চিয়া সিড এর পুষ্টিগুণ-চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
প্রিয় পাঠক আপনারা কি জানেন চিয়া সিড বা চিয়া বীজ কি । এই চিয়া সিড এর পুষ্টিগুণ-চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কতোটা জানেন। আর যদি না জেনে থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেল টি আপনার জন্য। কারন এই আর্টিকেলে চিয়া সিড এর পুষ্টিগুণ-চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরন দেওয়া হলােঃ
ভূমিকা
বর্তমান সময়ে চিয়া সিড বা চিয়া বীজ অত্যান্ত জনপ্রিয় একটি খাবার যা সুপার ফুড হিসেবে পরিচিত। চিয়া সিড বা চিয়া বীজ মধ্য আমেরিকা ও মেক্সিকোর মরুভূমি অঞ্চলের সালভিয়া হিসপানিকা উদ্ভিদের বীজ যা বর্তমান সময়ে চিয়া বীজ নামে পরিচিত। চিয়া সিড আকারে খুব ছোট হয়। চিয়া সিড সাদা, কালো ,বাদামি বর্ণ হয় এবং অনেকটা তিলের মতো দেখতে হয়। এই চিয়া সিড এর পুষ্টিগুণ শুনলে আপনিও অবাক হয়ে যাবেন।
প্রাচীন অ্যাজটেক এবং মায়া সভ্যতার সময়ে চিয়া সিড খাবার প্রচলন ছিল বলে প্রমান পাওয়া যায়। চিয়া সিডকে তারা সোনার থেকেও মূল্যবান মনে করত।তারা ধারনা করত এটা তাদের শক্তি ও সাহস যোগাবে। কারন তারা চিয়া সিড এর পুষ্টিগুণ অধিক সমৃদ্ধ মনে করত। এছাড়া তারা রুপ চর্চার কাজেও এটা ব্যবহার করত।
চিয়া সিড এর পুষ্টিগুণ
চিয়া সিড এর পুষ্টিগুণ উপাদান রয়েছে প্রচুর পরিমান। এটা শরীরের জন্য খুব উপকারী। এ কারনে পুষ্টিবিদরা চিয়া সিডকে সুপার ফুড নামে অভিহিত করেন। চিয়া সিডের কিছু পুষ্টিগুণ উপাদান তুলে ধরা হলোঃ
- প্রোটিন,
- ফ্যাট,
- ফাইবার,
- জিংক,
- শর্করা,
- আয়রন,
- ক্যালসিয়াম,
- ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড,
- কোয়ের সেটিন,
- কেম্পফেরল,
- ম্যাগনেশিয়াম,
- পটাশিয়াম,
- ফসফরাস,
- অ্যান্টি অক্সিডেন,
- ভিটামিন A,
- ভিটামিন C,
- ভিটামিন বি 1,
- ভিটামিন বি 3, এছাড়াও চিয়া সিড এর পুষ্টিগুণ রয়েছে অসংখ্য পরিমান।
চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে অসংখ্য। চিয়া সিড এর পুষ্টিগুণ শরীরে নানা উপকার সাধন করে থাকে। চিয়া সিড খাওয়ার উপকরিতা নিম্নে বর্নিতো হলোঃ
- চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর পরিমান ক্যালসিয়াম যা প্রায় দুধের চেয়ে ৫ গুন বেশি, আর এ ক্যালসিয়াম হাড় ও দাঁত মজবুত করে এবং হাঁটু ও জয়েন্টের ব্যাথা কমায়।
- চিয়া সিড দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে,কারন এতে রয়েছে প্রচুর পরিমান প্রোটিন ও ফাইবার যা মুরগির ডিমের তুলনায় প্রায় ৩ গুনের বেশি পরিমান প্রোটিন রয়েছে। আর প্রোটিন এবং ফাইবার গ্রহন করলে পেট অনেক ক্ষন ভরা থাকে ফলে খাদ্য গ্রহনের প্রবনতা কমিয়ে আনে যার দরুন দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর পরিমান ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড যা হৃদরোগের ঝুকি কমাতে এবং ক্ষতিকর কোলেস্টরল কমাতে সাহায্য করে। পুষ্টিবিদ দের মতে চিয়া সিডে স্যামন মাছের চেয়ে ৮ গুণ বেশি ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে।
- চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর পরিমান অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে । এটি শরীরের মেটাবলিজম সিস্টেমকে উন্নত করে। এছাড়া ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ও চুল ,নখ সুন্দর রাখতে এবং ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি ভিটামিন সি ও এর অভাব জনিত ক্ষতি থেকে আমাদের বাঁচায়।
- চিয়া সিড রক্তের চিনির পরিমান স্বাভাবিক রাখে বলে ডায়বেটিসের ঝুকি কমায়।
- চিয়া সিডে প্রচুর পরিমান ভিটামিন‘ সি‘রয়েছে যা প্রায় কমলার চেয়ে ৭ গুন বেশি। ভিটামিন সি, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং জ্বর,সর্দি, কাশি,জনিত সমস্যা দূর করে।
- চিয়া সিড হজমে সহায়তা করে এবং অ্যাসিডিটির সমস্যা দূর করে।
- চিয়া সিড শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বা টক্সিন বের করতে সাহায্য করে।
- চিকিৎসকরা মনে করেন চিয়া সিড ভালো ঘুম হতেও সাহায্য করে।
- চিয়া সিড প্রদাহ জনিত সমস্যা দূর করে।,
- চিয়া বীজ ক্যানসার রোধ করে।
- চিয়া সিডে প্রচুর পরিমান ফাইবার থাকায় এটি কোষ্টকাটিন্য দূরকরে।
- চিয়া সিডে পালংশাকের চেয়ে ৩গুণ বেশি আয়রন থাকে বলে এটি শরীরে রক্ত স্বল্পতার ঘাটতি পুরন করে।
- চিয়া সিডে কলার চেয়ে দিগুণ পরিমান পটাশিয়াম থাকে বলে এটা শরীরের স্বাভাবিক রক্ত চাপ বজায় রাখতে,স্নায়ু ও পেশির কর্মক্ষমতা সঠিক রাখতে এবং কোষের পুষ্টি পরিবহন করতে সহায়তা করে।
চিয়া সিড খাওয়ার উপকারতা রয়েছে অসংখ্য যা বলে শেষ করা যাবে না। শরীরের বিভিন্ন উপকারিতা পেতে হলে নিয়মিত এবং পরিমিত পরিমান চিয়া সিড খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা উভয় রয়েছে। তাই পরিমিত পরিমান চিয়া সিড খাওয়া উত্তম। চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম অতি সহজ। কারন এটা স্বাদ ও গন্ধ বিহীন খাবার। এটা বিভিন্ন খাদ্যের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায় যেমনঃ জুস ,পুটিং, ওটস, টক দই, রান্না করা সবজি বা সালাদের ওপড়ে ছড়িয়ে খাওয়া যায়।
তবে চিয়া সিড খাওয়ার সঠিক নিয়ম হলো এটা কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ মিনিট কুসুম গরম পানির মধ্যে ভিজিয়ে রাখতে হবে এবং সকালে খালি পেটে অথবা রাতে ঘুমানোর আগে খেতে হবে তাহলে ভাল ফল পাওয়া যাবে।তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে প্রতিদিন ১থেকে ২ চা চামচ এর বেশি চিয়া সিড খাওয়া উচিত না।
চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা
প্রতিটি খাবারের কিছু উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অপকারিতা থাকে। তেমনই চিয়া সিডের কিছু অপকারিতা রয়েছে । চিয়া সিড এর অপকারিতা সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়া হলঃ
- অতিরিক্ত চিয়া বীজ খেলে শরীরের ওজন অস্বাভাবিক ভাবে কমে যেতে পারে,
- চিয়া সিড রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রন করে রক্ত চাপ কমায়। তাই অতিরিক্ত চিয়া সিড সেবনে রক্তচাপ বেশি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে,
- চিয়া সিড বেশি পরিমান খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে কারন এর মধ্যে প্রচুর পরিমান ফাইবার থাকে যার কারনে দেখা যায় ডায়রিয়া ,বমি, মাথা ঘুরানো,তল পেটে ব্যাথা প্রভৃতি সমস্যা দেখা দেয়।তাই সমস্যা দেখা দেওয়ার সাথে সাথে এটি খাওয়া বন্ধ করা উচিত,
- অধিক পরিমান চিয়া সিড খেলে প্রোটেস্ট ক্যানসার এবং স্তন ক্যানসার কে বাড়িয়ে তুলতে পারে। সুতরাং এটি সীমিত পরিমান ব্যবহার করা উচিত। এতে আমরা বুঝতে পারলাম চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা উভয় রয়েছে।
শেষকথা
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা জানতে পেরেছেন চিয়া সিড কি, চিয়া সিড এর পুষ্টিগুণ কতটা এবং চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।চিয়া সিড এর পুষ্টিগুণ অধিক হওয়ার কারনে পুষ্টিবিদরা একে সুপার ফুড নামে অভিহিত করেন। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যদি পরিমিত পরিমান চিয়া সিড সেবন করা যায়। তাহলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং আমরা বিভিন্ন রোগ থেকে শরীরকে রক্ষা করতে পারবো। কেননা সুস্থতায় সকল সুখের মূল।