ছোট মাছের পুষ্টিগুণ-ছোট মাছ খাওয়ার উপকারিতা

ছোট মাছের পুষ্টিগুণ রয়েছে অধিক পরিমাণ। পুষ্টিবিদদের মতে বড় মাছের তুলনায় ছোট মাছের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। সপ্তাহে অন্তত একদিন ছোট মাছ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে শরীরের নানা রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আজকের আর্টিকেলে ছোট মাছের পুষ্টিগুণ- ছোট মাছ খাওয়ার উপকারিতা এবং ছোট মাছ খাওয়ার সতর্কতা নিয়ে বিস্তারিত বিবরণ দেওয়ার চেষ্টা করব।

ছোট মাছের পুষ্টিগুণ-ছোট মাছ খাওয়ার উপকারিতা

এই আর্টিকেলটি পড়লে ছোট মাছের পুষ্টিগুণ- ছোট মাছ খাওয়ার উপকারিতা এবং ছোট মাছ খাওয়ার সতর্কতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইলো।

ভূমিকা

ছোট মাছ আকারে ছোট হলেও পুষ্টিতে ছোট নয়। পুষ্টিগুণের দিক থেকে বিচার করলে দেখা যায় বড়, মাঝারি, আকারের মাছের থেকে ছোট মাছের পুষ্টিগুণ অধিক। ছোট মাছের প্রচুর পরিমাণ উন্নত মানের আমিষ রয়েছে। যা মানব দেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় দশটি অ্যামাইনো এসিড আছে।


মাছের আমিষ রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। ছোট মাছের প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ এবং আয়োডিনের মত খনিজ পদার্থ থাকে যার ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সুতরাং ছোট মাছের পুষ্টিগুণ- ছোট মাছ খাওয়ার উপকারিতা অপরিসীম।

ছোট মাছের পুষ্টিগুণ

বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। এখানে বিভিন্ন ধরনের ছোট মাছ পাওয়া যায়। ছোট মাছ গুলোর মধ্যে পুঁটি, ট্যাংরা, মলা, ঢেলা, কাচকি, চাঁদা, ছোট চিংড়ি,ফলি, ইত্যাদি মাছ বেশ জনপ্রিয়। আর এইসব ছোট মাছের পুষ্টিগুণ অধিক পরিমাণ রয়েছে যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। ছোট মাছের পুষ্টিগুণ বলে শেষ করা যাবেনা। তাই ছোট মাছের কিছু পুষ্টি উপাদান তুলে ধরা হলো। যেমন এতে আছে
  • প্রোটিন,
  • ক্যালসিয়াম,
  • ফসফরাস,
  • ম্যাগনেসিয়াম,
  • সোডিয়াম,
  • পটাশিয়াম,
  • আয়রন,
  • ভিটামিন এ,
  • ভিটামিন সি,
  • ভিটামিন ডি,
  • ভিটামিন বি ২,
  • ভিটামিন ৩,
  • ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড,
  • লাইসনি,
  • মিথিওনিন প্রভৃতি ছাড়াও ছোট মাছের পুষ্টিগুণ রয়েছে অসংখ্য।

ছোট মাছ খাওয়ার উপকারিতা

ছোট মাছ খাওয়ার উপকারিতা অপরিসীম। পুষ্টিবিদরা মনে করেন বড় মাছের তুলনায় ছোট মাছের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের জন্য ছোট মাছ খাওয়ার উপকারিতা অনেক। ছোট মাছ ডায়াবেটিসের ঝুকি কমায়। হৃদরোগে, স্টকের রোগী ও গর্ভবতী মা ও দুগ্ধ দানকারী মায়ের জন্য ছোট মাছ অনেক উপকারী।

নিয়মিত ছোট মাছ খেলে রাতকানা রোগ সহ বিভিন্ন চোখের সমস্যা সমাধান হয় এবং রক্তস্বল্পতা ঘাটতি পূরণ হয়। এই মাছ নদী নালা,খাল বিল প্রায় সব জায়গাতেই পাওয়া যায়। মূলত ছোট মাছ চাষ করতে হয় না। জেনে নিন কয়েকটি ছোট মাছ খাওয়ার উপকারিতা। যেমন:

কাচকি মাছ

কাচকি মাছ একটি জনপ্রিয় মাছ। কাচকি মাছের স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক কম। কিন্তু কাচকি মাছের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। কাচকি মাছ কাটাসহ চিবিয়ে খেলে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। কাচকি মাছের অসম্পৃক্ত চর্বি আমাদের শরীরের উচ্চ রক্তচাপ সহ হৃদ রোগ ও বিভিন্ন জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে।

পুষ্টিবিদরা মনে করেন খাদ্য তালিকায় নিয়মিত কাচকি মাছ রাখতে পারলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি করা সম্ভব। প্রতি ১০০ গ্রাম কাচকি মাছে আছে ৩.৬ গ্রাম চর্বি, প্রোটিন এর পরিমাণ ১২.৭ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৪৭৬ মিলিগ্রাম, আইরন২.৮ মিলিগ্রাম। গর্ভবতী মহিলা ও উঠতি বয়সী শিশুদের জন্য এই কাচকি মাছ অনেক উপকারী। সুতরাং ছোট মাছ খাওয়ার উপকারিতা অপরিসীম।

মলা মাছ

মিঠা পানির মাছ মলা।মলা মাছ অত্যন্ত সুস্বাদু ও অধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ।মলা মাছ খেয়ে সহজে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা যায়। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে দৈনিক খাদ্য তালিকায় মলা মাছ থাকলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। মলা মাছে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি ১২ ও মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট। এছাড়াও এই মাছে আছে ফ্যাটি অ্যাসিড ও অ্যানিমেল প্রোটিন। এছাড়া মলা মাছে ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস বিদ্যমান


মলা মাছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ আছে যার কারণে রাতকানা রোগসহ চোখের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে খুব কার্যকর।মলা মাছের প্রচুর পরিমাণ ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড আছে। যা শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল বের করতে সাহায্য করে এবং বাচ্চাদের মস্তিষ্কের গঠন ও মেধা বিকাশে সাহায্য করে। এছাড়াও হৃদরোগীদের জন্য এ মাছ অনেক উপকারী। প্রতি ১০০ গ্রাম মলা মাছে আছে প্রায় ৮৫৩ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৫.৭ মিলিগ্রাম আইরন এবং জিংক প্রায় ৩.২ মিলিগ্রাম।

ঢেলা মাছ

এক সময় বাংলাদেশের নদ- নদী, হাওর ও বিলে প্রচুর পরিমাণ ঢেলা মাছ পাওয়া যেত। পুষ্টিবিদরা জানান ঢেলা মাছে প্রচুর খনিজ পদার্থ রয়েছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঢেলা মাছ বর্তমানে বিলুপ্ত প্রায়। ঢেলা মাছ যদিও পাওয়া যায় তবে এর দামটা অনেক বেশি। প্রতি ১০০ গ্রাম ঢেলা মাছে আছে ক্যালসিয়াম ১২৬০ মিলিগ্রাম, জিংক ১৩.৬০ শতাংশ, ভিটামিন এ ৯৬৩৭ আই ইউ। এছাড়াও ঢেলা মাছে প্রচুর পরিমাণে জিংক রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। সুতরাং ছোট মাছ খাওয়ার উপকারিতা অপরিসীম।

পুঁটি মাছ

মিঠা পানির মাছ পুঁটি। দামে সস্তা হলেও এ মাছের পুষ্টিগুণ অধিক। পুঁটি মাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন রয়েছে। এই প্রোটিন দেহের বৃদ্ধি, কোষ গঠন ও ক্ষয় পূরণ করতে ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও দেহের নানা অংশে পুষ্টি পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। পুঁটি মাছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ রয়েছে যার কারণে চোখের দৃষ্টি শক্তি উন্নত করে। পুঁটি মাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি থাকায় এটা দাঁত ও হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে।


ছোট মাছে রয়েছে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট যা হার্টকে ভালো রাখে। এছাড়াও পুঁটি মাছে আছে ভিটামিন ই ও ফসফরাস এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। যা ত্বক,নখ ও চুলের উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে। প্রতি ১০০ গ্রাম পুঁটি মাছে রয়েছে ১০৬ ক্যালরি শক্তি, ২.৪ গ্রাম চর্বি, ১৮.১ গ্রাম প্রোটিন, ১১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। পুষ্টিবিদরা মনে করেন সপ্তাহে অন্তত একদিন যদি পুঁটি মাছ খাওয়া যায় তাহলে শরীরের অনেক পুষ্টি ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।

ট্যাংরা মাছ

ট্যাংরা মাছ অন্যান্য মাছের তুলনায় আমাদের শরীরে জন্য অনেক বেশি উপকারী। ট্যাংরা মাছে প্রচুর পরিমাণ ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আছে যা হৃদরোগে ঝুঁকি কমাতে এবং ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রের জন্য এবং ছোট বাচ্চাদের বুদ্ধি বিকাশে ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মুরগির মাংস বা খাসির মাংসে যে পরিমাণ কোলেস্টেরল থাকে তার চেয়ে বেশি কোলেস্টেরল থাকে ট্যাংরা মাছে।


তাই আমাদের হার্টকে সুস্থ রাখতে টেংরা মাছ বেশি পরিমাণ খেতে হবে। যারা রক্তশূন্যতায় ভুগছেন তারা টেংরা মাছ খেতে পারেন। এছাড়াও শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি সহজে পূরণ হবে টেংরা মাছ খেলে।প্রতি ১০০ গ্রাম টেংরা মাছে আছে ১৪৪ ক্যালোরি শক্তি। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম ২৭০ মিলিগ্রাম, প্রোটিন ১৯.২ গ্রাম, চর্বি ৬.৫ গ্রাম, আয়রন ২ মিলিগ্রাম। সুতরাং ছোট মাছ খাওয়ার উপকারিতা অপরিসীম।

ফলি মাছ

ফলি মাছের উপকারিতা আমরা অনেকে হয়তো জানি না। ফলি মাছ কাটা যুক্ত হলেও এর চাহিদা রয়েছে প্রচুর। ফলি মাছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড রয়েছে যা হার্টের জন্য খুব উপকারী। এছাড়াও ক্যালসিয়াম ভরপুর বলে দাঁত ও হাড় মজবুত করে। ভিটামিন এ তে ভরপুর এই মাছ চোখের জন্য অনেক ভালো।প্রতি ১০০ গ্রাম ফলি মাছে প্রোটিন রয়েছে ২০.৩ গ্রাম, আইরন ১.৭ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১০৩ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৪৫০ মিলিগ্রাম। সুতরাং ছোট মাছ খাওয়ার উপকারিতা অপরিসীম।

ছোট মাছ খাওয়ার সতর্কতা

ছোট মাছের পুষ্টিগুণ অধিক এবং ছোট মাছ খাওয়ার উপকারিতা অনেক। কিন্তু ছোট মাছ খাওয়ার আবার কিছু সতর্কতা রয়েছে। পুষ্টিবিদরা বলেন ছোট মাছের প্রোটিন ও জলীয় অংশ বেশি বলে খুব দ্রুত জীবাণুতে আক্রান্ত হয়। তাই এসব মাছ খুব দ্রুত রান্না করে ফেলা উত্তম।কম তাপে রান্না করলে ছোট মাছের পুষ্টিগুণ ঠিক থাকে।

এছাড়াও ধুয়ে অনেকক্ষণ বাইরে রেখে দিলে অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে এর পুষ্টিগুণ কিছুটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। খুব ছোট বাচ্চাদের কে এই মাছ না খাওয়ানোই ভালো। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণ কাটা থাকে। ছোট মাছে ফসফরাসের পরিমাণ বেশি থাকে। এ কারণে চিকিৎসকরা কিডনি রোগীদের ছোট মাছ কম খাওয়ার নির্দেশ দেন।ছোট মাছে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেশি। এজন্য গেঁটে বাতের রোগীদের এ মাছ কম খাওয়া ভালো।

শেষ কথা

পরিশেষে একটি কথা বলতে চাই পরিবারের সবাইকে ছোট মাছ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। এতে আপনার পরিবার অনেক রোগ বালাই থেকে রক্ষা পাবে।আজকের আর্টিকেলে ছোট মাছের পুষ্টিগুণ-ছোট মাছ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url