ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার-ভিটামিন ডি এর অভাব জনিত লক্ষণ

 প্রিয় পাঠক আপনারা কি জানেন মানব শরীরের জন্য ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার কতটা জরুরি। আর ভিটামিন ডি শরীরে ঘাটতি হলে মানব শরীরের জন্য কতটা ক্ষতিকর হতে পারে। তাই আজকের আর্টিকেলে ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার-ভিটামিন ডি এর অভাব জনিত লক্ষণ, ভিটামিন ডি এর কার্যকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করব।

ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার-ভিটামিন ডি এর অভাব জনিত লক্ষণ

আজকের আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার-ভিটামিন ডি এর অভাব জনিত লক্ষণ এবং ভিটামিন ডি এর কার্যকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন।তাই সম্পন্ন আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইলো।

ভূমিকা

ভিটামিন ডি মানব শরীরের জন্য খুব প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। ভিটামিন ডি হলো একপ্রকার স্টেরয়েড হরমোন যা শরীরের প্রোটিন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মানবদেহে কি পরিমান ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস দরকার সেটা নিয়ন্ত্রণ করে ভিটামিন ডি।।মাংস পেশি,হাড়,দাঁত, চুল, ত্বক,হার্ট, সুস্থতার জন্য ভিটামিন ডি খুব জরুরী।এছাড়াও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে ভিটামিন ডি প্রয়োজন বলে শেষ করা যাবে না।


সূর্য রশ্মি ভিটামিন ডি এর প্রধান উৎস হিসেবে ধরা হয়। সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৩ পর্যন্ত সূর্যের আলো ভিটামিন ডি তৈরীর উপযুক্ত সময়। আবার চিকিৎসকরা বলেন সূর্যের অতি প্রখর বেগুনি রশ্মি একটানা শরীরের জন্য ক্ষতিকরও বটে।

চিকিৎসকদের মতে প্রতিদিন যদি ২০ থেকে ৩০ মিনিট সূর্যে আলোতে থাকা যায় তাহলে শরীরের ৮০ ভাগ ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণ হয়। তবে ১৮% সূর্যের আলো শরীরে লাগাতে হবে।আর বাকি ২০ ভাগ ভিটামিন পাওয়া যায় খাদ্য থেকে।

ভিটামিন ডি এর কার্যকারিতা

ভিটামিন ডি আমাদের শরীরের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন রয়েছে এর মধ্যে ভিটামিন ডি কে প্রধান ভিটামিন হিসেবে ধরা হয়। কারণ ভিটামিন ডি শরীরের সার্বিক বিষয়কে নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতি সপ্তাহে অন্তত দুইদিন ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার গ্রহণ করা উচিত।ভিটামিন ডি এর কার্যকারিতা তুলে ধরা হলো:
  • মানসিক বিষণ্নতা দূর করে।
  • বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • রক্তে শর্করার পরিমাণ হ্রাস করে।
  • হাড়,দাঁত ও মাংসপেশি মজবুত করে।
  • হৃদরোগে ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • রক্তে ক্যালসিয়াম,ফসফরাস নিয়ন্ত্রণ করে।
  • শরীরের জন্য খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
  • চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে এবং চোখ সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।।
  • বিভিন্ন ধরনের হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • শরীর ও মন সতেজ ও প্রফুল্ল রাখতে সাহায্য করে।
সুতরাং প্রতিদিন সূর্য আলো শরীরে লাগানোর পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

আরো পড়ুন: অতিরিক্ত সাদা স্রাবের কারণ-অতিরিক্ত সাদা স্রাব থেকে মুক্তির উপায়

ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার

কিছু খাবার আছে যেগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি রয়েছে।আর এই সব খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে আমরা সহজেই ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণ করতে পারি। নিম্নে কিছু ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার তুলে ধরা হলো।

গরুর কলিজা

গরুর কলিজা ভিটামিন ডি এর প্রধান উৎস হিসেবে ধরা হয়। ভিটামিন ডি এর ঘাটতি হলে নিয়মিত গরুর কলিজা সেবন করুন। তাহলে দেখবেন অন্যান্য ভিটামিন ডি যুক্ত খাবারের তুলনায় দ্রুত ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণ হবে।

খাসির মাংস

ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার গুলোর মধ্যে খাসির মাংস অন্যতম। অন্যান্য মাংসের তুলনায় খাসির মাংসে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। খাসির মাংসে ভিটামিন ডি এর পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন ও বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান রয়েছে।

ডিমের কুসুম

ডিম একটি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। ছোট বড় সকলেরই ডিম অতি পছন্দনীয় একটি খাদ্য।আর এই ডিমের কুসুমে রয়েছে প্রচুর পরিমান ভিটামিন ডি যা আমাদের হাড় ও দাঁত মজবুত করতে সাহায্য করে। পুষ্টিবিদদের মতে প্রতিটি ডিমের কুসুমে প্রায় ৪০ আইইউ ভিটামিন ডি থাকে।

মসুরের ডাল

মসুরের ডালে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি রয়েছে। মসুর ডালে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান রয়েছে। গরুর মাংসের তুলনায় মসুরের ডালের ভিটামিন অনেক বেশি।এজন্য বর্তমানে মসুরের ডাল গরীবের মাংস হিসেবে পরিচিত।

বাদাম

বাদাম ছোট বড় আমাদের সকলেরই পছন্দের একটি খাবার।বাদাম ভিটামিন ডি এর ভালো একটি উৎস। শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি দেখা দিলে বাদাম খেয়ে সহজে এ ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।

দুধ

ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার গুলোর মধ্যে দুধ অন্যতম। পুষ্টিতে ভরপুর দুধ সবার জন্য অতি দরকারী একটি খাবার। দুধে প্রায় সব ধরনের পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান রয়েছে।এ কারণে দুধকে আদর্শ খাদ্য বলা হয়। নিয়মিত দুধ পান করলে শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণ সহ নানা রকম রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

সামুদ্রিক মাছ

সামুদ্রিক মাছ গুলোতে উচ্চমাত্রায় ভিটামিন ডি থাকে। অধিক ভিটামিন ডি যুক্ত মাছ গুলো হল: সাডিন, টুনা,ম্যাকরেল,স্যালমন, ইলিশ, চিংড়ি প্রভৃতি। তিন আউন্স স্যালমন মাছে প্রায় ৩৭০ আইইউ ভিটামিন ডি পাওয়া যায়, যা দৈনিক চাহিদার প্রায় ৮৪ শতাংশ পূরণ করে। ঠিক সমপরিমাণ টুনা মাছেও আছে ৫৯ আইইউ ভিটামিন ডি। এছাড়াও মিঠা পানির ছোট মাছ গুলো তেও ভিটামিন ডি রয়েছে।

কড লিভার অয়েল

কড লিভার অয়েল বা মাছের তেলে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ডি,ফ্যাটি এসিড,ওমেগা থ্রি প্রভৃতি রয়েছে। আর এই কড লিভার অয়েল হার্ট ভালো রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

মাশরুম

পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের মাশরুম রয়েছে। দেখা যায় যে সব ধরনের মাশরুম গুলোতেই ভিটামিন ডি উপস্থিত রয়েছে। তবে যেসব মাশরুম গুলোতে ৮ ঘন্টা সূর্যের আলো পায় সেগুলোতে প্রায় ৪৬ হাজার আইটিইউ ভিটামিন ডি তৈরি হয়। এছাড়াও মাশরুমে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান রয়েছে, যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

দুগ্ধ জাতীয় খাবার

ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার গুলোর মধ্যে দুগ্ধ জাতীয় খাবার অন্যতম।দুগ্ধ জাতীয় খাবার যেমন: চিজ,পনির,দই,মাখন,ঘি প্রভৃতি। এইসব খাবার গ্রহণের মাধ্যমে আমরা সহজেই ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণ করতে পারি।

কমলার জুস

অন্যান্য ফলের তুলনায় কমলা জুসে অধিক পরিমাণ ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। তাই কমলার জুস খেলে ভিটামিন ডি পাওয়ার সাথে সাথে ক্যালসিয়াম,ভিটামিন সি,অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রভৃতি পুষ্টি উপাদান সহজেই গ্রহণ করতে পারি।

শাকসবজি

কিছু শাকসবজি আছে যেগুলোতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ডি রয়েছে যেমন: পালংশাক,কলমি শাক, গাজর,মিষ্টি কুমড়া,পেঁপে,মটরশুঁটি ইত্যাদি।

ভিটামিন ডি যুক্ত ফল

ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ ফলের সংখ্যা খুব কম। তবে কিছু ফল আছে যেগুলোতে সামান্য পরিমাণ ভিটামিন ডি রয়েছে যেমন:আম,জাম,কাঁঠাল,কমলা,লেবু,আমলা প্রভৃতি। এই ফল গুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও সামান্য পরিমাণ ভিটামিন ডি রয়েছে।

শস্য জাতীয় খাবার

শস্য জাতীয় খাবার যেমন: গম,বার্লি,ওটস,আখরোট প্রভৃতি। এইসব খাবারও প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ডি রয়েছে। সুতরাং এসব খাবার গ্রহণের মাধ্যমেও আমরা শরীরের ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণ করতে পারি

ভিটামিন ডি এর অভাব জনিত লক্ষণ

ভিটামিন ডি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ জরুরী। সুতরাং ভিটামিন ডি এর ঘাটতি দেখা দেওয়া মানে একাধিক রোগের সম্ভাবনা। ভিটামিন ডি এর অভাব হলে যেসব রোগের লক্ষণ প্রকাশিত পাবে সেগুলো নিম্নে বর্ণিত হল:
  • ভিটামিন ডি এর অভাবে শরীরে রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কমে যায়।এ কারণে দেখা দেয় ঘন ঘন ঠান্ডা, সর্দি,কাশি,জ্বর। এছাড়াও শরীরে সমস্ত ধরনের সংক্রমনের ঝুঁকিও অনেক গুণ বেড়ে যায়।
  • আপনার ওজন যদি হঠাৎ করেই বাড়তে থাকে তাহলে শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাবের লক্ষণ হতে পারে। শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি হলে পেটের চর্বি এবং ওজন বেড়ে যেতে পারে।
  • ভিটামিন ডি এর অভাব জনিত লক্ষণ গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি লক্ষণ হল শরীরে যদি কোথাও কেটে যায় বা ঘা হয় তাহলে শুকাতে অনেক দেরি হয়।
  • ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার গ্রহণ না করলে শিশুদের রিকেট রোগ এবং বড়দের অস্টিওমিলেশিয়া ও বয়স্কদের হাড় জনিত ক্ষয় রোগের বড় কারণ হল ভিটামিন ডি এর অভাব।
  • শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব হলে পায়ের হাড় ধনুকের মতো বেঁকে যেতে পারে।
  • ভিটামিন ডি এর অভাব হলে রক্তের ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমে যায়। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার গ্রহণ করুন।
  • শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি হলে দেখা যায় অধিক পরিমাণ চুল পড়ে যায় এবং চুলের আদ্রতা হারিয়ে চুল রুক্ষ হয়ে যায়।
  • ভিটামিন ডি এর অভাব জনিত লক্ষণ গুলোর মধ্যে অন্যতম অকারনে ক্লান্তি ভাব, ঝিমুনি এবং শুয়ে বসে থাকার ইচ্ছা হতে পারে।
  • শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি হলে অধিক পরিমান মানসিক চাপ, বিষন্নতা,উদ্বেগ,ঘন ঘন মেজাজের পরিবর্তন ঘটতে পারে।
  • শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি হলে দীর্ঘস্থায়ী মেরুদন্ডে ব্যথা, গাঁটে ব্যথা, হাড় ও জয়েন্টে ব্যথা, বৃদ্ধদের বাতের ব্যথা দেখা দিতে পারে।
  • ভিটামিন ডি এর অভাব জনিত লক্ষণ গুলোর মধ্যে ডায়াবেটিস,থাইরয়েড,হৃদ রোগের ঝুঁকি,ক্যান্সার, প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস সহ বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দিতে পারে। এছাড়াও ভিটামিন ডি এর অভাবে বিভিন্ন ধরনের হরমোন জনিত সমস্যা দেখা যাচ্ছে।
  • ভিটামিন ডি এর অভাব হলে শরীরের হাড় গুলো দুর্বল হয়ে পড়ে এবং অসময়ে দাঁত পড়ে যায় এবং শরীর অধিক দুর্বল হয়ে যায়।
  • অধিক স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে এবং ভালোভাবে বিশ্রাম নিয়েও যদি অলস এবং ক্লান্তি বোধ হয় তাহলে বুঝতে হবে আপনার ভিটামিন ডি এর অভাব হয়েছে।
  • ঠিকমতো খাওয়া দাওয়ার পরও যদি ওজন কমে যায় তাহলে বুঝতে হবে ভিটামিন ডি এর অভাব হয়েছে।
  • ভিটামিন ডি এর অভাব জনিত লক্ষণ হিসেবে দেখা যায় অধিক উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যায়।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার যদি গ্রহণ না করা যায়।তাহলে শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি হলে ত্বকের ফুসকুড়ি,ব্রণের সমস্যা,দাগ,ছোপ ও ত্বকের বয়সের ছাপ বেড়ে যায়।
  • ভিটামিন ডি এর অভাবে অতিরিক্ত মাথা ঘেমে যায় এবং মাথা ঘোরা,বমি বমি ভাব,অনিদ্রা সমস্যা দেখা দেয়।
সুতরাং পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার গ্রহণ এবং প্রতিদিন সূর্যের আলো গায়ে লাগানোর চেষ্টা করুন।

শেষ কথা

পরিশেষে একটি কথা বলতে পারি যে যদি সুস্থ ও সুন্দর জীবন যাপন করতে চান তাহলে স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করুন এবং খাদ্যাভাসের উপর গুরুত্ব দিন।ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার-ভিটামিন ডি এর অভাব জনিত লক্ষণ এবং ভিটামিন ডি এর কার্যকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন।
Next Post
No Comment
Add Comment
comment url