কোল্ড এলার্জি দূর করার উপায়-কোল্ড এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায়

প্রিয় পাঠক আপনারা কি কোল্ড এলার্জি নিয়ে অনেক চিন্তিত। তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কারণ আজকের আর্টিকেলে কোল্ড এলার্জি জনিত সকল সমস্যার সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আজকের আর্টিকেলটি পড়লে জানতে পারবেন কোল্ড এলার্জি দূর করার উপায়-কোল্ড এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায়। তাই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার অনুরোধ রইল।

কোল্ড এলার্জি দূর করার উপায়-কোল্ড এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায়

দেশের প্রায় ৫৪% মানুষ এই কোল্ড এলার্জি জনিত সমস্যায় ভুগছেন। যাদের রক্তে এলার্জির পরিমাণ বেশি থাকে তারা শীতকালে এই কোল্ড এলার্জিতে বেশি ভুগে থাকেন। তবে বিভিন্ন সতর্কতা মেনে চললে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

ভূমিকা

কিছু মানুষ আছে যারা গরমে ভালো কিন্তু শীত আসলেই দেখা যায় প্রচন্ড হাঁচি,কাশি,সর্দি, নাক চুলকানো,নাক দিয়ে পানি পড়া,চোখ চুলকানো,কান চুলকানো, কান দিয়ে পানি পড়া সহ বিভিন্ন ধরনের ঠান্ডা জনিত সমস্যা দেখা দেয়। দেখা যায় কিছু মানুষ ঠান্ডা জনিত সমস্যা নিয়ে প্রায় পুরো শীত জুড়ে অসুস্থ থাকে। আর এই সমস্যার প্রধান কারণ হলো কোল্ড এলার্জি।


এই কোল্ড এলার্জি বিভিন্ন বয়সের মানুষের মধ্যে দেখা যায়। শীতকালের শুষ্ক আবহাওয়ায় বাতাসে ধুলাবালি বেশি থাকে যার কারণে এ সমস্যা বেশি হতে দেখা যায়। কোল্ড এলার্জি বেশি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। চিকিৎসকরাহ এই রোগের প্রধান ঔষধ হিসেবে আন্টি-হিস্টামিন জাতীয় ঔষধ বেশি দিয়ে থাকেন।

কোল্ড এলার্জির লক্ষণ

কোল্ড এলার্জির বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ দেখা যায়।তবে কোল্ড এলার্জির প্রধান কিছু লক্ষণ গুলো নিম্নে বর্ণিত হলো:
  • প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট
  • মাথা ধরে থাকা
  • গলা ব্যথা হওয়া
  • নাক চুলকানো
  • নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া
  • বারবার হাঁচি হওয়া
  • নাক দিয়ে পানি পড়া
  • প্রচন্ড চোখ চুলকানো
  • চোখ লাল হয়ে যাওয়া
  • চোখ দিয়ে পানি ঝরা
  • কান দিয়ে পানি পড়া
  • বাঁশির মত আওয়াজ
  • ঘন ঘন সর্দি কাশি
  • গলার অভ্যন্তরে চুলকানো
  • শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চুলকানো

কোল্ড এলার্জি দূর করার উপায় (কিছু সতর্কতা)

কোল্ড এলার্জি কখনো সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা সম্ভব নয়। ডাক্তাররা কোল্ড এলার্জি চিকিৎসায় পরামর্শ দিয়ে থাকেন যে,এলার্জি চিকিৎসা করার চেয়ে কোল্ড এলার্জি প্রতিরোধ করা সবচেয়ে উত্তম। ডাস্ট মাইট, মোল্ড বা ছত্রাক, পরাগরেণু থেকে কোল্ড এলার্জি অধিক পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।এই এলার্জি প্রতিরোধ করতে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যেমন:
  • ঘরবাড়ি সবসময় পরিষ্কার রাখুন।
  • রান্নার ঝাঁঝালো গন্ধ থেকে দূরে থাকুন।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ সুষম খাবার গ্রহণ করুন।
  • বিভিন্ন ধরনের পশু পাখি থেকে দূরে থাকুন।
  • এলার্জি জনিত খাবার পরিহার করুন।
  • অবশ্যই নিয়মিত শ্বাসের ব্যায়াম করুন।
  • ধুলাবালি থেকে নিজেকে সব সময় দূরে রাখুন।
  • বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি ব্যবহার পরিহার করুন।
  • বাইরে বের হবার সময় অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন।
  • অন্যের ব্যবহৃত পোশাক পরিধান করা বন্ধ করুন।
  • তামাক জাতীয় দ্রব্য অর্থাৎ ধূমপান পরিহার করুন।
  • সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করুন।
  • ঘরে মশার কয়েল ব্যবহার না করে মশারি ব্যবহার করুন।
  • বিভিন্ন ধরনের এয়ার ফ্রেশনার, অ্যারোসল,স্প্রে ব্যবহার পরিহার করুন।
  • ঘরের ভেতরে যদি কোন গাছ থাকে তাহলে অবশ্যই সরিয়ে ফেলতে হবে।
  • কোল্ড এলার্জি থেকে বাঁচতে অবশ্যই মানসিক দুশ্চিন্তা পরিহার করতে হবে।
  • প্রতিদিন খোলা আলো বাতাসে ২০ থেকে ২৫ মিনিট ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন।
  • শীতের সময় বিছানার চাদর, বালিশ,লেপ, কম্বল ধুলাবালি মুক্ত রাখার চেষ্টা করুন।
  • ঘরে যাতে ছত্রাক না হয় সেজন্য ঘরে আলো বাতাস চলাচল করার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • ঘরের ভেতরে কখনো ভেজা কাপড় শুকাবেন না তাহলে কাপড়ে মোল্ড বা ছত্রাক জন্মাতে পারে।
  • ঠান্ডা পানি পরিহার করতে হবে অর্থাৎ কুসুম গরম পানি খেতে হবে এবং গোসল করতে হবে।
  • শীতে যাদের কোল্ড এলার্জি বেড়ে যায় তারা কান,মাথা, অর্থাৎ পুরো শরীর গরম কাপড় দিয়ে ভালোভাবে ঢেকে রাখতে হবে।
  • নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোন ঔষধ খাওয়া যাবেনা।

কোল্ড এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায়

কোল্ড এলার্জি জনিত ঔষধের বিভিন্ন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে কিন্তু এলার্জি প্রতিরোধী প্রাকৃতিক খাবারে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে না।এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক ঔষধ ছাড়া ঘরোয়া উপায়ে কিভাবে কোল্ড এলার্জি দূর করা যায়।

পেয়ারা

যাদের কোল্ড এলার্জি আছে তারা নিয়মিত পেয়ারা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।কারণ পেয়ারাতে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি,ভিটামিন এ,ক্যালসিয়াম,পটাশিয়াম,ফসফরাস,আইরন,কপার,ফোলেট, ম্যাঙ্গানিজ, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট,থায়ামিন প্রভৃতি।পেয়ারাতে থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শরীরের মৌসুমী রোগ জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।


এছাড়াও পেয়ারাতে থাকা ভিটামিন এ দেহের রোগ জীবাণু ধ্বংস করে এবং চোখে ভালো রাখে। পেয়ারা শরীরের খারাপ কলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে এবং ভালো কোলেস্টেরল তৈরি করে। এছাড়াও পেয়ারা শরীরের নানা রোগবালাই দূর করে থাকে।

কমলা

যাদের কোল্ড এলার্জি আছে তারা প্রতিদিন অন্তত ১ টি করে কমলা খাওয়ার চেষ্টা করুন। কারণ মজাদার ফল কমলার কোয়ায় কোয়ায় রয়েছে ভিটামিন। কমলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমান ভিটামিন সি,ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম,পটাশিয়াম,ফসফরাস,এন্টি অক্সিডেন্ট প্রভৃতি।আর এই সব পুষ্টি উপাদান শীতকালের ঠান্ডা জ্বর,সর্দি,কাশি জনিত সকল সমস্যার দূর করতে সাহায্য করে।

পাতিলেবু

শীতকালে যাদের কোল্ড এলার্জি অনেক বেড়ে যায় তারা নিয়মিত লেবু পানি, লেবু চা, লেবুর শরবত খেতে পারেন। লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমান ভিটামিন সি যা ঠান্ডা,কাশি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।এছাড়াও লেবুতে রয়েছে ফ্ল্যাবোনয়েড যা শরীরের ভাইরাস প্রতিরোধ করে এবং শরীরকে সুস্থ রাখে।

ঘি

কোল্ড এলার্জি দূর করতে চাইলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আগে বৃদ্ধি করতে হবে। ঘি শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাই শীতকালে প্রতিদিন ঘি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

মধু

মধু নানা পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। মধুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফেনোলিক অ্যাসিড ও ফ্ল্যাভোনয়েডের মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু অ্যন্টি অক্সিডেন্ট যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। প্রতিদিন সকালে এক থেকে দুই টেবিল চামচ পরিমাণ মধু খেলে শরীরের তাপ শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং কোল্ড এলার্জি দূর হয়।

কালোজিরা

কালোজিরাতে প্রায় সব ধরনের পুষ্টি উপাদান উপস্থিত রয়েছে। প্রায় সব ধরনের রোগ প্রতিরোধ করতে পারে কালোজিরা। প্রতিদিন সকালে সামান্য পরিমাণ কালোজিরা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কারণ কালোজিরা নিজে একটি অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিসেপটিক যা কোল্ড এলার্জি সহ শরীরের সব ধরনের রোগ জীবাণু দূর করতে সহায়তা করে।

আদা

কোল্ড এলার্জি দূর করার উপায় হিসেবে আদাকে বেছে নিতে পারেন। আদাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি,ভিটামিন এ,ক্যালসিয়াম,পটাশিয়াম, ফসফরাস, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট প্রভৃতি। শীতকালে যারা কোল্ড এলার্জিতে নাজেহাল তারা কাঁচা ছোলার সাথে আদা কুচি,আদা চা, বিভিন্ন খাদ্যের সাথে আদা মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে অনেক উপকার পাবেন।

শীতকালীন সবজি

শীতকালে কোল্ড এলার্জি দূর করতে চাইলে শীতকালীন যে সবজিগুলো ওঠে সেগুলো অবশ্যই খেতে হবে।লাউ,বাধাকপি,ফুলকপি,শিম,ব্রকলি,মুলা,পালংশাক,টমেটো,গাজর,ধনিয়া পাতা প্রভৃতি হল শীত কালীন সবজি। এইসব সবজি শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সুতরাং কোল্ড এলার্জি দূর করার উপায় হিসেবে পর্যাপ্ত পরিমাণ শীতকালীন শাকসবজি অবশ্যই খেতে হবে। 

শীতের মৌসুমী ফল

শীতের মৌসুমে দেখা মেলে জলপাই,আমলকি, কমলালেবু,সফেদা,আপেল,ডালিম প্রভৃতি। এইসব ফলে আছে ভিটামিন সি,ভিটামিন এ,মিনারেল,ক্যালসিয়াম, ফসফরাস,ভিটামিন ই,অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবারসহ নানা পুষ্টি উপাদান। এইসব ফল শীতকালীন বিভিন্ন রোগ বালাই দূর করতে সাহায্য করে। এইসব ফল গুলোর মধ্য থেকে প্রতিদিন অন্তত ১ টি করে ফল খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত তাহলে কোল্ড এলার্জি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

হলুদ ও নিম পাতা

কোল্ড এলার্জি দূর করার জন্য হলুদ ও নিম পাতাকে বেছে নিতে পারেন। কারণ হলুদ ও নিম পাতা প্রাকৃতিক প্রতিরোধক হিসেবে পরিচিত। হলুদ ও নিমের পাতা বেটে ছোট ছোট করে বড়ি বানিয়ে রোদের শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে পারেন। প্রতিদিন দুইটা থেকে তিনটা করে এই বড়ি খেলে কোল্ড এলার্জি থেকে উপশম পাবেন। আবার হলুদ ও নিমের পাতা শুকিয়ে গুড়া করেও খেতে পারেন।

ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার

কোল্ড এলার্জি দূর করতে চাইলে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হবে। কারণ ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড শীতকালীন সর্দি,কাশি,জ্বর সহ বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই দূর করতে সাহায্য করে। সামুদ্রিক মাছ,বিভিন্ন ধরনের বীজ যেমন: চিয়া বীজ, তিসি বীজ,কুমড়া বীজ এইসব খাবার গুলোতে প্রচুর পরিমাণ ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে।

শেষ কথা

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে কোল্ড এলার্জি দূর করতে চাইলে চিকিৎসকের পরামর্শর পাশাপাশি অবশ্যই সচেতন হতে হবে এবং স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন মেনে চলতে হবে। সুতরাং আজকের আর্টিকেলে কোল্ড এলার্জি দূর করার উপায়-কোল্ড এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url