আদার যত ঔষধি গুণ রয়েছে তুলে ধরা হলো
আদা খুব জনপ্রিয় একটি মসলা। আদার যত ঔষধি গুণ রয়েছে সেটা শুনলে যে কোন মানুষ বিস্মিত হয়ে যাবে। আদা যদিও খুব সুস্বাদু নয়। তবে আদার ওষুধি গুণ রয়েছে অধিক পরিমাণ। আজকের আর্টিকেলে আদার যত ঔষধি গুণ রয়েছে তুলে ধরা হলো।
আমাদের দেশে মসলা হিসেবে এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। আজকের আর্টিকেলে আদার যত ঔষধি গুণ রয়েছে তুলে ধরা হল। তাই আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার অনুরোধ রইলো।
ভূমিকা
আদা, সুগন্ধযুক্ত একটি গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ।আমাদের দেশে মসলা হিসেবে এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। আদায় রয়েছে অনেক উপকারিতা।এছাড়াও আদার কিছু ঔষধি গুণ রয়েছে। আধা মূলত গাছের একটি শিকড়।মসলা হিসেবে আদা খাবারকে সুস্বাদু করে।মসলা ছাড়াও আদা ঔষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। বর্তমান বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র এর চাষ হয়ে থাকে।
আরো পড়ুন: ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির খাবার
তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম,দিনাজপুর,টাঙ্গাইল,নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলায় ব্যাপকভাবে আদার চাষ হয়। বর্তমান পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে আদা প্রায় সব ধরনের রোগ নিরাময় করতে পারে। তাই সুস্থ থাকতে চাইলে প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণ আদা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
আদার পুষ্টি উপাদান
আদা একটি উৎকৃষ্ট ভেষজ গুণসম্পন্ন একটি মসলা জাতীয় ফসল। আদাতে উল্লেখযোগ্য পুষ্টিগুণ বিদ্যমান রয়েছে। আদায় প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে যেমন: আইরন,পটাশিয়াম,ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম,জিংক,ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন বি ৬,ভিটামিন ই, ভিটামিন সি,অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট ও আন্টি ইনফ্লামেটরি এজেন্ট বিদ্যমান।
আদার যত ঔষধি গুণ রয়েছে তুলে ধরা হলো
আদা অসংখ্য পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। সব বয়সের মানুষ আদা খেতে পারেন। আদার যত ঔষধি গুণ রয়েছে যা বলে শেষ করা যাবে না।
হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
খাবার হজম না হলে অথবা পেট ফাঁপা,অম্বল,গ্যাসের মত সমস্যা প্রতিরোধ করতে আদা দারুন উপকারি।যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত সকালে খালি পেটে আদা পানি খেতে পারেন। এতে অনেক আরাম পাবেন।মেয়েদের পিরিয়ডের ব্যথা কমায়
আদার যত ঔষধি গুণ রয়েছে তার মধ্যে আর একটি অন্যতম ঔষধি গুণ হলো মেয়েদের পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।মেয়েদের পিরিয়ডের ব্যথা অতি কষ্টের। পিরিয়ডের সময় আদা দিয়ে চা খেলে ব্যথা নিমিষে গায়েব হয়ে যায়।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
আদায় জিঞ্জেরল থাকায় তা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এছাড়াও মেয়েদের ওভারিতে ক্যান্সার হলে আদা খেলে ক্যান্সারের সেলগুলো ধ্বংস হয়ে যায়।
ওজন কমায়
আদার যত ঔষধি গুণ রয়েছে তার মধ্যে আরেকটি অন্যতম গুণ হলো এটা ওজন কমাতে সাহায্য করে। আদায় আছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরের চর্বি জমতে দেয় না।
সর্দি কাশি থেকে মুক্তি দেয়
আদার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট,ভিটামিন সি,এন্টি ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট ও এন্টি ইনফ্লামেটরি এজেন্ট বিদ্যমান থাকে যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটা বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থেকে আমাদের বাঁচায়।
আদা খাওয়ার ফলে সহজেই সর্দি,কাশি,গলা ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও সর্দি হলে আদা কুচি কুচি করে রুমালে নিয়ে নাকে ঝাঁঝ নিন। বন্ধ নাক খুলে যাবে।
আদা বমি ভাব নিয়ন্ত্রণ করে
আদা মাতৃত্বকালীন বমি বমি ভাব কমায়। এছাড়াও অনেকেরই সকালে ঘুম থেকে উঠে বমি বমি ভাব লাগে। যেটাকে আমরা মর্নিং সিকনেস বলে থাকি। আর এই বমি বমি ভাব দূর করতে আদা খাওয়ার উপকারিতা অপরিসীম। এছাড়াও যাদের ভ্রমণের সময় বমি পায় তারা মুখে এক টুকরা আদা দিয়ে দিন দেখবেন আর বমি হবে না।
হৃদ রোগের ঝুঁকি কমায়
আদা শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল দূর করে এবং ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে। ফলের হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। আদা খেলে হার্টের রক্ত জমাট বাঁধে না। তাই হার্ট এটাক বা স্টক এর ঝুঁকি কমে এবং সারা শরীরে রক্ত চলাচল সচল থাকে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে
আদা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে দারুন কার্যকরী। আদতে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি,অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিন ই, ভিটামিন বি৬ রয়েছে।যা ত্বকের মেলানিন কমিয়ে ত্বক উজ্জ্বল, মসৃণ,সজীব ও প্রাণবন্ত করে।
এছাড়াও আদা ত্বকের মৃত কোষ দূর করে এবং ত্বকের কালচে দাগ,ছোপ, বলি রেখা পড়তে দেয় না। আদা শরীরে কোলাজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
নিয়মিত আদা খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পায়। আদায় রয়েছে প্রচুর পরিমান জিংক,আয়রন,ভিটামিন সি,পটাশিয়াম, এন্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়ালএজেন্ট ও এন্টি ইনফ্লামেটরি,প্রভৃতি রয়েছে।
আর এ উপাদানগুলো শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেমকে অনেকটা শক্তিশালী করে এবং ঘনঘন সর্দি,কাশি,জ্বর দূর করে। এছাড়াও আদায় উপস্থিত এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান শরীরের রোগ জীবাণু ধ্বংস করতে সহায়তা করে।
মস্তিষ্কের উন্নতি ঘটায়
আদায় রয়েছে মস্তিষ্কের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। আদা মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্স মিটার হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও আদা মস্তিষ্কের স্ট্রেস এবং প্রদাহ নিরাময় করতে পারে।সুতরাং মস্তিষ্কের উন্নতির জন্য আদা খাওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম।
কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করে
আদা হজমের সমস্যা সমাধানসহ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আপনি যদি দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্যতায় ভোগে থাকেন তাহলে নিয়মিত আদা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। আদার বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান লিভারকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস কমায়
আদার যত ঔষধি গুণ রয়েছে তার মধ্যে আরেকটি অন্যতম গুণ হলো এটা টাইপ২ ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি কমায়। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে টাইপ২ ডায়াবেটিস রোগীকে যদি টানা ১২ সপ্তাহ ধরে ১৬০০ মিলিগ্রাম আদা খাওয়ানো হয়।
দেখা যায় তার শরীরে ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়ে এবং রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমে। এছাড়াও রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের অন্তত প্রতিদিন দুই গ্রাম করে আদা খাওয়া উচিত। তাহলে দেখা যাবে যে ফাস্টিংয়ে দ্রুত ব্লাড সুগার কমে যাবে।
চুলের যত্নে কার্যকরী
আদা চুলের জন্য অনেক উপকারী। আদায় থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান চুল পড়া,চুল ফাটা বা ভাঙ্গা,খুশীদূর,অকালপক্ক হওয়া ইত্যাদি সমস্যা প্রাকৃতিকভাবে সমাধান করতে দারুন কার্যকরী। এছাড়াও আদার প্যাক ব্যবহারে চুলের রুক্ষতা দূর করতে এবং চুলের আদ্রতা ফিরে আনতে অত্যন্ত কার্যকরী।
মুখ পরিষ্কার করে
আদায় রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা মুখের ভেতরের জীবাণুকে মেরে ফেলে ও দাঁতের মাড়িকে শক্ত করে এবং দাঁতের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
ব্যথানাশকের কাজ করে
আদা প্রাকৃতিক পেইন কিলার যা ব্যথানাশকের কাজ করে। এছাড়াও বাতজনিত গাঁটে ব্যথা ও মাথাব্যথায় আদা বেশ কার্যকর। অপারেশনের পর কাঁচা আদা খান। দ্রুত সেরে উঠবেন। নিয়মিত আদা খেলে শরীরের হাড়ের জয়েন্টের ব্যথা দূর হয়।
রক্তস্বল্পতা দূর করে
আদায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। প্রতিদিন যদি আদার রস ১৫ গ্রাম করে খাওয়া যায় তাহলে রক্তস্বল্পতা এক মাসের মধ্যেই দূর করা সম্ভব। তবে একটি কথা মনে রাখা উচিত সারাদিনে আদার রস ১৫ গ্রামের বেশি খাওয়া উচিত নয়। এছাড়াও বয়স ভেঁদে আদার রস খাওয়ার পরিমাণ ভিন্নতা রয়েছে।
হাড় ও দাঁত মজবুত করে
আদায় রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম যা আমাদের হাড় ও দাঁত মজবুত করতে সাহায্য করে। এছাড়াও আদায় হয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ যা চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।তবে রান্না করা আদার থেকে কাঁচা আদার পুষ্টিগুণ অনেক বেশি।
শ্বেতী রোগ নিরাময় করে
শ্বেতী রোগ হলে আদা বেটে দিনে তিন থেকে চার বার লাগান দেখবেন এ রোগ ভালো হয়ে গেছে। এভাবে চার থেকে বারো সপ্তাহ পর্যন্ত নিয়মিত ব্যবহারেই অনেক উপকার পাবেন।
আদার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
আদার যত ঔষধি গুণ রয়েছে আবার অধিক পরিমাণ সেবন করলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা দেয়।
অধিক পরিমাণ আদা খেলে ডায়রিয়া হতে পারে।
- নারীদের গর্ভাবস্থায় আদা খাওয়া নিরাপদ নয়।
- আদাতে আছে অ্যান্টি প্লাটিলেট উপাদান যা অধিক পরিমাণ রক্তপাত ঘটাতে পারে।
- বিশেষজ্ঞদের মতে যারা উচ্চ রক্তচাপের জন্য ঔষধ খান তাদের আদা খাওয়া বাদ দেওয়া উচিত। কারণ আদা,হৃদ যন্ত্রের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
- খালি পেটে অধিক পরিমাণ আদা খেলে দেখা যায় গ্যাসে সমস্যা এছাড়াও হজমের সমস্যার পাশাপাশি পেটে অস্বস্তি ভাব সৃষ্টি করে।
শেষ কথা
পরিশেষে আমরা একটি কথা বলতে পারি পরিমিত পরিমাণ আদা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পাবে। আজকের আর্টিকেলে আমরা আদার যত ঔষধি গুণ রয়েছে সেটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি পড়লে আপনার অনেক উপকৃত হবে।