদত করা এবং নবীজির সুন্নাত মেনে চলা উচিত।

শেষ কথা:

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে জমাদিউল আউয়াল মাস ইবাদতের দিক থেকে অধিক ফজিলত পূর্ণ। নফসকে শক্তিশালী এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি নফল ইবাদত করা অতি জরুরী। প্রত্যেকটা মাসেই বিভিন্ন নফল ইবাদত রয়েছে। আর এইসব নফল ইবাদত গুলো করলে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব। তাই প্রত্যেকটা মুসলমানের উচিত সময়কে অপচয় না করে ইবাদতে মগ্ন থাকা। তাহলে ইহকাল ও পরকাল উভয়ে মঙ্গলজনক হবে। আজকের আর্টিকেলে জমাদিউল আউয়াল মাসের ইবাদতের বিবরণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url