ডিমের পুষ্টিগুণ-ডিম খাওয়ার উপকারিতা

ডিমের পুষ্টিগুণ রয়েছে অধিক পরিমাণ। ডিম কে সুপার ফুট নামে অভিহিত করা হয়। ডিমের পুষ্টিগুণ-ডিম খাওয়ার উপকারিতা জানলে যে কোন মানুষ বিস্মিত হবে। পুষ্টিবিদদের মতে প্রতিদিন সকালের নাস্তায় একটি করে ডিম খেলে শরীরের নানা রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়। আজকের আর্টিকেলে ডিমের পুষ্টিগুণ-ডিম খাওয়ার উপকারিতা এবং ডিম খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দেওয়ার চেষ্টা করব।

ডিমের পুষ্টিগুণ-ডিম খাওয়ার উপকারিতা

এই আর্টিকেলটি পড়লে ডিমের পুষ্টিগুণ- ডিম খাওয়ার উপকারিতা ডিম খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইলো।

ভূমিকা

ডিম একটি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। এটি ছোট বড় সবারই পছন্দ। সহজলভ্য পুষ্টির উৎস হিসাবের ডিমের তুলনা হতে পারে না। বর্তমানে পুষ্টিবিজ্ঞানীরা প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় একটি করে ডিম রাখার পরামর্শ দেন। বাড়িতে বা রেস্তোরায় সকাল বিকেলের নাস্তায় কিংবা দুপুর রাতের খাবারের ডিমের একটি মেনু ঘুরেফিরে সামনে চলে আসে।


 আমাদের দেশে হাঁস, মুরগি এবং কোয়েল পাখির ডিম সবচেয়ে বেশি খাওয়া হয়। আমাদের দেশের ডিম কে বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া হয় যেমন: সেদ্ধ ,ভাজি, পুডিং, ওমলেট এবং ডিম রান্না করেও খাওয়া হয়। ডিমের পুষ্টিগুণ দেহের প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম এর ঘাটতি পূরণ করে।

ডিমের পুষ্টিগুণ

ডিমের পুষ্টিগুণ অধিক। ডিমের পুষ্টিগুণ-ডিম খাওয়ার উপকারিতা কমবেশি সবাই জানে। ডিমের কিছু পুষ্টি উপাদান নিম্নে বর্ণিত হলো:
  • প্রোটিন,
  • পটাশিয়াম,
  • ম্যাগনেসিয়াম,
  • সোডিয়াম,
  • ভিটামিন বি২,
  • ভিটামিন বি৩,
  • টোটাল ফ্যাট,
  • ভিটামিন এ,
  • ভিটামিন ডি,
  • ভিটামিন ই,
  • ভিটামিন কে,
  • ভিটামিন বি,
  • ভিটামিন বি১,
  • ভিটামিন বি ৫,
  • ভিটামিন বি ৬,
  • ভিটামিন বি ১২
  • ক্যারোটিনয়েডস
  • ক্যালসিয়াম,
  • জিংক,
  • ফসফরাস,
  • কপার,
  • আয়রন,
  • ম্যাঙ্গানিজ,
  • বায়োটিন,
  • থায়ামিন,
  • ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড,
  • সোলিনিয়াম প্রভৃতি ছাড়াও ডিমের পুষ্টিগুণ অসংখ্য রয়েছে।

ডিম খাওয়ার উপকারিতা

ডিমের পুষ্টিগুণ অধিক হওয়ায় এটা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। ডিম খাওয়ার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। ডিম খাওয়ার উপকারিতা তুলে ধরা হলো।

দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে

ডিমে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ রয়েছে। আর ভিটামিন এ চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও ডিমে আছে লুটেইন ও জেনান্থিন এই দুইটা ক্যারোটিনয়েড আমাদের দৃষ্টিশক্তিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও ডিমে থাকা কিছু উপাদান আমাদের চোখের ছানি, ম্যাকুলার পতন ও সূর্যের বেগুনি রশি থেকে আমাদের চোখ সুরক্ষা করে।

হাড় ও দাঁত মজবুত করে

ডিমে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম যা আমাদের হাড় ও দাঁত মজবুত করতে সাহায্য করে। এছাড়ার ডিম পেশি ও হারের জোর বাড়াতে সাহায্য করে করে। সুতরাং ডিম খাওয়ার উপকারিতা অপরিসীম।

দেহের বৃদ্ধি, কোষ গঠন ও ক্ষয়পূরণ করে

দেহের বৃদ্ধি, কোষ গঠন ও ক্ষয় পূরণ করতে প্রোটিনের ভূমিকা অত্যাবশকীয়। এছাড়াও প্রোটিন শরীরকে আবর্জনা পদার্থ বহন করতে এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। আর প্রোটিনের সেরা উৎস ডিম। প্রোটিন কোষ মেরামত করতে সাহায্য করে এবং নতুন কোষ গঠনে ভূমিকা রাখে। এছাড়াও দেহের নানা অংশে পুষ্টি পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রোটিন প্রয়োজন।


মূলত দেহের নানা অংশকে একত্রে ধরে রাখে প্রোটিন। বয়স ভেদে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ৫০ থেকে১৭৫ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন। প্রতি একটি ডিম গ্রহণে ছয় থেকে সাত গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। তাই প্রতিদিন অন্তত একটি থেকে দুটি করে ডিম খেলে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।

দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণ করে

ডিম খাওয়ার একটি বড় সুফল হচ্ছে ওজন কমানো যায়।ডিম খেলে দেহের ওজন কমে এ কথা অনেকেই বিশ্বাস করতে চান না। কিন্তু বিভিন্ন গবেষণায় বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে পরিমিত মাত্রায় ডিম খেলে দেহের ওজন কমানো সম্ভব। মূলত ডিমের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান থাকায় তা বাড়তি খাবার খাওয়ার চাহিদা কমিয়ে দেয়। তাই ওজন কমাতে ডিমের গুরুত্ব অপরিসীম।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে

ডিমের রয়েছে ভিটামিন ই। এটি কোষ ও ত্বককে উৎপন্ন ফ্রি রেডিক্যাল নষ্ট করে দেয় এবং স্কিন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। বর্তমানে প্রায় মেয়েদের স্তন ক্যান্সার দেখা দিচ্ছে। তাই ডিমের প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বিদ্যমান থাকায় সপ্তাহে যদি আপনি ছয়টি ডিম খেতে পারেন তাহলে আর কোনো চিন্তা করতে হবে না। ডিম শতকরা ৪০ ভাগ স্থন ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম।

মস্তিষ্কের উন্নতি ঘটায়

ডিম মস্তিষ্কের জন্য খুব উপকারী একটি উপাদান। ডিমে রয়েছে মস্তিষ্কের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান যার নাম কলিন। এই কলিন আমাদের মস্তিষ্কের নিউরো ট্রান্সমিটার হিসেবে কাজ করে।সুতরাং দৈনিন্দ জীবনে ডিম খাওয়ার উপকারিতা অপরিসীম।

দেহের ভালো কোলেস্টেরল বাড়ায়

দেহে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল ক্ষতি করে -এমনটা অনেকেই জানেন। এই কোলেস্টেরলের আবার ভালো ও মন্দ দিক রয়েছে। মন্দ কোলেস্টেরল দেহের ক্ষতি করে। ডিমে রয়েছে ভালো ফ্যাট পলিআনস্যাচুরেটেড এবং মনো আনস্যাচুরেটেড আছে যা স্যাচুরেটেড ফ্যাট কে সরিয়ে তার স্থানে বসে এবং রক্তে থাকা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ফেলে। তাই দেখা যায় যারা ডিম খান না তারা এই প্রয়োজনীয় উপাদানটি অভাবে ভোগেন।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

ডিম দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। আপনি যদি দেহের জীবাণুগুলো দূর করতে চান। সেই সঙ্গে ভাইরাস ও বিভিন্ন রোগের জীবাণুকে শায়েস্তা করতে চান। তাহলে নিয়মিত ডিম খান। একটি বড় ডিমের রয়েছে প্রায় ২২ শতাংশ আরডিএ বা সেলেনিয়াম।


এটি শিশুদের পুষ্টির চাহিদা মেটাতেও বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করে এবং তাদের বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জনে সয়তা করে। ঘনঘন সর্দি, কাশি বা জ্বরে ভুগতে না চাইলে রোজ ডিম খান। ডিমে থাকা জিংক ইমিউনিটি সিস্টেমকে অনেকটাই শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।

দৈহিক শক্তি জোগায়

ডিমে রয়েছে ভিটামিন বি যা সহজে ক্লান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে এবং শরীরকে এনার্জি প্রদান করে দীর্ঘ সময়। একটি ডিমে প্রায় দৈনিক চাহিদা পূরণের উপযোগী ১৫ শতাংশ ভিটামিন বি রয়েছে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আমরা যদি একটি বা দুইটি ডিম রাখি তাহলে ভিটামিন বি ঘাটতি পূরণ হবে এবং শরীরে উদ্যম শক্তি জোগাতে সাহায্য করবে।

ত্বক ,নখ ও চুলের উন্নতি ঘটায়

ত্বক, নখ ও চুলের যত্নে ডিম খাওয়ার কোন জুড়ি নেই। ডিমে আছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স যা ত্বক, নখ, চুল, চোখ ও লিভার গঠন সহায়তা করে। নখ ভেঙে যাওয়া এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ডিম অত্যাবশকীয় খাদ্য।ডিমে থাকা সালফার ত্বক,নখ,ও চুলের সৌন্দর্য বাড়াতে জাদুর মত কাজ করে।

হৃদ রোগের ঝুঁকি কমায়

প্রতিদিন অন্তত একটি করে ডিম খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।ডিম খেলে হার্টের রক্ত জমাট বাঁধে না। তাই হার্ট অ্যাটাক বা স্টক এর ঝুঁকি কমে। এবং সারা শরীরে রক্ত চলাচল সচল থাকে। এলডিএল কোলেস্টেরলকে মন্দ কোলেস্টেরল বলা হয়। প্রতিনিয়তর ডিম খেলে দেখা যায় এই খারাপ কোলেস্টেরল কমে যায়। সুতরাং ডিম খাওয়ায় হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়ে না বরং কমে যায়।

মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমায়

ডিম মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। ডিমের পুষ্টিগুণ মানুষের মনের উপর প্রভাব ফেলে। ডিমের বিভিন্ন পুষ্টিগুণ ব্রেন বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমান বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখে ডিম মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

রক্তস্বল্পতা দূর করে

ডিমে প্রচুর পরিমাণ আয়রন রয়েছে। যারা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন তারা যদি প্রতিদিন অন্তত একটি করে ডিম খান তাহলে রক্তস্বল্পতার ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।সুতরাং ডিম খাওয়ার উপকারিতা অপরিসীম।

ক্যালোরি বৃদ্ধি করে

ছোট্ট একটি ডিম হাজার ভিটামিনের ভরপুর।ডিমে থাকা ভিটামিন বি ১২ খাদ্যকে এনার্জি বা শক্তিতে রূপান্তর করতে সাহায্য করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে প্রত্যেক নারীর শরীরে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০ গ্রাম প্রোটিন দরকার হয়। একটি ডিমে থাকে ৭০ থেকে ৭৫ ক্যালোরি বা ৬.৫ গ্রাম প্রোটিন। তাই সুস্থ থাকতে প্রতিদিন একটি বা দুইটি করে ডিম খেতেই পারেন

মেটাবলিজম সিস্টেমকে উন্নত করে

ডিমে আছে প্রচুর পরিমাণ এন্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বাড়াতে ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এটির শরীরের মেটাবলিজম সিস্টেমকে উন্নত করে। ডিমে দুইটি প্রধানত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। এগুলো হলো লুটেইন ও জেনান্থিন। ডিমের কুসুমে এই উপাদান গুলো বেশি পাওয়া যায়। তাই ডিমের কুসুম সহ ডিম খাওয়ার উপকারিতা অনেক।

অ্যামাইনো এসিড তৈরি করে

আমাদের শরীর ১১ ধরনের প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো এসিড বানাতে পারে। কিন্তু আমাদের শরীর প্রায় ২০ ধরনের অ্যামাইনো এসিডের প্রয়োজন হয়। তাই শরীর ১১ ধরনের বানাতে পারলেও বাকি ৯ ধরনের অ্যামাইনো এসিডের সহজলভ্য উপায় হলো ডিম খাওয়া।

ডিম খাওয়ার নিয়ম

ডিমের পুষ্টিগুণ অধিক তাই পরিমিত পরিমাণ ডিম খাওয়া উত্তম।কারণ ডিম খাওয়ার উপকারিতা যেমন আছে।ঠিক অতিরিক্ত পরিমান ডিম খেলেও এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। তবে অবশ্যই খেয়াল করবেন ডিম কিন্তু অধিক তাপে দেওয়া যাবে না। অধিক তাপে ডিমের প্রোটিন কিছুটা নষ্ট হয়ে যায়। ডিম খেলে সিদ্ধ ডিম খাওয়া টাই সব চেয়ে উত্তম। 


তবে একটা দিক খেয়াল রাখতে হবে অর্ধ সিদ্ধ ডিমের জীবাণু থাকতে পারে। তবে আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখবেন যাদের শরীরে উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল আছে তারা কুসুম বাদে ডিম খাওয়ার চেষ্টা করবেন। পুষ্টিবিদরা মনে করেন প্রতিদিন ১ থেকে ২ টির বেশি ডিম না খাওয়াই উত্তম। কারণ প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আমরা অন্যান্য উৎস থেকেও প্রোটিন গ্রহণ করি।

শেষ কথা

পরিশেষে আমরা বলতে পারি এই আর্টিকেলে আমরা ডিমের পুষ্টিগুণ- ডিম খাওয়ার উপকারিতা এবং ডিম খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। স্বাস্থ্য ভালো রাখতে তাই নিয়মিত ডিম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কারণ প্রোটিনের সেরা উৎস ডিম। আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা ডিমের পুষ্টিগুণ- ডিম খাওয়ার উপকারিতা এবং ডিম খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে কিছুটা হলেও জানতে পারবেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url